এর আগে নিজেদের প্রতিবেশীদের তো তোমরা খুঁজে বের করেছ। কিন্তু আরেকটু খোঁজ করলেই দেখবে, যে তোমাদের আশপাশে আরও অনেক প্রতিবেশী ছিল যারা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে। সেই হারিয়ে যাওয়া প্রতিবেশীদের খুঁজে বের করাই আমাদের এবারের কাজ—
প্রথম সেশন
হারিয়ে গেছে যারা আচ্ছা এমন কি কখনো হয়েছে যে তোমার পাশের বাসার কোনো বন্ধু বাসা পালটে অন্য কোনো শহরে চলে গিয়েছে, যার সঙ্গে আর কোনোদিন তোমার দেখা হবে না? ভাবতেই কষ্ট লাগছে না? এখন ধরো, ‘ঠিক পাশের বাসায়’ না হলেও, আমাদের আশপাশে এমন অনেক প্রতিবেশীই হয়তো ছিল যারা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে।
প্রতিবেশী বলতে যে শুধু আমরা মানুষকে বুঝব না, তা তো আগেই জেনেছ। তোমরা নিজেরাই তো এর আগে (শিখন অভিজ্ঞতা ‘আমাদের যারা প্রতিবেশী’) তোমাদের আশপাশের প্রতিবেশীদের খুঁজে বের করেছ। হারিয়ে গেছে যারা।
আগের পৃষ্ঠায় একটা গোলাপি মাথাওয়ালা হাঁসের ছবি দেখতে পাচ্ছ? একসময় বাংলাদেশ, ভারত এই দেশগুলোতে দেখা যেত অদ্ভুত সুন্দর এই পাখি। গত কয়েক দশকে একে আর কোথাও দেখা যায়নি, ধারণা করা হয় এই পাখি চিরতরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
হারিয়ে গেছে যারা
এবার তোমাদের কাজ হলো সেই সব প্রতিবেশীদের সন্ধান করা যারা একসময় তোমাদের এলাকায়, বাসাবাড়ির আশপাশেই ছিল; কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। হতে পারে সেটা এমন কোনো গাছ, যার ফুল তোমরা কখনো দেখোই নি! আবার হতে পারে কোনো অদ্ভুত পোকা, ছোট্ট কোনো পাখি, সাপ, শিয়াল কিংবা বনবিড়াল! হারিয়ে গেছে যারা।
যেহেতু এই প্রতিবেশীরা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে, তোমরা নিশ্চয়ই এদেরকে কখনো দেখোই নি! এখন এদের সম্পর্কে কীভাবে জানা যায় বলো তো? ঠিক বলেছ, তোমাদের চেয়ে যারা বয়সে বড় তারা হয়তো এদের অনেককেই দেখেছেন। তোমাদের বাসায় যাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিরা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করতে পারো। হারিয়ে গেছে যারা।
এমনকি তোমাদের বাবা-মা, শিক্ষক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাইকেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো এমন কোনো জীবের কথা তারা বলতে পারে কি না, যাদের একটা সময়ে তোমাদের এলাকায় দেখা যেত কিন্তু এখন আর যায় না। সেশন শুরুর আগেই কিংবা সেশন চলাকালীন এরকম বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে কী জানতে পারলে তা নিচে টুকে রাখো-
হারিয়ে যাওয়া জীবের নাম | হারিয়ে যাওয়া জীবের বর্ণনা | কত দিন আগে দেখা যেত | যার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছ |
হারিয়ে যাওয়া জীবের নাম | হারিয়ে যাওয়া জীবের বর্ণনা | কত দিন আগে থেকে দেখা যেত | যার কাছ |
বিলুপ্ত জীবের নাম: | |
খাদ্যাভ্যাস, আবাস, ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য | হারিয়ে যাওয়ার কারণ (পরিবেশগত কিংবা অন্য যেকোনো কারণ) |
দ্বিতীয় সেশন
আজকের সেশনে তোমার দলের বাকিদের সঙ্গে যে তথ্যগুলো পেয়েছ, তা শেয়ার করো। তুমি যে জীবটি বেছে নিয়েছিলে সেটি হারিয়ে যাওয়ার কী কী কারণ তুমি খুঁজে বের করেছ, সেগুলোও তাদের জানাও। তোমার বন্ধুদের পাওয়া তথ্যগুলোও তোমার কাজে লাগতে পারে। হারিয়ে গেছে যারা।
এবার তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ‘জীবের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং টেকসই পরিবেশ অধ্যায়টা দলের সবাই মিলে ভালো করে পড়ে নাও। শিক্ষকের সহায়তায় ক্লাসে অন্যান্য দলের সবার সঙ্গে আলোচনায় যোগ দাও ।
এখন আবার তোমার করা আগের ছকের দিকে তাকাও। পরিবেশের কোন ধরনের পরিবর্তনের কারণে কোনো জীব চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে সে সম্পর্কে তোমরা তো এখন জেনেছ। এবার দেখো তো, তোমার বেছে নেওয়া জীবটির বিলুপ্তির যে কারণগুলো তুমি খুঁজে বের করেছিলে তার সঙ্গে এরকম কোন কোন পরিবেশগত ও মানুষের সৃষ্টি বিপর্যয়ের সম্পর্ক রয়েছে?
তৃতীয় সেশন
অতীতে বিভিন্ন সময়ে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের বিলুপ্তির কারণ তো জানা গেল। এখন একটু ভেবে দেখো, এই মুহূর্তেও তো অনেক পরিবেশগত কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। তোমার এলাকায় আগে যত জঙ্গল ছিল এখন কী আর তেমন আছে? আবার তুমি আরও ছোট থাকতে এই এলাকায় যত ঝোপঝাড়, ডোবা, পুকুর দেখেছ তা কি বছরের পর বছর একই রকম আছে নাকি পালটে যাচ্ছে? হারিয়ে গেছে যারা।
যখন একটা পুরোনো বাড়ি ভেঙে, জঙ্গল পরিষ্কার করে বহুতল ভবন গড়ে ওঠে তখনও তো ওই জঙ্গলে বাস করা নানা জাতের পোকা, পাখি বা ইঁদুরের বাসস্থানের সংকট তৈরি হয়, তাই না? হারিয়ে গেছে যারা।
আগের হারিয়ে যাওয়া জীবদের তো চাইলেও আর হয়তো কখনো ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু এখন তোমাদের যারা প্রতিবেশী, তাদের যাতে এরকম বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি না হয় তা দেখা কিন্তু তোমাদেরও দায়িত্ব! এবার একটু ভেবে দেখো তো, এই মুহূর্তে তোমার আশপাশের পরিবেশে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, তাতে অদূর পরিবেশে কোন কোন উদ্ভিদ বা প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে? একটু ভেবে নিচের ছকে নোট করো-
হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে এমন জীব | ঝুঁকিতে থাকার কারণ |
যেহেতু তোমরা জেনেই গেছ কোনো কোনো কারণে এই জীবসমূহের হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে, তোমরা চাইলে এখন তাদের এই বিপদের ঝুঁকি যাতে কমিয়ে আনা যায় সেজন্য কাজ করতে
পারো। আবার অন্যদেরকেও সচেতন করতে পারো। তোমার দলের সঙ্গে বসে কিছু পরিকল্পনা দাঁড় করাও কীভাবে এই প্রতিবেশীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়। আলোচনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এমন তিনটি আইডিয়া নিচে নোট করে রাখো—
১……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
২……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
৩…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এবার দলের সবাই মিলে কিছু সচেতনতামূলক পোস্টার বা লিফলেট নকশা করতে পারো, যাতে নিজেদের আইডিয়াগুলো অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়া যায়। সব দলের পোস্টারগুলো শ্রেণিকক্ষের ভেতরে বা সামনের দেয়ালে টাঙিয়ে দিতে পারো যাতে স্কুলের অন্যরাও এই বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন : রঙের দুনিয়া