নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ১০ টি সতর্কতা

স্মার্টফোন এবং এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এই সময়ে নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আজকে সেই আলোচনাই করবো। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সুবিধা আমরা সবাই ভোগ করি।

কিন্তু সামান্য অসাবধানতা ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাই স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতাসমূহ সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এর আগে আমরা জেনেছি ফিশিং কী এবং ফিশিং থেকে বাঁচার ৬টি সহজ উপায়

স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ আমাদের জীবনকে করেছে অনেক সাচ্ছন্দময়। ইলেকট্রিক বিল দেয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ এখন কেবল একটি ক্লিকের ব্যাপার মাত্র।

নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহার

রাস্তায় জ্যাম! অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে! কোন ব্যাপার না! বাড়িতে কিংবা গাড়িতে বসে স্মার্ট ফোনেই সেরে ফেলতে পারেন অফিসের কাজগুলো। প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগে এবং ব্যক্তিগত কাজে স্মার্টফোনের ব্যবহারকে আরও গতিময় করতে বের হয়েছে হাজারো অ্যাপস।

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা প্রায়ই সেসব অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করে থাকি। ২০১৮ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী Google Play Store এ ৩.৩ মিলিয়ন অ্যাপস আছে। তবে দুঃখজনকভাবে বেশীর ভাগ অ্যাপসই Verified না।

বিভিন্ন গেমস্ ও ছোট ছোট রসালো অ্যাপস্ কিংবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দুষ্ট চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকের মোবাইলের Contact, SMS, ছবি, Call History সহ অন্যান্য তথ্য। এমনকি মোবাইলের ক্যামেরার নিয়ন্ত্রনও তাদের হাতে চলে যাচ্ছে।

পরবর্তীতে তারা এই তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মানহানি এবং আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে আমাদের সমাজে।

স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা

একটুক্ষানি সচেতনতাই আপনাকে এরকম বিপদ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। তবে চলুন, এরকম কয়েকটি উপায় জেনে নেই যেগুলো মেনে চললে আপনি কোন প্রকার নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়াই স্মার্টফোন ও অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।

ভূয়া অ্যাপস সনাক্ত করণ ভুয়া খবর সনাক্ত করার মতই একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য এবং অফিসিয়াল বিভিন্ন তথ্য নিরাপদ রাখতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা করা অত্যাবশ্যক।

১. স্মার্টফোন নিরাপদ রাখতে স্ক্রিন লক ব্যবহার

আপনার স্মাটফোনটি নিরাপদ রাখার জন্য প্রথম করনীয় হলো স্ক্রিন লক ব্যবহার করা। ফোনের সেটিংস থেকে স্ক্রিন লক করা যায়।

সাধারণত ফোনের সেটিংস মেনুতে ‘security’ বা ‘ডিভাইস লক’ অপশনে সাধারণ পিন, পাসওয়ার্ড, প্যাটার্ন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেইস রিকগনিশন ইত্যাদি বিভিন্ন স্ক্রিন লক অপশন থাকে এখান থেকে যেকোন একটি পদ্ধতিতে ফোনটি লক করে রাখলে অপরিচিত কারো হাতে গেলেও সাথে সাথে ফোনটি আনলক করতে পারবে না।

নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ছবি: নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা সেটিংস্

প্রয়োজন অনুযায়ী স্মার্টফোনে নিরাপত্তাব্যবস্থা (ফেসস আনলক, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, প্যাটার্ন, পিন ইত্যাদি) নির্বাচন করতে হবে।

আপনি কখনোই চাইবেন না, আপনার স্মার্টফোনের ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল ফাইল, ছবি ও ভিডিও গুলো অন্য কেউ দেখে ফেলুক। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে ফোনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো লক করে রাখা ভালো। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ফোনে এমন কোন কন্টেন্ট রাখাই ঠিক না যেটি আপনাকে এমন কোন মারাত্বক বিপদে ফেলার আশংকা রয়েছে।

২. নির্ধারিত অ্যাপ স্টোর থেকে সফটওয়্যার বা অ্যাপ ডাউনলোড করা

নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতার অংশ হিসেবে আপনার স্মার্টফোনে কখনোই প্লেস্টোর (এন্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্যে) বা অ্যাপস্টোর (অ্যাপল ডিভাইসের জন্যে) ছাড়া অন্য কোন উৎস থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা যাবে না। নিরাপদ উৎস (প্লেস্টোর, অ্যাপস্টোর) ব্যতীত স্মার্টফোনে অ্যাপ ইনস্টল করে আপনার নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।

কোনো অ্যাপ্লিকেশন ডিভাইসে ইন্সটলের আগে মনে রাখতে হবে তা যেন গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপস্টোর থেকে সরাসরি ইন্সটল করা হয। এতে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমনের হাত থেকে অনেকাটা রক্ষা পাওযা যায।

আবার অনেক সময় কিছু ম্যালওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনে ইন্সটল হতে চায়। এটি বন্ধ করতে অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল বন্ধ রাখতে হবে।

৩. অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড বা ইন্সটল না করা

৩. অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড বা ইন্সটল না করা

গুগল প্লে-স্টোর বা অ্যাপল স্টোর ব্যতিত অন্য কোনো সোর্স থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করলে আপনার ফোনে প্রবেশ করতে পারে ম্যালওয়্যার। নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন হিসেবে আপনি যে অপারেটিং সিস্টেম এর মোবাইল ব্যবহার করছেন সেই সিস্টেম এর নিজস্ব স্টোর থেকে সবসময় অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত।

স্মার্টফোনের সিকিউরিটি সেটিংস থেকে অনিরাপদ উৎস হতে অ্যাপ ইনস্টল করতে পারা বন্ধ কর দিতে হবে। আপনার স্মার্ট ফোনটি নিরাপদ রাখতে সিকিউরিটি সেটিংস থেকে Unknown Sources অপশনটি চালু থাকলে সেটি বন্ধ করে দিন।

৪. অপ্রয়োজনীয় পারমিশন দেওয়া থেকে বিরত থাকা

স্মার্ট ফোনে কোনো অ্যাপ ইন্সটল অথবা ফোনে থাকা কোনো অ্যাপে অপ্রয়োজনীয় যেসকল পারমিশন চায় সেগুলো বন্ধ করে রাখুন। কারণ এর মাধ্যমে হ্যাকার আপনার ফোনের সকল তথ্য তার কাছে নিয়ে যেতে পারে।

নতুন কোন অ্যাপ ইন্সটল করলে তা আপনার ফোনের কন্টাক্ট, ক্যামেরা, গ্যালারি সহ অন্যান্য স্থানের পারমিশন চেয়ে থাকে। অ্যাপ ইন্সটল করার সময় এরকম পারমিশন দেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন।

কোন অ্যাপ যদি অপ্রয়োজনীয় পারমিশন চায়, তার অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা হিসেবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্মার্টফোনে অ্যাপ ইনস্টল করার সময়ে পারমিশনগুলো যথেষ্ট সচেতনার সাথে সিলেক্ট করতে হবে।

৫. পাবলিক বা ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা

আপনার কোথাও বাহিরে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হলে হয়তো সে জায়গার পাবলিক ওয়াইফাই টি ব্যবহার করছেন। সাবধান! এমন পাবলিক ওয়াইফাই থেকে হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার আক্রমনের শিকার হতে পারে আপনার ডিভাইসটি।

সাইবার অপরাধীদের অনেকে এমন ফ্রি সংযোগের মাধ্যমে হ্যাকিং বা ভাইরাস ছড়ানোর কাজটি করে থাকে। তাই অজানা কোনো ওয়াইফাই সংযোগের সঙ্গে ফোন যুক্ত করা উচিত নয়।

সবসময় ফ্রী বা পাবলিক নেটওয়ার্কে এড়িয়ে চলতে হবে। আপনার স্মার্ট ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফ্রী বা পাবলিক নেটওয়ার্ক এড়িয়ে চলতে হবে। সাইবার আক্রমনের জন্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব নেটওয়ার্ক অপরাধীদের খুব প্রিয়।

৬. ফাইন্ড মাই ডিভাইস অ্যাপ অ্যাকটিভ রাখা এবং লোকেশন ট্র্যাক অপশন চালু রাখা

চলার পথে আপনার স্মার্টফোনটি চুরি হয়ে যেতে পারে যেকোন মুহূর্তে। আপনার ফোনটি চুরি হলে যে শুধু আর্থিক ক্ষতিই হবে তা নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে ফোনে থাকা ফাইলগুলো আপনার কাছে বেশি প্রয়োজনীয়।

এ অবস্থা থেকে নিরাপদ থাকতে সব সময় ফোনের সিঙ্ক্রোনাইজ এবং ডীভাইস ট্রাকিং অপশনটি চালু রাখুন। যদি আপনার ফোন সবসময় ইন্টারনেটের আওতায় থাকে এবং লোকেশন অন থাকে তাহলে ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলেও আপনার ফোনে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রিকোভার করতে পারবেন এবং ফোনটি পুরোপুরি লক করে দিতে বা ফোনের সব গোপনীয় ফাইল ডিলিট করে দিতে পারবেন।

গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস এবং যেকোন অপারেটিং সিস্টেম এর এই সংক্রান্ত ফিচারটি চালু করে সারাক্ষণ আপনার ফোনটি নিরাপদ রাখতে পারেন। জেনে নিন কখনো আপনার ফোন হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়ার সহজ উপায়।

৭. অপরিচিত লোকের হাতে মোবাইল না দেওয়া

আপনার পরিচিত নয় এমন কেউ আপনার কাছে আপনার স্মার্টফোন চাইলে কখনোই দিবেন না। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞেস করে কাউকে কল দিতে হলে নিজে মোবাইল নম্বর এন্ট্রি ফোন করে নিজে কথা বলে তথ্যটি জানিয়ে দিবেন।

আপনার স্মার্টফোনটি কখনোই অপরিচিত কোন ব্যাক্তির হাতে দিবেন না। একজন দক্ষ হ্যাকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার ফোনের সব তথ্য নিয়ে নিতে পারে।

এছাড়াও, তারা ফোনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করে আপনার ক্যামেরা, লোকেশান ইত্যাদি বিষয়ের উপরও নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে। তাই অপরিচিত কোন ব্যাক্তিকে নিজের স্মার্টফোন দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৮. স্প্যাম কল বা লিঙ্কে ক্লিক থেকে সাবধান

বহু টেলিমার্কেটিং সার্ভিস রয়েছে, যারা আপনার মোবাইল ফোনে অবাঞ্ছিত কল করতে পারে। কিংবা অপরিচিত কোন ব্যক্তি মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোতে অনেক ঝুকিপূর্ণ লিঙ্ক পাঠাতে পারে।

এই লিঙ্কে ক্লিক করে আপনি হ্যাকিং এর শিকার হতে পারেন তাই সন্দেহজনক নম্বর থেকে ফোন ধরা কিংবা লিঙ্কে ক্লিক করা বাদ দিন। এই পদ্ধতিতে তথ্য হাতিয়ে নেওয়াকে ফিশিং বলে।

৯. সকল অ্যাপ্লিকেশন আপডেট রাখুন

আপনার ফোনের অ্যাপ্লিকেশানের বিভিন্ন সময় আপডেট আসতেই থাকে। স্মার্টফোনের সব সফটওয়্যারের যে আপডেট আসে তা সময় মত ইনস্টল করে নিন।

পুরনো সংস্করণ হ্যাকারদের আক্রমণের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনো নিরাপদ ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে আপ-টু-ডেট থাকার চেষ্টা করুন।

আপনার স্মার্টফোনে ইনস্টল করা অ্যাপসগুলো নিয়মিত আপডেট করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি, আপনি অটো আপডেট চালু করে রাখেন।

আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন স্মার্ট ফোন বা অ্যাপ ব্যাবহারের ক্ষেত্রে কি ধরনের সাবধানতা মেনে চলা উচিৎ। এভাবেই মাত্র কয়েকটি ধাপের সতর্কতার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবার, আপনার অফিস, এবং আপনার দেশকে সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।

নিচের ভিডিওতে আপনি নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা জানতে পারবেন

নিরাপদ থাকতে স্মার্টফোন ও অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা: এই তথ্যটি কোনো প্রকার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় বরং জনগণের কল্যাণে বহুল প্রচারের লক্ষ্যে অধ্যয়ন ডট কম এর পাঠকদের সুবিদার্থে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সরাসরি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এর সূত্র থেকে সংগৃহিত। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকলে রিমুভ করার অনুরোধ করতে পারেন: OdhayonOnline@gmail.com অথবা সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: এই কনটেন্ট কপি করা যাবেনা! অন্য কোনো উপায়ে কপি করা থেকে বিরত থাকুন!!!