মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা

মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা -৬ষ্ঠ শ্রেণি প্রথম ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন বা অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ জুন ২০২৩; সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ শ্রেণি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং সম্ভাব্য নমুনা উত্তর (মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা) নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

কাজ-১: প্রতিবেদন উপস্থাপন (একক কাজ)

নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর যেকোন একটি বিষয়ে শ্রেণিতে লেখার মাধ্যমে (বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ক্ষেত্রে বিকল্প মাধ্যম যেমন- মৌখিকভাবে) প্রতিবেদন উপস্থাপন।

  • (ক) তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের ফলে আমার চিন্তা ও কাজে যেসব পরিবর্তন এসেছে
  • (খ) মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা
  • (গ) মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের শিক্ষাকে যেভাবে আমার জীবনে কাজে লাগাতে চাই

কাজ-২: সালাতের শিক্ষা নিজ জীবনে কাজে লাগিয়ে কীভাবে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন ঘটানো যায় তার উপর জোড়ায় প্রেজেন্টেশন। (জোড়ায় কাজ)

মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা

তাওহিদের পরিচয়:

তাওহীদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ। আল্লাহ তাআলাকে এক বলে স্বীকার করা। ইসলামি পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং ইবাদতের একমাত্র হকদার হিসেবে মনে-প্রানে বিশ্বাস করাকেই তাওহিদ বলে।

মানবজীবনে তাওহিদে বিশ্বাসের উপকারিতা:

যখন কোন ব্যক্তি তাওহিদের ওপর বিশ্বাস রাখে, তার মনে আসে যে একমাত্র একক সত্ত্বা আল্লাহ আছে এবং তিনি পূর্ণতাবিশিষ্ট এক প্রকৃতির প্রভু। এই বিশ্বাস মানুষ ঈমানী করে তোলে এবং পরবর্তী বিচারের জন্য তার কাজ ও চিন্তা পরিবর্তন করে।

তাওহিদের বিশ্বাস মানবজীবনে এমন এক পরিবর্তন উথ্থাপন করে, যা ব্যক্তির চিন্তা, কার্যকলাপ এবং মর্যাদা উন্নত করে। তাওহিদের উপস্থাপনার ফলে মানুষ নিজেকে আল্লাহর কাছে একটি দাস হিসাবে চিন্তা করে এবং আল্লাহর নির্দেশনার মাধ্যমে জীবন পথে অগ্রসর হতে পারে। এছাড়া, তাওহিদের বিশ্বাস মানবজীবনে একটি স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাস উদ্ভূত করে, যেটি কার্যকলাপে জানতে পারে যে আল্লাহ তাঁকে সবসময় সহায়তা করবেন এবং সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দিকনির্দেশনা দিবেন। এই বিশ্বাস মানবজীবনে একটি আনন্দমূলক উদ্ভাবন করে, যা মানুষকে উচ্চতম মর্যাদায় উঠতে সাহায্য করে এবং পূর্ণতায় তাঁর জীবনকে অর্থবহ করে।

রিসালাতের পরিচয়:

রাসূল শব্দের অর্থ বার্তাবাহক দূত। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানব, জিন ও সৃষ্টিজগতের পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহর নির্বাচিত বান্দার কাছে যে বার্তা, দিক নির্দেশনা এবং আদেশ-নিষেধ প্রেরিত হয়ে থাকে, তাকে রিসালাত বলে। যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা মৌখিক নির্দেশের সাথে সাথে কিতাব প্রদান করেছেন তারা হলেন রাসূল। রাসূলগণ ছিলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাঁদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, চরিত্র, আচার-আচরণ সর্বকালে সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। নির্ভুল ও নির্ভেজাল অনুকরণীয় আদর্শ মানুষ হিসেবে তাঁরা সর্বজনগ্রাহ্য।

মানব জীবনে রিসালাতে বিশ্বাসের উপকারিতা:

রিসালাতের বিশ্বাস মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন উপস্থাপন করে। মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে আল্লাহ রিসালাত প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি প্রয়াসের মাধ্যমে যার মাধ্যমে তাঁর জন্য সবসময় নির্দেশনা এবং আদেশ উপলব্ধ থাকে। মানুষ তাঁর উপদেশ মেনে চলতে পারে এবং এটি তাঁর জীবনে সার্থকতা এবং পরিপূর্ণতা আনে। রিসালাতের বিশ্বাস মানুষের চরিত্র এবং সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করে এবং এটি মানুষকে সঠিক ও ন্যায্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রবৃত্তি দেয়।

আখিরাতের পরিচয়:

পরকালকে আরবিতে আখিরাত বলা হয়। মানুষের মৃত্যু থেকে শুরু করে কবর, হাশর, মিযান, পুলসিরাত, হিসাব-নিকাশ, শাফাআত, জান্নাত-জাহান্নাম ও আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ এ গোটা জীবনকে আখিরাতের জীবন বলা হয়। আখিরাতের উপর ঈমান আনা ফরয।

মানবজীবনে আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা:

আখিরাতের প্রথম স্তর হলো মৃত্যু। প্রাণী মাত্রই মরণশীল। প্রত্যেককেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে গুনাহ থেকে মুক্ত রাখে। তাই সকলের উচিত সবসময় মৃত্যুকে স্মরণে রাখা। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষের জীবনের সর্বাধিক মূল্যবান পরিবর্তন উত্থাপন করে। মানুষ এই বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনে লক্ষ্য ও আদর্শ নির্ধারণ করতে পারে। এ বিশ্বাস মানুষকে অন্যদের প্রতি করোনা এবং নেযতা সম্পর্কে সচেতন করে এবং মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও ধার্মিকতার মর্যাদা এনে দেয়।

মানব জীবনে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাস মানুষের জীবনে ন্যায্যতা, সত্য, সহানুভূতি এবং শান্তি বিকাশের সহায়তা করে। মানুষকে আত্মপরিপূর্ণতা ও আনন্দের জন্য সঠিক পথ বাতলে দেয় এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মানুষের সাথে মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ককে উন্নত করে।

সালাতের শিক্ষা নিজ জীবনে কাজে লাগিয়ে যেভাবে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন ঘটানো যায়

সালাত প্রতিক্ষণের সুস্থির অনুভব-উপলব্ধি, তিলাওয়াত-তাসবিহ, রুকু-সিজদার জন্য যে তৃষ্ণা তৈরি করে, মৃত্যুর পরও তা বাকি থেকে যায়। সালাতের ব্যবহারিক ও বাহ্যিক দিকগুলো স্বল্প সময়ে আয়ত্তে আনা যেতে পারে, তবে অভ্যন্তরীণ উন্নতির ক্রমধারা যা উপলব্ধি ও সূক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম দেয়, তা আমৃত্যু শাণিত করতে হয়। যখন একজন মুসল্লি বা নামাজি আন্তরিকভাবে সালাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তখন এ সালাত আনুষ্ঠানিক ও লোক দেখানোর বিষয় থাকে না। বরং বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত হয়।

আত্মার সঙ্গে আত্মজিজ্ঞাসা থাকে এবং প্রকৃত আত্মজিজ্ঞাসার সদুত্তর হলো আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা। সেই মহান অস্তিত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার একমাত্র অবলম্বন হলো নিয়মিত সালাত আদায় করা এবং স্বীয় সালাতের পবিত্র প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পবিত্র জীবন যাপন করা। এভাবেই সালাত একজন মুসল্লির জীবনকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে এবং সালাতবিহীন জীবনের হাহাকার দূর করতে সালাতের বিকল্প আর কিছু নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, সে তার পুরো দীন (জীবনবিধানকে) প্রতিষ্ঠা করে; যে সালাত বিনষ্ট করে, সে পুরো দীনকেই বরবাদ করে দেয়।’ (বুখারি)।

রাসুল (সা.) বলেন, ইমান ও কুফরের মধ্যবর্তী দেয়াল হলো সালাত। সালাত মানবজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে বা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শিক্ষা দেয়। মানুষ যা দেখে তা শেখে, তা ভাবে। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ মনোনিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য; এর দ্বারা কর্মও নিয়ন্ত্রিত হয়। সালাত আদায় করলে মনোনিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে; সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্যও সফল হবে। সালাত সত্যিকারার্থে তার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ প্রকাশে সার্থক হবে। জীবন ও সমাজ সুন্দর হবে, আল্লাহ তাআলা খুশি হবেন।

আরো দেখুন-

মানবজীবনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, অধ্যয়ন ডট কম আপনাদের জন্য দেশের সকল স্তরের শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নিমিত্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট প্রকাশ করে থাকে। আমাদের প্রকাশিত কোন কন্টেন্ট নিয়ে আপনার কোন প্রকারের অভিযোগ আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা অবশ্যই সেটি সংশোধনের চেষ্টা করব এবং উত্তরোত্তর আরো উন্নতি করার জন্য কাজ করে যাব আপনারা আপনাদের প্রকাশিত যেকোন আর্টিকেল গল্প বা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করুন অথবা সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: এই কনটেন্ট কপি করা যাবেনা! অন্য কোনো উপায়ে কপি করা থেকে বিরত থাকুন!!!