এই অধ্যায়ে আমরা জানতে চলেছি দশে শিলে করি কাজ এর সর্ম্পকে। আমরা সবাই কম বেশি কাজ কর্ম করি কিন্তু দশ জন মানুষ একসাথে কাজ করলে কাজটা অনেক সুন্দর হয়। যেমন স্কুলের অফিস কক্ষ বা শ্রেণি কক্ষ এক জন পরিক্ষার করলে তেমন সুন্দর হবে না তাই দশ মিলে কাজ করলে কাজ সুন্দর হবে এবং সবার সাথে সবার ভালো সর্ম্পক হয়।
দশে মিলে করি কাজ
কথা না বারিয়ে দশে মিলে করি কাজ এই অধ্যায় সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করি।

অনুপদের স্কুলটি বেশ সুন্দর। গাছপালায় ঘেরা বড় খেলার মাঠ ওদের। ক্লাসগুলোও অনেক বড়। ক্লাসে ওদের শিক্ষকরা প্রায়ই ওদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের পোস্টার তৈরি করতে দেন। ওরা পোস্টার বানিয়ে রশিতে ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু ক্লাসজুড়ে রশি ঝুলে থাকায় ক্লাসের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তা ছাড়া ফ্যানের বাতাসে অনেক সময় পোস্টারগুলো ছিঁড়ে যায়।
এ কারণে ওরা সবাই মিলে মিটিং করে ঠিক করল, ক্লাসে একটা ডিসপ্লে বোর্ড বানাবে। ককশিট দিয়ে নিজেরাই নকশা করে বোর্ডটি বানাতে চায় তারা। এ জন্য তারা সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করল। দেয়ালে লাগানোর আঠা, ককশিট, ডিজাইন করার কাগজ, বোর্ড পিন ইত্যাদি মিলিয়ে মোট খরচ কত হতে পারে তা হিসাব করল। দশে মিলে করি কাজ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এক সপ্তাহে সবার টিফিন ও অন্যান্য খরচ থেকে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করল। নিজেদের ইচ্ছার কথা কয়েকজন গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কিছু খরচ ওদের হাতে তুলে দেন। পরিকল্পনা শুনে তাদের ক্লাসের শিক্ষক ও টুকটাক কিছু ফান্ড দিলেন। আর তাতেই হয়ে গেল ওদের খরচের টাকা। ব্যস, কয়েকজন মিলে কিনে আনল প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বৃহস্পতিবার খেলার ক্লাসে সবাই মিলে বানিয়ে ফেলল ডিসপ্লে বোর্ড।
শিক্ষকের পরামর্শও সহায়তায় দেয়ালে আঠা দিয়ে সেঁটে দিল বোর্ডটি। বোর্ডের এককোনায় ক্লাস রুটিন টানিয়ে দিল। বোর্ড পিনগুলো সাজিয়ে রাখল আরেক কোনায়। এখন কেউ ইচ্ছে করলে নিজের আঁকা ছবি, গল্প, কবিতা বা সৃজনশীল কোনো কাজ এখানে টানিয়ে দিতে পারবে। আবার কাজের সময় পোস্টার ডিসপ্লে তো করাই যাবে! দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছে শ্রেণিকক্ষটি। সৃষ্টির আনন্দে সবাই খুব খুশি। দশে মিলে করি কাজ।
অনুপদের ক্লাসে সবাই মিলে কেন ডিসপ্লে বোর্ড বানালো?
সমস্যা খুঁজি
গুহাবাসী মানুষের ইতিহাস তোমরা নিশ্চয়ই পড়েছ। তারাও প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তেন। কখনও দেখা যেত, শিকার করতে গিয়ে অস্ত্র হারিয়ে গেছে বা ভেঙে গেছে, অথবা তাদের বসবাসের গুহা পানিতে ডুবে গেছে। এভাবে মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষ সমস্যাকে সাথী করেই বসবাস করে আসছে। দশে মিলে করি কাজ।
এখনও প্রতিদিন চলার পথে পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে আমরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হই। কিছু কিছু সমস্যা আছে যেগুলো আমরা চাইলে নিজেরাই সমাধান করে ফেলতে পারি। আমরা আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে, বিভিন্নজনের সহযোগিতায় এসব অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। দশে মিলে করি কাজ।
এতে একধরনের ভালোলাগা যেমন আছে, তেমনি আমাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। অনুপদের স্কুলের কথা একবার ভাবো তো! যেকোনো ভালো কাজ বা চিন্তার সঙ্গে সবাই খুশিমনেই যুক্ত থাকে। নিজেদের ক্লাসের ছোট্ট সমস্যার কী চমৎকার সমাধান তারা করে ফেলল!

আমরা দৈনন্দিন জীবনে, চলতে ফিরতে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, সমস্যা হলো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা ক্ষতিকর পরিস্থিতি বা বিষয়, যা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হয়। এবার এসো, আমরা আমাদের চারপাশে বিশেষত বিদ্যালয়ে এবং বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসতে প্রতিনিয়ত যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই সেগুলো খুঁজে বের করি। দশে মিলে করি কাজ।
যেমন ধরো, ক্লাসে খাবার পানির সংকট, বসার সিটের অব্যবস্থাপনা, ক্লাব কার্যক্রমের কোনো সমস্যা, উপকরণ রাখার বা প্রদর্শনের সমস্যা, টয়লেট ব্যবহারে বিশৃঙ্খলা, ইনডোর গেমস এর অব্যবস্থাপনা, তোমাদের বাড়ি থেকে প্রতিষ্ঠানে আসার পথের কোনো সমস্যা (রাস্তার ছোটখাটো গর্ত, বুলিইং, বৃক্ষ নিধন, মশার প্রজনন ক্ষেত্র) ইত্যাদি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে সম্ভাব্য সমাধানের প্রয়াস চালাতে পারো।
চলো, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে দলে বিভক্ত হয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থান পরিদর্শন করি এবং দলগত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ দলের ঘরটি পূরণ করি-
দল | সমস্যার ধরন | সমস্যার |
---|---|---|
ক দল | অবকাঠামোগত | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
খ দল | খেলাধুলা, ক্রীড়াসংক্রান্ত | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
গ দল | দল সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসংক্রান্ত | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
ঘ দল | বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ সংক্রান্ত | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
ঙ দল | ঝরে পড়া ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক কোনো সমস্যা | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
চ দল | বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসা- যাওয়ার পথের কোনো সমস্যা | ১। ……… ২। ……… ৩। ……… |
সমস্যা খুঁজে বের করতে গিয়ে তোমরা প্রয়োজন হলে তোমাদের শিক্ষক, উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থী, আয়া, দপ্তরী, মালী, দাড়োয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ অন্যান্য যে কারও সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জেনে নিতে পারো। স্থানীয় কোনো সমস্যা হলে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারেন অথবা সহায়তা/পরামর্শ দিতে পারেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের মতামত সংগ্রহ করা যেতে পারে।
সমস্যাটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিতে পারো। প্রয়োজন হলে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েও সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারো। দশে মিলে করি কাজ।
আমরা সবাই পথ চলতে গিয়ে কম হোক বেশি হোক, প্রতিদিনই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ি। সমস্যা হলো একটি অপ্রত্যাশিত বা অনাকাক্ষিত অবস্থা, যা কারও ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং সবাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক যেকোনো ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি।
সমস্যা সামনে এলে ভয় পেলে চলবে না, বরং সাহস ও বুদ্ধি দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে । সমস্যার সমাধান যে প্রক্রিয়ায় করা হয়ে থাকে তার কিছু সাধারণ ধাপ আছে। ধাপে ধাপে অগ্রসর হলে ভালো হয়। চলো, আমরা একনজরে দেখে নিই- আমরা সবাই পথ চলতে গিয়ে কম হোক বেশি হোক, প্রতিদিনই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ি।
সমস্যা হলো একটি অপ্রত্যাশিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা, যা কারও ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং সবাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক যেকোনো ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি। সমস্যা সামনে এলে ভয় পেলে চলবে না, বরং সাহস ও বুদ্ধি দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। দশে মিলে করি কাজ।
সমস্যার সমাধান যে প্রক্রিয়ায় করা হয়ে থাকে তার কিছু সাধারণ ধাপ আছে। ধাপে ধাপে অগ্রসর হলে ভালো হয়। চলো, আমরা একনজরে দেখে নিই-
সমস্যা চিহ্নিত করা | সমস্যার ধরন ও কারণ খুঁজে দেখা | সম্ভাব্য সমাধান বের করা | সমাধান নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ | সমাধান বাস্তবায়ন | সমাধান মূল্যায়ন |
যেকোনো সমস্যা সামনে এলে প্রথমেই এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
■ কী কারণে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
■ এরপর উক্ত কারণগুলো পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য সমাধানের এক বা একাধিক উপায় বের করতে হবে।
■ সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক সেটি বেছে নিতে হবে। এরপর উক্ত সমাধানের কৌশলগুলো বাস্তবে প্রয়োগ বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
■ বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করে উক্ত সমাধানের উপায়টি কতটা ফলপ্রসূ হলো তা যাচাই করে নিতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর কৌশল কী তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। দশে মিলে করি কাজ।
ধাপ অনুযায়ী এবারে সমস্যা নির্বাচনের পালা। তোমরা হয়তো এক বা একাধিক সমস্যা খুঁজে পেয়েছ। সবগুলো সমস্যার সমাধান হয়তো এখনই করে ফেলা সম্ভব নয়। তাই চলো আমরা দলে একটি সমস্যা নির্বাচন করি, যে সমস্যার সমাধানে আমরা প্রয়াস নেব। সমস্যা নির্বাচন করতে তোমরা কয়েকটি বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করবে-
■ সমস্যাটি গুরুত্বপূর্ণ কিনা,
■ জরুরি সমাধান প্রয়োজন কিনা;
■ তোমাদের দ্বারা উদ্যোগ নেয়া সম্ভব কিনা;
■ সমাধান করা হলে তোমরা এবং অন্যরা কতটা উপকৃত হবে ইত্যাদি।
নিজেদের দলে বিষয়গুলো ভালোভাবে আলোচনা করে প্রত্যেক দল একটি করে সমস্যা নির্বাচন করো। এই দলগত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তোমরা তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারো। নিজেদের দলে ঝগড়াও শুরু হয়ে যেতে পারে! কিন্তু আমরা তা চাই না। দশে মিলে করি কাজ।
আমরা চাই, দলে সবাই শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেন একটি বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নাও। এ কারণে তোমাদের শিখতে হবে কার্যকর যোগাযোগের কলাকৌশল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এই দক্ষতা অর্জন করলে ব্যক্তিগত অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা সম্ভব।

সমস্যা সমাধানে যোগাযোগ দক্ষতা
যোগাযোগ দক্ষতা হলো নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করা এবং অন্যের দেয়া তথ্য সঠিকভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা; অন্যের কথা মনোযোগের সঙ্গে এবং সক্রিয়ভাবে শোনার দক্ষতা; সর্বোপরি অন্যকে দোষারোপ না করে এবং অন্যের মনে কষ্ট না দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারা। আমরা একে অন্যের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে থাকি।দশে মিলে করি কাজ।
কখনও লিখিতভাবে, কখনও মৌখিকভাবে, কখনও শরীরী ভাষায়, যেমন- দেহভঙ্গি, চেহারায় সুখ ও দুঃখের ভাব, চোখের ইশারা, গলার স্বরের ওঠানামা কিংবা স্পর্শ ইত্যাদি। এগুলো সবই যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বিবেচ্য বিষয়। যোগাযোগ কতটা কার্যকর হবে তা এগুলোর ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, যোগাযোগে দুটো পক্ষ থাকে- বার্তা প্রেরক (Encoder) এবং বার্তা গ্রাহক (Decoder)।
বার্তা প্রেরক যদি সঠিকভাবে বার্তা প্রস্তুত করে যথাযথভাবে বার্তাগ্রাহকের কাছে পৌছাতে পারেন, অন্যদিকে বার্তাগ্রাহক যদি সঠিকভাবে বার্তাটি বোঝেন এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেন এবং কাজ করেন, তাহলেই যোগাযোগ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। মনে রাখবে, যোগাযোগ একটি উভয়মুখী প্রক্রিয়া। দশে মিলে করি কাজ।
যোগাযোগের জন্য তথ্য আদান-প্রদান কিংবা কোনো আলোচনার সাফল্য তাই উভয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে আমাদের যোগাযোগে সফল হওয়ার জন্য বেশ কিছু গুণাবলির চর্চা করা প্রয়োজন। খেলার মাঠে, নিজ বাড়িতে কিংবা কর্মক্ষেত্রে নিজে ভালো থাকার এবং সবাইকে ভালো রাখার জন্য এই গুণগুলো আমরা নিয়মিত অনুশীলন করব। এসো, জেনে নিই যোগাযোগ কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় কোন কোন দিকগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখব-



■ মনোযোগ দিয়ে শুনব
■ বলার সময় সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে বলব
■ বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করে বুঝে নেবো
■ অন্যকে দোষারোপ বা আঘাত করে কথা বলব না
■ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যুক্তি দিয়ে বলব
■ যা বলছ তা চেহারায় ফুটিয়ে তুলব
■ বন্ধুত্বপূর্ণ, সহনশীল মনোভাব বজায় রাখব
■ গঠনমূলক সমালোচনা করব
■ অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করব
■ নিজের অবস্থানে অনমনীয় থাকব না, অর্থাৎ অন্যের গ্রহণযোগ্য যুক্তি বা পরামর্শ মেনে নেওয়ার প্রবণতা দেখাব।
তোমরা নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ভেবে দেখ, অনেক কিছুই তোমরা পাবে যেখানে হয়তো তোমাদের ভালো যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে কাজটি ভেস্তে গেছে। আবার উল্টোটাও হতে পারে, হয়তো ভালোভাবে যোগাযোগের কারণে তোমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে; তুমি যা প্রত্যাশা করেছিলে তা পেয়ে গিয়েছ। তাই আমাদের প্রত্যেকেই কার্যকর যোগাযোগের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। মনে রাখবে-
‘যোগাযোগ যদি হয় আন্তরিক ও কার্যকর
সমাধান হবে সমস্যার সদাই বরাবর’
কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতার অনুশীলন
এখানে কয়েকটি ঘটনা দেওয়া আছে। এগুলো পড়ে তোমাদের দলে আলোচনা করো এবং কীভাবে কার্যকর যোগাযোগ করে সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠা যায় তা লেখ। ভূমিকাভিনয় করে অন্য বন্ধুদের দেখাও । দশে মিলে করি কাজ।
ক) তুমি বাসে ওঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছ। লম্বা লাইন। এমন সময় একজন এসে মাঝখানে তোমার সামনে ঢুকে গেল। লোকটা নিয়ম ভঙ্গ করেছে। তুমি এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
খ) তুমি ফুটবল খেলতে ভালোবাসো। কিন্তু প্রতিদিনই ফুটবল খেলতে গিয়ে তুমি হাতে, পায়ে, নাকে, মুখে বা কোথাও ব্যথা পেয়ে বাড়ি ফিরে আসো। এতে মা রাগ করে বললেন, ‘এখন থেকে তোমার ফুটবল খেলতে যাওয়া বন্ধ।’ তুমি এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
গ) তুমি প্রতিদিন বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুলে যাও। রাস্তায় যাওয়ার পথে চায়ের দোকানের সামনে প্রায়ই কয়েজন দুষ্ট ছেলে তোমাকে ও তোমার বান্ধবীদের উদ্দেশ করে টিপ্পনী কাটে, হাসাহাসি করে। তুমি/তোমরা এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
ঘ) টিফিন ঘন্টায় তোমরা কয়েকজন মিলে মাঠে বসে গল্প করছিলে। এমন সময় দোতলার বারান্দা থেকে একজন বোতল থেকে পানি নিয়ে হাত ধুচ্ছিল আর পানির ছিটা এসে তোমাদের গায়ে পড়ল। তোমরা এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
ঙ) তোমাদের ক্লাসে গণিতের স্যার ভীষণ কড়া। তিনি একটানা অঙ্ক করিয়ে যান। মাঝখানে কেউ প্রশ্ন করলে রাগ করেন। তুমি কিছুতেই অঙ্কের দুটো জায়গায় বুঝতে পারছ না। তোমার পাশের জনও বুঝতে পারছে না। তুমি/তোমরা এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
চ) তোমাদের ক্লাসে একজন সহপাঠী খুব আবেগপ্রবণ। অল্পতেই কষ্ট পায়; কান্নাকাটি করে। দুষ্টামীর ছলে কেউ তাকে কিছু বললেও সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। একদিন বেঞ্চ টান দিতে গিয়ে ওর ব্যাগটি নিচে পড়ে যায়। তখন বাংলার ক্লাস চলছিল। ও চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। সবাই ঘাবড়ে গেল। তুমি/তোমরা এখন কী করবে?
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
____________________________________________________________
দলগতভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজি
আমরা কার্যকর যোগাযোগের কলাকৌশলগুলো জেনে নিয়েছি। এবার আমরা ইতোপূর্বে দলগত আলোচনার মাধ্যমে আমরা যে সমস্যার সমাধানে কাজ করব বলে বেছে নিয়েছিলাম সেটি নিয়ে একটু ভাবব এবং নিজ নিজ দলে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সমস্যাটির সমাধানের উপায়গুলো খুঁজে বের করব। এর জন্য তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হতে পারে। দশে মিলে করি কাজ।
তোমরা তো নিশ্চয়ই তোমাদের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে এই ধরনের তথ্য সংগ্রহের অনুশীলন করেছ, তাই না! তাহলে এবার তোমরা যে সমস্যা সমাধানে কাজ করবে, তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করো। কার্যকর যোগাযোগ কৌশল প্রয়োগ করে উক্ত সমস্যার কয়েকটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করো। মনে রেখো, যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের অনেক পথ থাকে। অর্থাৎ সমস্যা হয়তো একটাই, কিন্তু সমাধান অনেকগুলো! তাই চল-
একের অধিক উপায় খুঁজি
সমস্যার সমাধান করি।
ছক ৬.২: সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা
নির্ধারিত সমস্যা দলের নাম : সমস্যার ক্ষেত্র : সমস্যার বিবরণ : | সম্ভাব্য সমাধানসমূহ _________________________________________________ উপায় ১ : _________________________________________________ উপায় ২ : _________________________________________________ উপায় ৩ : |
যেকোনো সমস্যা সমাধানের একাধিক উপায় রয়েছে। তোমরাও যে সমস্যার সমাধান করতে চাও, তার জন্য একাধিক সমাধানের উপায় খুঁজে বের করেছ। এবার কার্যকর যোগাযোগের উপায় ও কৌশল অনুসরণ করে একাধিক সমাধান থেকে সবচেয়ে কার্যকর একটি সমাধান দলে আলোচনা করে খুঁজে বের করো। সবচেয়ে কার্যকর সমাধানের উপায় বের করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করো-
উক্ত সমাধানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী তোমরা কাজ শুরু করো। সমাধানের উপায় বাছাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবে-
■ সমাধান তোমাদের আওতায় (সক্ষমতা/সামর্থ্য) আছে কিনা;
■ কোনো আর্থিক খরচের সংশ্লেষ থাকলে সেটা বহন করা সম্ভব কিনা;
■ কতটা কম সময়ে করা যাবে;
■ সম্ভাব্য উপায়টি স্থায়ী/ টেকসই কিনা :
■ স্থানীয় সহায়তা পাওয়া যাবে কিনা;
■ সহজে কাজটি করা যাবে কিনা;
যেকোনো সমস্যারই অনেক ডাল-পালা থাকে। আমরা সেগুলোর হয়তো সমাধান করতে পারব না। তবে যেসব সমাধান আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য প্রয়াস চালানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া মানেই হলো সমস্যার সঙ্গে আরও কিছুদিন বসবাস করা। তাতে আমরা সবকাজেই পিছিয়ে পড়বো। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এসো সবাই-
বিচার করে সূক্ষ্মভাবে, তথ্য জমাই ভান্ডারে,
যোগাযোগে পটু হয়ে সমস্যাকে যাই উতরে।
ছক ৬.৩: সমস্যার সমাধান পর্যালোচনা
সমস্যা | সমস্যার সমাধানের উপায় | উপায়টি বেছে নেওয়ার যৌক্তিক কারণ |
এবার নির্ধারিত সমস্যার সমাধানের পালা। তোমরা নির্ধারিত সমস্যার নির্দিষ্ট একটি সমাধানের উপায় চিহ্নিত করেছ। এবার সমস্যাটি সমাধান করার জন্য দলে আলোচনা করে দায়িত্ব ঠিক করে নাও। মনে রাখবে, দায়িত্ব ভাগ করে নেবার ক্ষেত্রেও কার্যকর যোগাযোগের কৌশল তোমাদের কাজে লাগবে।
এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দক্ষতাকে তোমার বিবেচনায় রাখতে পারো। সমাধানের উপায় বিবেচনা করে কে কোন দায়িত্ব পালন করবে, কখন পালন করবে, কীভাবে পালন করবে তার একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি করো এবং সেই অনুযায়ী সমাধানের প্রয়াস গ্রহণ করো। এক সপ্তাহ পরে দলগত সমস্যা সমাধান সম্পর্কে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক রিপোর্ট করো।
সমস্যা সমাধানে আমার প্রয়াস |
স্বমূল্যায়ন
এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি…….. টিক (/)চিহ্ন দাও
কাজসমূহ | করতে পারিনি(১) | আংশিক করেছি (৩) | ভালোভাবে করেছি (৫) |
---|---|---|---|
পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে সমস্যা চিহ্নিতকরণ | |||
সমাধানের উদ্দেশ্যে সমস্যা নির্বাচন করা | |||
নির্বাচিত সমস্যার একাধিক সমাধান খুঁজে বের করা | |||
কার্যকর যোগাযোগের উপায় অনুসন্ধান | |||
সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতার অনুশীলন | |||
একাধিক সমাধান থেকে যেকোনো একটিকে নিয়ে কাজ করা | |||
মোট স্কোর : ৩০ তোমার প্রাপ্ত স্কোর : | |||
শিক্ষকের মন্তব্য: |
তোমার প্রাপ্তি? তুমি যা পেলে তা নিয়ে তোমার মনের অবস্থা চিহ্নিত করো | একদম ভালো লাগছে না; সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দক্ষতা এবং বিষয় সম্পর্কে আমার জানা এবং চর্চা করা খুব জরুরি। | আমার ভালো লাগছে ; কিন্তু সমস্যা সমাধানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দক্ষতা এবং বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা ও চর্চা করা প্রয়োজন। | আমার বেশ ভালো লাগছে ; সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দক্ষতার উন্নয়নে নিয়মিত চর্চা আমি অব্যাহত রাখব। |
……সব সময় সবাই মিলে এমন হাসি হাসতে চাই।। সুতরাং এভাবে হাসতে হলে এই অধ্যায়ের যেসব বিষয়গুলো আমাকে আরো ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখি __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ আমার যোগাযোগ ও সমস্যা সমাধান দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আমাকে নিয়মিত যেসব চর্চা চালিয়ে যেতে হবে সেগুলো লিখি __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ __________________________________________________________________________________________________ |

- আরো পড়ুন : আমরা ষষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বইয়ের পঞ্চম অধ্যায় সর্ম্পকে জানার চেষ্ট করি আমার জীবন আমার লক্ষ্য।