৬ষ্ঠ শ্রেণি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি প্রথম ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন বা অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন ২০২৩; সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ শ্রেণি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং সম্ভাব্য নমুনা উত্তর (সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি) নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
যোগ্যতা ৬.১: সুস্থ, পরিচ্ছন্ন নিরাপদ, উৎফুল্ল ও স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে নিজের দৈনন্দিন যত্ন ও পরিচর্যা করতে পারা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সমূহ নির্ণয় ও মোকাবিলায় উদ্যোগী হওয়া।
(প্রথম অধ্যায়: সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি।)
- নিজের দৈনন্দিন যত্ন ও পরিচর্যা করছে
- রোগ প্রতিরোধের সাধারণ অভ্যাস চর্চা করছে।
যোগ্যতা ৬.২: শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং এর প্রভাবের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবন করে সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারা।
(দ্বিতীয় অধ্যায়: আমার কৈশোরের যত্ন)
- বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সমূহ কে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করছে
- বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট দৈনন্দিন পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা করছে।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন আমাকে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হয়:
- হাত ধুয়ে রাখা: হাত ধুয়ে রাখা প্রতিদিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাবান এবং পানিতে ভালভাবে হাত ধোয়া উচিত।
- দাঁত পরিষ্কার রাখা: দাঁত স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে দাঁত পরিষ্কার করি।
- ব্যক্তিগত পরিষ্কার: নিজের ব্যক্তিগত পরিষ্কার নিশ্চিত করতে প্রতিদিন গোসল করি। শুস্ক ও পরিষ্কার কাপড় পরিধান করি এবং ব্যবহৃত পোশাকগুলি নিয়মিত ধুই।
- খাদ্যের সুরক্ষা: সুস্থ খাদ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন পরিশোধন করা উচিত। ফলমূল, শাক-সবজি ভালোভাবে ধোয়ার চেষ্টা করি।
- নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনে নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করি, যেমন- স্থানিক ব্যায়াম, সাইকেলিং, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিনের পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের উচ্চ মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি এবং নিয়মিত ঘুমের সময় ঠিক রাখি।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ : শরীরের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও কর্মক্ষম থাকার জন্য সুষম খাবার খাই। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার রাখার চেষ্টা করি।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিন আমি আরো কিছু কাজ করি। সেগুলো হলো-
- প্রতিদিন সকালে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাই।
- খাবার আগে হাত ধুয়ে নিই।
- কৃত্রিম রঙ যুক্ত খাবার পরিহার করি।
- দিনে কমপক্ষে সাত থেকে আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করি।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে খাবার পরে দাঁত ব্রাশ করি।
- নিয়মিত শরীর চর্চা ও খেলাধুলা করি।
- পর্যাপ্ত ঘুমাই এবং বিশ্রাম নিই।
- বেশি রাত জাগি না এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠি।
রোগ প্রতিরোধের সাধারণ অভ্যাস চর্চা-
স্বাস্থ্যঝুঁকির সমূহ নির্ণয় করে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কিছু করণীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
জনসমাগমে সংক্রমণ:
- জনসমাগমে মাস্ক পরিধান করি।
- প্রায়শই হাত ধুয়ে সাবান দিয়ে মুখ, নাক এবং হাত পরিষ্কার রাখি।
- জনসমাগম এড়াতে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখি।
প্রাকৃতিক ক্ষমতা বাড়ানো:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল, শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি।
- নিয়মিতভাবে ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমাই।
নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত :
- যখন আপনি ভ্রমণ করি, নিরাপদ ভ্রমণ এবং সমাজের স্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসরণ করি।
- সম্ভাব্য ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত সাবধানতা অবলম্বন করি।
আমার কৈশোরের যত্ন
প্রশ্ন: বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমি কী জানি?
উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালের সময় শরীর ও মনে অনেক পরিবর্তন আসে। কারো এ পরিবর্তন আগে শুরু হয় আবার কারোও বা পরে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শরীরের এসব পরিবর্তন হরমোন নিঃসরণের কারণে হয়।
প্রশ্ন: আমার শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছি?
উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপ:
- ১। উচ্চতা ওজন বৃদ্ধি পায়।
- ২। পেশি দৃঢ় হয়, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়।
- ৩। দাড়ি, গোঁফ গজায়।
- ৪। গলায় স্বর ভাঙ্গে ও স্বর ভারী হয়।
- ৫। মুখমণ্ডলে ব্রণ হতে পারে।
প্রশ্ন: আমার মনে নতুন কী ভাবনা আসে?
উত্তরঃ আমার মনে নতুন যে ভাবনা আসে:
- ১। অজনা বিষয়ে জানার কৌতূহল বাড়ে।
- ২। শারীরিক পরিবর্তনের ফলে চলাফেরায় দ্বিধা-দ্বন্ধ ও লজ্জা কাজ করে।
- ৩। স্বাধীনভাবে চলতে ইচ্ছা করে।
- ৪। নিকটজনের মনোযোগ, যত্ন ও ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হয়।
- ৫। আবেগপ্রবণতা বাড়ে।
- ৬। সামাজিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব বাড়ে।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
প্রশ্ন: এসব পরিবর্তনের কারণে আমার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস বা আচরণের কী পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তরঃ এসব পরিবর্তনের কারণে আমার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস বা আচরণের যে পরিবর্তন হয়েছে-
- ১। প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো আচরণ করে।
- ২। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেকে একজন আলাদা ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
- ৩। প্রত্যেক বিষয়ে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা।
- ৪। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
- ৫। এ সময়ে অনেকেই নিজের ব্যাপারে খুব সচেতন থাকে। মনে তীব্র আবেগ অনুভব হয়। বারবার অনুভূতির পরিবর্তন যেমন কখনো হাসিখুশি পরক্ষণেই আবার মন খারাপ হতে পারে। হয়তো কোনো দিন মন খুব ভালো আবার পরের দিন মেজাজ খুব খারাপ হতে পারে।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
উপরোক্ত পরিবর্তনগুলো মেনে নেয়ার পূর্বে আমার ধারণা ছিল ভিন্ন। অথচ কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়। এই পরিবর্তনের যাত্রার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষকেই যেতে হয়। শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার মনে নানা প্রশ্ন জাগতো। কী হচ্ছে আমার সঙ্গে? কেন এমন হচ্ছে? কার কাছে যাব? কী বলব? বললে আবার কেউ কিছু মনে করবে না তো? কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে? এসব নানা প্রশ্ন মনে আসতো।
এই যে একটু একটু করে আমরা বড় হচ্ছি, এটা একটি যাত্রা। আমাদের একান্ত নিজস্ব যাত্রা। এ যাত্রায় আমাদের কত ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে! এসবের কিছু শারীরিক, কিছু আবার মানসিক। এটাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।
বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট দৈনন্দিন পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা-
বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর থাকতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের কিছু কাজ করতে হবে। যেমন:
নিয়মিত গোসল করা :
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শরীরে বেশি ঘাম হয়। নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করলে জীবাণুমুক্ত থাকা যায়। এর পাশাপাশি নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা ও হাত পায়ের নখ ছোট রাখা দরকার। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিষ্কার করা দরকার। এছাড়া বাইরে থেকে বাসায় ফিরে হাত পা মুখ ধোয়া প্রয়োজন।
পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরা :
সবসময়ই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা উচিত। স্কুল থেকে ফিরে দ্রুত স্কুলের পোশাক খুলে ফেলা উচিত। পোশাক ময়লা হলে অবশ্যই তা ধুয়ে পরা উচিত। এসব সাধারণ যত্নের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের শরীরের বিষয়ে কিছু বিশেষ যত্নও নেওয়া দরকার।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের বিশেষ যত্ন :
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে বীর্য উৎপাদন শুরু হয়। শরীরের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বীর্য কখনও আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে। আমাদের সমাজে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার আছে। এ সব কুসংস্কারের ফলে অনেকের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এটা নিয়ে ভয় পেলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে। কিন্তু এটি স্বাভাবিক বিষয়। এ জন্য নিয়মিত গোসল করা এবং শরীর পরিষ্কার রাখা দরকার।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বিশেষ যত্ন :
মাসিকের সময় সাধারণত পরিষ্কার কাপড়, তুলা বা স্যানিটারি ন্যাপকিন/প্যাড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
- মাসিকের সময় সম্ভব হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন, সম্ভব না হলে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা।
- ব্যবহৃত কাপড় বা স্যানিটারি ন্যাপকিন দিনে ৩-৫ বার পরিবর্তন করা।
- ধোয়া কাপড় অবশ্যই রোদে, বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে শুকানো। কড়া রোদে শুকালে রোগজীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, ঝোপঝাড় বা গাছে এই কাপড় শুকানো অস্বাস্থ্যকর। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- মাসিক শেষ হলে কাপড়গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে, শুকিয়ে, ভাঁজ করে প্লাস্টিক বা কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য রাখা যায়। ব্যবহার শেষে কাগজে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে অথবা গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে কোনোভাবেই ব্যবহার করা কাপড় বা প্যাড ল্যাট্রিন বা ড্রেন/নালায় ফেলা যাবে না।
- অতিরিক্ত কাপড় বা প্যাড কাগজে মুড়ে স্কুল ব্যাগে রেখে দেওয়া যেতে পারে। হঠাৎ স্কুলে থাকাকালীন মাসিক শুরু হলে এটি সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। আমার কৈশোরের যত্ন।
- কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তলপেটে গরম পানির সেক দেওয়া যেতে পারে। তবে বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি
আরো দেখুন-
প্রিয় পাঠক, অধ্যয়ন ডট কম আপনাদের জন্য দেশের সকল স্তরের শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নিমিত্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট প্রকাশ করে থাকে। আমাদের প্রকাশিত কোন কন্টেন্ট নিয়ে আপনার কোন প্রকারের অভিযোগ আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা অবশ্যই সেটি সংশোধনের চেষ্টা করব এবং উত্তরোত্তর আরো উন্নতি করার জন্য কাজ করে যাব আপনারা আপনাদের প্রকাশিত যেকোন আর্টিকেল গল্প বা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করুন অথবা সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন।
1 Comment
ম্যাম, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম ধর্ম বিষয়টা প্রয়োজন।