ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য আজ আলোচনা করব বাংলা বিষয়ের ৭ম অধ্যায়ের ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদ থেকে ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি।

ছবি দেখে প্রশ্ন করি

নিচের ছবিটি হয়তো তুমি আগেও দেখেছ, কিংবা কেউ কেউ হয়তো প্রথম দেখলে। এটি দেখে তোমাদের মনে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। এই ছবি সম্পর্কে ভালো করে জানার জন্য কী কী প্রশ্ন করা যায়, সেগুলো নিচে লেখো।

ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

একটি নমুনা প্রশ্ন শুরুতে দেওয়া হলো।

১. ছবিটি কোন সময়ের?
২. ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কোন ধরনের লোক?
৩. ছবিটিতে কারা বা কোন বাহিনী স্বাক্ষর করছে?
৪. ছবিতে যে ব্যক্তিটি স্বাক্ষর করছে সে ব্যক্তিটি কে?
৫. স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিটির ডানপাশে বসে আছে কে?
৬. কী বিষয়ে বা কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাক্ষরিত হচ্ছে?
প্রশ্ন

প্রশ্ন করা শিখি

কোনো বিষয় ভালো করে জানার জন্য নানা রকম প্রশ্ন করতে হয়। প্রশ্নের জবাবের মাধ্যমে বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়। তাই প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ প্রশ্ন করতে শেখা দরকার। প্রশ্ন করার কাজে আমরা বিশেষ কিছু শব্দ ব্যবহার করি। যেমন:

কী?কেন?কীভাবে?কে?কারা?
কার?কোথায়?কখন?কত?কোন?
প্রশ্ন করা শিখি

পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি

নিচের পোস্টারটি ভালো করে দেখো।

ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

এই পোস্টারে যেসব তথ্য আছে, এর বাইরে আর কী কী তথ্য জানা প্রয়োজন বলে তুমি মনে করো, সেগুলো প্রশ্নের আকারে নিচের ছকে লেখো। উদাহরণ হিসেবে একটি প্রশ্ন নিচে দেওয়া হলো:

জিজ্ঞাসা
১. প্রতিযোগিতা কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
২. প্রতিযোগীদের কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে?
৩. প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কী কী প্রয়োজন?
৪. একজন প্রতিযোগী কয়টি বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে?
৫. নির্দিষ্ট বিষয়ের অনুষ্ঠান কখন শুরু হবে?

প্রশ্ন করে জানার চেষ্টা করি

দলে ভাগ হও। নিচে কয়েকটি বিষয় দেওয়া আছে। এর মধ্যে যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে একজন শিক্ষার্থী দলের অন্যদের সামনে দু-তিন মিনিট কথা বলবে। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ অংশ অন্যরা খাতায় টুকে রাখবে। বলা শেষ হলে বিষয়টি ভালো করে বোঝার জন্য দলের অন্যরা তাকে নানা রকম প্রশ্ন করবে। সেসব প্রশ্নের জবাবও তারা খাতায় টুকে রাখবে।

  • নতুন দেখা কোনো জিনিস, প্রাণী বা জায়গা
  • কোনো কিছু রান্নার উপায়
  • কোনো কিছু বানানোর পদ্ধতি
  • কোথাও যাওয়ার রাস্তা
  • এলাকার কোনো বিশেষ ঘটনা
  • যাওয়া-আসার পথে নতুন কোনো পরিবর্তনর্ত
  • দৈনিক পত্রিকার কোনো খবর

প্রশ্নের জবাব থেকে অনুচ্ছেদ লিখি

সহপাঠীদের উপস্থাপিত বিষয় এবং অন্যদের প্রশ্নের জবাবে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখা হলো।

দিঘি বৃত্তান্ত

মহেশপুর একটি গ্রাম এবং বেশ নিরিবিলি। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম বললে এ গ্রামের ক্ষেত্রে খুব বেশি অত্যুক্তি হয় না। এ গ্রামটির একমাত্র দর্শনীয় স্থান মহেশপুর দিঘি। রাজা মহেশ এ দিঘিটি খনন করিয়েছিলেন বলে তার নামেই দিঘিটির নামকরণ করা হয়েছে। এখন রাজা নেই, রাজ্য, প্রজা, পাইক, সামন্ত কিছুই নেই। দিঘিটি আছে। সময়ের পালা বদলে দিঘিটি যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে। এর সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ হয়।

পথ চলতে চলতে পথিকও একটু থমকে দাঁড়ায়। চোখের আশ মিটিয়ে দেখে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। পথিকরা দিঘির পাশের বড়ো বড়ো বট পাকুড় গাছের নিচে বিশ্রাম নেন। তারপর শক্তিসঞ্চয় করে আবার চলতে শুরু করেন। এ দিঘিতে মাছ হয়। প্রতিবছর পৌষ মাসের মেলার আগে মহেশপুর গ্রামের সমস্ত জোয়ান পুরুষরা আসেন এ দিঘিতে মাছ ধরতে। শুধু মহেশপুর গ্রাম নয় আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষও আসে এ স্থানে ঘুরতে। চারদিক খোলামেলা।

দিঘির চারপাশ জুড়ে তাল, তমাল, সুপারি আর পাকুড় গাছ। এ গাছগুলো যেন পাখিদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। আর দিঘির স্বচ্ছ জলে ফোটে ভুবন ভোলানো পদ্ম আর শাপলা। সরকারি সিদ্ধান্ত আসে দিঘির এ স্থানটিতে স্কুল হবে। মহেশপুর গ্রামের ছেলে-মেয়েদের আর কষ্ট করে দূরের স্কুলে পড়তে যেতে হবে না । মহেশপুর গ্রামের কিছু মানুষ সরকারি এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুহূর্তে এ খবর প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে এ সিদ্ধান্ত বদলানো হয় । স্কুলের জন্য অন্যত্র জমি ঠিক করা হয়।

আলোচনা করতে শেখা

ঘটনা নিয়ে চিন্তা করি

আর সব দিনের মতো সেদিনও মিলি, রাতুলরা খেলতে গিয়েছিল। মাঠে এসে দেখতে পেল, কয়েকজন লোক ফিতা নিয়ে মাপজোখ করছে। একজনের হাতে আবার মোটা একটা খাতা। সেখানে কলম দিয়ে কীসব টুকে রাখছে। মিলি অবাক হয়ে বলল, ‘আচ্ছা, লোকগুলো এখানে কী করছে?’

রাতুল বলল, ‘কী করছে, তা তো জানি না!’ অন্যরাও এ-ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগল। শিমু বলল, ‘কাল সন্ধ্যায় বাবা বলছিলেন, এখানে নাকি একটা শিশুপার্ক হবে। নতুন নতুন খেলার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে।’

ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

‘তবে তো দারুণ হয়!’ কয়েকজন একসঙ্গে বলে ওঠে। মিলি খানিক ভেবে গালে হাত দিয়ে বলে, ‘তার মানে, বদলে যাচ্ছে আমাদের খেলার মাঠটা। তাই না?’ রাতুল বলে, ‘হ্যাঁ, বদলেই তো যাচ্ছে! তখন হয়তো টিকিট কেটে আমাদের ভিতরে ঢুকতে হবে।’

সুনীল এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে বলল, ‘শিশুপার্ক করতে হলে এখানকার অনেক গাছ কাটতে হবে। আর গাছ কাটলে তো পরিবেশের ক্ষতি হবে।’ ‘আরে তাইতো! এভাবে তো ভেবে দেখিনি!’ শিমু বলল।
চিন্তায় পড়ে গেছে সবাই।

যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

উপরের ঘটনা পড়ার পর তোমার কী মনে হচ্ছে? কোনটা হলে ভালো হয়—আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত শিশুপার্ক, নাকি গাছপালায় ভরা খেলার মাঠ? তোমার মতের সমর্থনে যুক্তিগুলো লেখো।

উপরের ঘটনা পড়ার পর আমার মনে হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন শিশুপার্কের থেকে গাছপালায় ভরা খেলার মাঠ অনেক ভালো। আমার মতের সমাধানে নিচে যুক্তি তুলে ধরা হলো :

নতুন শিশুপার্কপুরাতন খেলার মাঠ
যুক্তি ১নতুন নতুন খেলার সামগ্রী থাকবে শিশুপার্কে। এখানে আসলে শিশুদের মন ভালো হয়ে যাবে ।নতুন খেলাধুলা ও খেলনার সাথে পরিচিত হতে পারবে শিশুরা ।
যুক্তি ২যুগের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। অর্থাৎ, গাছ কেটে কোনো আধুনিক শিশুপার্ক হতে পারে না। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।পুরাতন খেলার মাঠে খেলতে বা ঢুকতে কোনো টাকা লাগে না। যেমন- এখানে অবাধে ঢোকা যায় এবং দীর্ঘ সময় কাটানো যায়।
যুক্তি ৩শিশুপার্কে এলে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ হবে ।গাছপালা সমৃদ্ধ খেলার মাঠে খেলাধুলা করলে শিশুদের মানসিক বিকাশ আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে। আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার চেয়ে অন্য কোনো বিষয়ে অধিক আনন্দ নেই।

ছবি দেখে প্রশ্ন করি, পোস্টার দেখে বোঝার চেষ্টা করি, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি

বিতর্ক করতে শিখি

শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুটি দলে ভাগ হও। এক দল নতুন শিশুপার্কের পক্ষে এবং আরেক দল পুরাতন খেলার মাঠের পক্ষে কথা বলবে। কথা বলার সময়ে দল দুটি নিজেদের যুক্তি একে একে তুলে ধরো। তখন এক দল আরেক দলের যুক্তি খণ্ডনও করতে পারো। এভাবে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কথা বলাকে বিতর্ক বলে।

বিতর্ক করার সময়ে নিচের কথাগুলো মনে রাখবে:

  1. নিজের কথা ও যুক্তি কাগজে টুকে রাখতে হয়।
  2. অন্যের কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়।
  3. অন্যের বক্তব্যের দুর্বল অংশ খুঁজে বের করতে হয়।
  4. বিনয়ের সঙ্গে অন্যের যুক্তি খণ্ডন করতে হয়।
  5. নিজের কথা সংক্ষেপে গুছিয়ে বলতে হয়।
  6. নিজের পক্ষের যুক্তিগুলো একে একে তুলে ধরতে হয়।
  7. অন্যের কথার মাঝখানে কথা বলা যায় না।

বিতর্ক করি

বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষক তোমাদের জোড় সংখ্যক দলে ভাগ করবেন। এরপর প্রতি জোড়া দলের জন্য একটি করে বিতর্কের বিষয় ঠিক করে দেবেন। বিষয়টির পক্ষে এক দল বলবে এবং বিপক্ষে অন্য দল বলবে। প্রতি দলে একজন দলনেতা থাকবে। কথা বলার সময়ে প্রমিত ভাষার ব্যবহার করতে হবে। যুক্তি, পালটা যুক্তি ও ভাষা-ব্যবহারে পারদর্শিতার ভিত্তিতে শিক্ষক বিজয়ী দল ঘোষণা করবেন।

আরো দেখুন-

এছাড়াও সকল বিষয়ের নমুনা উত্তর সমূহ পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক গ্রুপ জয়েন করে নাও ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করো এবং ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন। তোমার বন্ধুকে বিষয়টি জানানোর জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি তার খাতায় নোট করে দিতে পারো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: এই কনটেন্ট কপি করা যাবেনা! অন্য কোনো উপায়ে কপি করা থেকে বিরত থাকুন!!!