এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে—
- দ্রবণ, দ্রাবক এবং দ্রব
- পানি ও পানি চক্র
- জলীয় দ্রবণ
- পানি বিহীন দ্রবণ
- তরল ও গ্যাসের দ্রবণ
- কঠিন ও কঠিন পদার্থের দ্রবণ
- কলয়েড ও সাসপেনশন
- মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি
তোমরা সবাই মিশ্রণ শব্দটার সঙ্গে পরিচিত, দুই বা ততধিক পদার্থ একটি অপরটির সঙ্গে মিশে থাকাকে মিশ্রণ বলে। যেমন: চিনির শরবত হচ্ছে চিনি এবং পানির মিশ্রণ, পাঁচ ফোড়ন হচ্ছে পাঁচ রকম মশলার মিশ্রণ, বাতাস হচ্ছে মূলত অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের মিশ্রণ কিংবা পিতল হচ্ছে তামা এবং দস্তার মিশ্রণ। দেখতেই পাচ্ছ কঠিন, তরল কিংবা গ্যাস সব কিছুরই মিশ্রণ হওয়া সম্ভব। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
মিশ্রণ সাধারণত দুই প্রকার: সমসত্ব ও অসমসত্ব।
১. সমসত্ব মিশ্রণে কণাগুলো পরস্পরের সঙ্গে সুষমভাবে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে অর্থাৎ কোথাও বেশি বা কোথাও কম সংখ্যক কণা থাকে না। বাতাস একটি সমসত্ব মিশ্রণের উদাহরণ ।
২. অসমসত্ব মিশ্রণে কণাগুলো সুষমভাবে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে না। কোথাও বেশি বা কোথাও কমসংখ্যক কণা থাকে এবং একে অপরের থেকে আলাদা থাকে, তাই মিশ্রণের কণাগুলোকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। যেমন, পাঁচফোড়ন।
এই অধ্যায়ে আমরা দ্রবণ, সাসপেনশন এবং কলয়েড নামের তিনটি বিশেষ ধরনের মিশ্রণের কথা জানব।
দ্রবণ, দ্রাবক এবং দ্রব
যখন তুমি পানিতে চিনির একটি দানা ছেড়ে দাও, সেটা সেখানে মিশে যায়। দানাটিতে থাকা চিনির ক্ষুদ্র কণাগুলোকে পানি আলাদা করে ফেলে, তারপর চিনির কণাগুলো পুরো পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বলে থাকি চিনি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে গেছে এবং পানি ও চিনি মিলে একটা দ্রবণ তৈরি করেছে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ
যখন দুটি বস্তু পরস্পরের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে সমসত্ব মিশ্রণ তৈরি করে তখন একটি দ্রবণ তৈরি হয়। যে বস্তু অন্যবস্তুকে দ্রবীভূত করে, অর্থাৎ যেটি পরিমাণে বেশি, তাকে দ্রাবক বলে এবং যে বস্তু অন্যবস্তুর মধ্যে দ্রবীভূত হয়, অর্থাৎ যেটি পরিমাণে কম, তাকে দ্রব বলে। (এখানে, পানি হলো দ্রাবক এবং চিনি
হলো দ্রব)। কঠিন, তরল এবং গ্যাস এই তিনটি অবস্থার সবগুলোই পরস্পরের সঙ্গে মিশে দ্রবণ তৈরি করতে পারে। দ্রবণের গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো, এর উপাদানগুলো নিজেদের মধ্যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না, কাজেই ভৌত পদ্ধতিতেই সেগুলোকে আলাদা করা সম্ভব। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।

তোমরা কি জানো সাগর হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল দ্রবণ? সাগর পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭০% জায়গা দখল করে আছে। সাগরে পানি হলো দ্রাবক, কিন্তু তুমি সাগরেরে পানি পান করতে পারবে না। এর কারণ হলো, সাগরের পানিতে অনেক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ দ্রব হিসেবে দ্রবীভূত রয়েছে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
পানি ও পানি চক্র
পানি সাধারণত তরল অবস্থায় থাকে, কিন্তু এটিকে কঠিন এবং গ্যাসীয় অবস্থায় ও পাওয়া যায়। তোমরা জানো, পানির কঠিন রূপকে বরফ বলে আর বাষ্প হলো পানির গ্যাসীয় অবস্থা।


০°C হলো বরফের গলনাঙ্ক, একইসঙ্গে এটি পানির হিমাঙ্ক অর্থাৎ এই তাপমাত্রায় পানি বরফে পরিণত হয়! পানির স্ফুটনাঙ্ক হলো ১০০°C অর্থাৎ পানিকে ১০০° তাপমাত্রায় ফুটালে এটি সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
গলন, স্ফুটন, বাষ্পীভবন এবং ঘনীভবন পানিচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, অর্থাৎ এই চক্রটি বার বার ঘটতে থাকে। সাধারণ তাপমাত্রাতেই প্রতিদিন সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বাষ্পীভূত হয় ।
তা সত্ত্বেও সাগরের পানির উচ্চতা কিন্তু কমে যায় না। তার কারণ হলো, বাষ্পীভূত পানি ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়, সেই বৃষ্টির পানি নদীতে প্রবাহিত হয়ে আবার সাগরে এসে পড়ে। এভাবেই ক্রমাগত পানিচক্রটি চলতে থাকে।
জলীয় দ্রবণ
মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ
চিনি ও পানির দ্রবণের মতো যেখানে পানিকে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে জলীয় দ্রবণ বলে। কিন্তু সব দ্রবণেই পানিকে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। পানি ছাড়াও অ্যাসিটোন, অ্যালকোহল, ইথার এরকম বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থকেও দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
দ্রবণের ঘনমাত্রা: লঘু ও গাঢ় দ্রবণ
দ্রবণের ভেতর কতটুকু দ্রব দ্রবীভূত আছে সেটি দিয়ে দ্রবণের ঘনমাত্রা নির্ধারিত হয়। বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা বিভিন্ন ঘনমাত্রার লঘু ও গাঢ় দ্রবণ তৈরি করে দেখতে পারি।
বিভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণ
তুমি দুইটি পরিষ্কার গ্লাসে এক কাপ করে খাওয়ার পানি নাও। এবারে প্রথম গ্লাসে এক চামচ, দ্বিতীয় গ্লাসে তিন চামচ চিনি দিয়ে খুব ভালো করে নেড়ে নাও যেন চিনিটুকু পুরোপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায়। এখন দুটো গ্লাস থেকেই এক চামচ চিনির দ্রবণ নিয়ে তার মিষ্টতার পরিমাপ করো। (সাবধানতা: এক্ষেত্রে চিনির দ্রবণ আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
কিন্তু অধিকাংশ রাসায়নিক পদার্থই আমাদের শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। সুতরাং, ভালোভাবে না জেনে কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ও দ্রবণ খাওয়া কিংবা পান করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।)
তুমি দেখবে যে গ্লাসে ৩ চামচ চিনি মেশানো হয়েছিল সেটি খেতে বেশি মিষ্টি হবে। দুটি দ্রবণের আয়তন এক হলেও, ১ চামচ দ্রব (চিনি) যোগ করা দ্রবণটি হলো লঘু এবং তিন চামচ চিনি যোগ করা দ্রবণটি হলো তুলনামূলক গাঢ় দ্রবণ।
আমরা এবারে ভিন্ন একটা পরীক্ষা করতে পারি। ধরা যাক দুটি গ্লাসেই এক কাপ করে পানির মধ্যে ১ চামচ করে চিনি আছে, তাহলে দুটো দ্রবণের ঘনত্বই সমান। এবার যদি একটি গ্লাসে আরও এক কাপ পানি ঢেলে ভালো করে নেড়ে দিই তাহলে দেখবে যেটিতে তুলনামূলক কম পানি থাকবে সেটি তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি হবে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
এই ক্ষেত্রেও গাঢ় এবং লঘু দ্রবণ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, এবার দ্রবের পরিমাণ সমান রেখে দ্রাবকের পরিমাণ বাড়ানো এবং কমানো হয়েছে।
তাহলে তোমরা দেখেছ যে, যেরকম দ্রবণে দ্রবের পরিমাণ কম ও বেশি করে বিভিন্ন ঘনমাত্রার দ্রবণ তৈরি করা যায়, ঠিক সেরকম দ্রবের পরিমাণ ঠিক রেখে দ্রাবকের পরিমাণ বেশি ও কম করেও যথাক্রমে লঘু ও গাঢ় দ্রবণ প্রস্তুত করা যায়।
এখানে আমরা মিষ্টত্ব পরিমাপ করে দ্রবণের লঘুত্ব এবং ঘনত্ব অনুমান করেছি। আমরা যদি চিনির পরিবর্তে গাঢ় নীল রংয়ের তুঁতে কিংবা কপার সালফেট ব্যবহার করে একই ভাবে ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ তৈরি করতাম, তাহলে দেখতাম লঘু দ্রবণের রংটি হালকা এবং গাঢ় দ্রবণের রংটিও গাঢ়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ
সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ বিষয় দুটি বোঝার জন্য তুমি নিচের পরীক্ষাটি করে দেখতে পারো। এ পরীক্ষাটি করার জন্য তুমি আগের মতো একটি গ্লাসে এক কাপ পানি নাও।
এখন গ্লাসের পানিতে অল্প অল্প করে লবণ যোগ করে ঠিকমততো নাড়তে থাকো। প্রথমদিকে লবণ সম্পূর্ণরূপে মিশে যেতে
থাকলেও একসময় দেখবে খুব ভালোভাবে নেড়ে দিলেও সেটি আর মিশছে না বা দ্রবীভূত হচ্ছে না।
লবণ দ্রবীভূত হতে হতে একসময় কেন আর সেটি দ্রবীভূত হচ্ছেনা? তার কারণ হলো, লবণ দ্রবীভূত হতে হতে একসময় দ্রাবকের ধারণ ক্ষমতার পুরোটিই দ্রব দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় দ্রাবক (পানি) আর কোনো দ্রব (লবণ) দ্রবীভূত করতে পারছে না। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকের মধ্যে যদি দ্রাবকের ধারণ ক্ষমতার পুরোটাই দ্রব দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে ঐ দ্রবণকে সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দ্রবীভূত দ্রবের পরিমাণ যদি দ্রাবকের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম হয় তাহলে তাকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে ।
উপরের পরীক্ষায়, লবণের তলানি পড়ার আগ পর্যন্ত দ্রবণটি ছিল অসম্পৃক্ত। যখন দ্রবণটি সম্পৃক্ত হয়ে যায়, তখন সেটি দ্রবকে আর দ্রবীভূত করতে পারে না বলে সেগুলো তলানি হিসেবে জমা হয়। যতই নাড়াচাড়া করো সেটি আর কোনো দ্রবকে দ্রবীভূত করতে পারে না। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
এখানে উল্লেখ্য যে একটি সম্পৃক্ত দ্রবণের তাপমাত্রা বাড়ালে সেটি কিন্তু আবার বাড়তি দ্রবকে দ্রবীভূত করতে পারে, ইচ্ছে করলেই তোমরা এই বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে পারো। তোমরা কি এর কারণ অনুমান করতে পারবে?
সার্বজনীন দ্রাবক
ইতোমধ্যে তোমরা দ্রাবক সম্পর্কে জেনেছ। সার্বজনীন দ্রাবক বলতে এমন একটি দ্রাবককে বোঝায় যেটি সকল প্রকার পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। আদৌ কি এমন দ্রাবক পাওয়া সম্ভব? নিঃসন্দেহে না। আমাদের পরিচিত দ্রাবকগুলোর মধ্যে পানিরই অন্যসব দ্রাবকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশিসংখ্যক পদার্থ দ্রবীভূত করার ক্ষমতা রয়েছে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
তাই পানিই এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত একমাত্র সার্বজনীন দ্রাবক। পানি অনেক ধরনের জৈব উপাদান (যেমন স্পিরিট, অ্যাসিটিক অ্যাসিড) এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সিলিকা এরকম কিছু ব্যতীত অনেক অজৈব উপাদানকে দ্রবীভূত করতে পারে। এমনকি এটি অনেক গ্যাসকেও দ্রবীভূত করতে পারে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
পানিবিহীন দ্রবণ
একটু আগেই তোমরা জেনেছ যে পানি ছাড়া অন্য কিছু দিয়েও দ্রবণ হতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, গৃহস্থালির অনেক কিছুই এরকম দ্রবণ। এখানে কিছু দ্রবণের কথা বলা হলো, যেখানে দ্রাবক হিসেবে পানি ব্যবহার করা হয়নি।
টিংচার আয়োডিন একটি জীবাণুনাশক, কাটা বা ক্ষতস্থানের ওপরে প্রলেপ আকারে দেওয়ার জন্য এটি প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্সে থাকে। আয়োডিন জীবাণুনাশক হলেও এটি সরাসরি ব্যবহার করা যায়না। আয়োডিন কঠিন পদার্থ হওয়ায় এটিকে ঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় না। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
সে জন্য আয়োডিনকে অ্যালকোহলের মধ্যে দ্রবীভূত করে ব্যবহার করা হয়। অ্যালকোহল পানির তুলনায় আয়োডিনকে অনেক ভালোভাবে দ্রবীভূত করতে পারে বলে এখানে দ্রাবক হিসেবে অ্যালকোহলকে ব্যবহার করা হয়। দ্রবণটি যখন কাটা স্থানে লাগানো হয়, তখন এটি সমস্ত জায়গায় সুষমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যালকোহল

বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং আয়োডিন থেকে যায়, যা জীবাণুনাশকের কাজ করে। দ্রাবককে এভাবে প্রায়ই দ্রবকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বার্নিশকে দ্রবণ হিসেবে কাঠের উপরে রং করা হয়। দ্রাবক স্পিরিট বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গেলে কাঠের উপরে দ্রবের একধরনের কঠিন আবরণ থেকে যায়।
কলমের কালি হলো বিভিন্ন দ্রাবকের খুব উৎকৃষ্ট একটি মিশ্রণ। এসব দ্রাবক একই সঙ্গে কালিকে চলাচলে সক্ষম রাখে এবং সহজে শুকিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও প্রদান করে।
তরল ও গ্যাসের দ্রবণ
এখন কিছু দ্রবণ লক্ষ করা যাক, যেখানে দ্রাবক হলো তরল এবং দ্রব হলো গ্যাসীয় পদার্থ। কোমল পানীয় আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। কোমল পানিয়ের বোতল খোলার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসীয় পদার্থটি বুদবুদ আকারে শব্দ করতে করতে বের হয়ে যায়। এই গ্যাসটি হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড যেটিকে তরল অবস্থায় কোমল পানীয়তে দ্রবীভূত করা থাকে। সুতরাং, আমরা বলতে পারি, কোমল পানীয় হলো তরল-গ্যাস দ্রবণের একটি উদাহরণ ।
কঠিন ও কঠিন পদার্থের দ্রবণ
কঠিন পদার্থ এবং তরল পদার্থ দিয়ে যেরকম দ্রবণ তৈরি করা সম্ভব সেরকম কঠিন পদার্থের সঙ্গে কঠিন পদার্থের দ্রবণও হওয়া সম্ভব। তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছ পিতল হচ্ছে তামা এবং দস্তার দ্রবণ, ঠিক সেরকম ব্রোঞ্জ হচ্ছে তামা এবং টিনের দ্রবণ। রকেট কিংবা প্লেন তৈরি করার জন্য অ্যালুমিনিয়াম, নিকেল কিংবা টাইটেনিয়ামের দ্রবণ দিয়ে নানা ধরনের সংকর (alloy) ধাতু ব্যবহার করা হয়।
দ্রবণ থেকে কেলাস প্রস্তুত
তোমরা কি স্ফটিক বা কেলাসের নাম শুনেছ? কেলাস হলো কোনো একটি কঠিন পদার্থ যেখানে এর অণুগুলো সুনির্দিষ্ট ভাবে সাজানো থাকে। কেলাসের উদাহরণ হচ্ছে টেবিল লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড), তুঁতে বা কপার সালফেট। তোমরা জানো তুঁতে বা কপার সালফেট হচ্ছে নীল বর্ণের। এই নীল বর্ণের

কপার সালফেট পানিতে খুবই দ্রবণীয়। কপার সালফেটের খুব চমৎকার নীল রংয়ের কেলাস তৈরি করা যায়। তার জন্য তোমাকে প্রথমে বাজার থেকে একটুখানি তুঁতে সংগ্রহ করতে হবে। মনে রেখো তুঁতে কিন্তু গাছপালা কিংবা প্রাণীর জন্য বিষাক্ত, কাজেই সেটি কিংবা তার দ্রবণ যেন কারও মুখে চলে না যায়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
কেলাস তৈরি করার জন্য তোমাকে তোমার কোনো শিক্ষক বা অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে কোনো পাত্রে উচ্চ তাপমাত্রার পানিতে কপার সালফেটের একটি সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর এই সম্পৃক্ত দ্রবণটি নিরিবিলি কোথাও রেখে দিতে হবে। কয়েক দিন যদি দ্রবণটিকে কোনো রকম নাড়াচাড়া না করে রেখে দিতে পারো, তখন দেখবে সেখানে কপার সালফেটের কেলাস তৈরি হয়েছে।
সাসপেনশন
যেসব মিশ্রণ কিছুসময় রেখে দিলে তার উপাদানগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে পড়ে সেসব মিশ্রণকে সাসপেনশন বলে। চক পাউডার ও পানির মিশ্রণ সাসপেনশনের একটি উদাহরণ। এটি দেখতে দুধের মতো। দ্রবণের মতো সাসপেনশনে উপাদানগুলো নিজ থেকে পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায় না।
যেমন, চক পাউডার মিশ্রিত পানি যদি নাড়ানো বা ঝাঁকানো যায়, তাহলেই এটা পুরো পানিতে মিশ্রিত হয়। আবার ঝাঁকানো বা নাড়ানো বন্ধ করলে ধীরে ধীরে তা আবার নিচে থিতিয়ে পড়ে পানি থেকে আলাদা হয়ে যায়। তোমরা নিশ্চয়ই ডোবা বা নদীর ঘোলা পানির বেলায় একই ব্যাপার ঘটতে দেখেছ। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
একটি বোতলে ঘোলা পানি না নাড়িয়ে রেখে দিলে তলায় কাদা মাটির কণা থিতিয়ে পড়ে। তোমরা ইচ্ছা করলে এক বোতল পানিতে বালি যোগ করেও সাসপেনশন তৈরি করতে পারবে। এটিকে ঝাঁকিয়ে কণাগুলোর নড়াচড়া লক্ষ করো। তারপর এরপর এটিকে স্থির অবস্থায় রেখে দিলে অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই বালির কণাগুলো বোতলের তলায় গিয়ে জমা হবে।
কিছু কিছু সূক্ষ্মকণা অনেক দীর্ঘসময় ধরেও সাসপেনশন আকারে থাকে। সাসপেনশনের বৈশিষ্ট্য হলো, ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাসপেনশন থেকে কণাগুলোকে সহজেই আলাদা করা যায়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ কিছু সসের বা ওষুধের বোতলের গায়ে লিখা থাকে ‘ব্যবহারের পূর্বে ঝাকিয়ে নিন’। তার কারণ সেগুলো আসলে সাসপেনশন জাতীয় মিশ্ৰণ !
কলয়েড
আমরা সাসপেনশনের বেলায় দেখেছি যে ভাসমান দ্রবের কণাগুলো কিছুক্ষণ স্থির রাখা হলে সেগুলো পাত্রের তলায় জমা হয়। তোমরা হয়তো এটাও লক্ষ করেছ যে কণাগুলো যদি খুব সূক্ষ্ম হয় তাহলে সেগুলো নিচে থিতিয়ে পড়তে সময় বেশি নেয়। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, কণাগুলো কি এমন সূক্ষ্ম হতে পারে যে স্থির অবস্থায় রেখে দিলেও তা কখনো তলানি হিসেবে জমা হবে না? আসলেই সেরকম হতে পারে এবং এধরনের মিশ্রণকে কলয়েড বলা হয়।
অর্থাৎ আমরা বলতে পারি কলয়েড হলো এমন প্রকৃতির মিশ্রণ যেখানে, ক্রমাগত না নাড়িয়ে বা ঝাঁকিয়েই মিশ্রিত পদার্থের কণাগুলোকে সবসময় ভাসমান বা মিশ্রিত অবস্থায় রাখা যাবে। দীর্ঘসময় স্থির রাখলেও সেগুলো আলাদা হয়ে নিচে থিতিয়ে পড়বে না। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।

কলয়েডের উপাদানগুলো একটি অপরটির মধ্যে দ্রবীভূত না হলেও সেগুলো পরস্পর পরিপূর্ণভাবে মিশে থাকে। আমাদের পরিচিত দুধ হচ্ছে কলয়েডের একটি উদাহরণ যেটা পানি ও চর্বির সূক্ষ্ম কণা দিয়ে তৈরি। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
এবারে আমরা কলয়েড এবং একটি সত্যিকারের দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য করার একটি পরীক্ষার কথা বলতে পারি। যখন আলো একটি সত্যিকারের দ্রবণের মধ্য দিয়ে যায়, তখন আলোটি দৃশ্যমান হবে না, কিন্তু যখন কলয়েডের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন আলোর রশ্মি কলয়েডের সূক্ষ্ম কণাগুলো থেকে বিচ্ছুরিত হবে বলে মিশ্রণের ভিতর সেটা দেখা যাবে।
কুয়াশা হলো দুধের মতো কলয়েডের আরও একটি উদাহরণ, যেখানে পানির ছোট ছোট কণা বাতাসের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকে। আবার, তরল কীটনাশক ‘অ্যারোসল’ হলো এক প্রকারের কলয়েড, যেখানে পোকামাকড় প্রতিরোধী তরল পদার্থ বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে।
কলয়েডের কণাগুলোর আকার ১ মাইক্রোমিটার (১ মিলিমিটারের হাজার ভাগের ১ ভাগ) থেকে ছোট হতে হয়, তার থেকে বেশি হলে সেটি সাসপেনশনে পরিণত হয়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
মিশ্রণের পৃথকীকরণ
মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি
একটি মিশ্রণে কোনো একটি বিশুদ্ধ পদার্থের পাশাপাশি কোনো ধরনের অপদ্রব্য বা দূষক মিশে থাকতে পারে এবং মাঝে মাঝেই আমাদের সেই বিশুদ্ধ বস্তুটি দূষক থেকে আলাদা করতে হয়। আবার কখনো কখনো মিশ্রণের একটি নির্দিষ্ট উপাদান আলাদা করতে হয়।
এই পৃথকীকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন, বাষ্পীকরণ, কেলাসন, পাতন ইত্যাদি। এসব পদ্ধতিকে কীভাবে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
ছাঁকন
দ্রবণের ভেতর থেকে অদ্রবণীয় কঠিন পদার্থের কণাগুলোকে আলাদা করার জন্য ছাঁকন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আমরা সবাই ছাঁকন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত, চা থেকে চা পাতা আলাদা করার জন্য আমরা ছাঁকনি ব্যবহার করে থাকি। যদি আরও সূক্ষ্ম কিছু আলাদা করতে হয়, তাহলে আমরা ফিল্টার কাগজ ব্যবহার করে থাকি।
এ পদ্ধতিতে একটি ফানেলে ছাঁকন কাগজ (filter paper) বসিয়ে দ্রবণটি ঢেলে পানি বা তরল দ্রাবককে কাগজের মধ্য দিয়ে চলে যেতে দেওয়া হয় (নিচের চিত্রটি দেখো)। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
বিভিন্ন আকারের কঠিন দূষক (impurity) দ্রবণ থেকে আলাদা করার জন্যে বিভিন্ন রকমের ছাঁকন কাগজ ব্যবহার করা হয়। দূষকের আকারের উপর নির্ভর করে ছাঁকন কাগজের ছিদ্রের আকার ছোট অথবা বড় হয়। এমনকি আমাদের বাসাবাড়িতেও বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন আকারের ছিদ্রের ছাঁকন পদ্ধতি আমরা ব্যবহার করে থাকি।

দ্রবণ থেকে একটি দ্রবকে আলাদা করার একটি প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে বাষ্পীভবন। বিশুদ্ধ পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাষ্পীভূত হয়, তবে সেখানে অন্য কিছু দ্রবীভূত থাকলে বাষ্পীভবনের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
যদি এই দ্রবণে কোনো অপদ্রব্য থাকে তাহলে প্রথমে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে সেগুলো আলাদা করে নেয়া হয়, তারপর তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্পীভূত করে বিশুদ্ধ দ্রবকে আলাদা করা হয়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
তবে তাপ প্রয়োগ না করলেও স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই পানি বাষ্পীভূত হয়। একটি খোলা পাত্রে পানি রাখা হলে সেটি একসময় শুকিয়ে যায়। পানির তলটি যত বিস্তৃত হবে, কিংবা পানির ওপর বাতাসের প্রবাহ যত বেশি হবে, তত দ্রুত পানি বাষ্পীভূত হয়।
তোমরা সমসত্ব মিশ্রণের কথা পড়েছ। বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তোমরা প্রমাণ করতে পারবে যে দ্রবণ একটি সমসত্ব মিশ্রণ। খানিকটা পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে লবণের দ্রবণ তৈরি করে নাও। তারপর দ্রবণটি দুটি কিংবা তিনটি বাটিতে সমানভাগে ভাগ করে নাও। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
এবারে বাটির দ্রবণে তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্পীভূত করে নিলে তুমি প্রত্যেকটা বাটিতেই সমান পরিমাণ লবণ দেখতে পাবে। তুমি ইচ্ছে করলে খালি বাটি এবং লবণসহ বাটি ওজন করে তাদের পার্থক্য থেকে লবণের নিখুঁত পরিমাণ বের করে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারো। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকী করণ।
ডিক্যান্টেশন (Decantation) পৃথকীকরণ পদ্ধতি

ডিক্যান্টেশন পদ্ধতিতে পরস্পর অমিশ্রণীয় তরল অথবা সাসপেনশনের মতো তরল-কঠিন মিশ্ৰণ আলাদা করা যায়। পানি থেকে তেল আলাদা করার পদ্ধতি ডিক্যান্টেশনের একটি উদাহরণ
আরেকটি উদাহরণ হলো বালি এবং জলের মিশ্রণের পৃথকীকরণ। নিচের উদাহরণ দুটি থেকে তোমরা পদ্ধতিটি সহজে বুঝতে পারবে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
১. পানি ও তেলের মতোযেসব তরল পরস্পরের সঙ্গে মিশ্রিত হয়না সেগুলোর মিশ্রণ রেখে দিলে সেগুলো দুই স্তরে আলাদা হয়ে পড়ে। তেল পানির চেয়ে হালকা বলে সেখানে পানি নিচে এবং তেল ওপরে ভাসমান অবস্থায় থাকে ৷


ল্যাবরেটরিতে পৃথকীকরণ ফানেলের সাহায্যে নিচ থেকে পানির স্তরটি অন্য পাত্রে সরিয়ে ফেলা যায়, তখন সেখানে শুধু তেলের স্তরটি থেকে যাবে এবং পরবর্তীতে তেলকে ভিন্ন আরেকটি পাত্রে সংগ্রহ করা যাবে
তোমরা পানি থেকে তেল আলাদা করতে চাইলে খুব সাবধানে উপর থেকে তেলটুকু কোনো পাত্রে ঢেলে নিতে পারো।
২. যদি তুমি পানি ও বালির মিশ্রণ ডিক্যান্টেশন পদ্ধতিতে আলাদা করতে চাও, তাহলে প্রথমে বালিকে নিচে থিতিয়ে পড়তে দাও।
তারপর উপরের পরিষ্কার পানি খুব সাবধানে অন্য একটি পাত্রে কাচ বা অন্য কোনো একটি দণ্ডের গা বেয়ে ঢেলে নাও যেন তলায় জমে থাকা বালির অংশ বা তলানি নড়ে ওলটপালট না হয়ে যায়। যখন উপরের সমস্ত পানি পড়ে যাবে, তখন পাত্রের তলায় শুধু বালি থেকে যাবে।

কেলাসন
তোমরা কেলাস তৈরি করার বিষয়টি এর মধ্যে জেনে গেছ। যেহেতু একটি দ্রবণের শুধু বিশুদ্ধ দ্রবটিই কেলাসে পরিণত হয়, তাই কঠিন পদার্থের বিশুদ্ধকরণের একটি পদ্ধতি হলো কেলাসন ।
এই পদ্ধতিতে প্রথমে অদ্রবীভূত পদার্থকে ছাঁকন পদ্ধতিতে আলাদা করা হয়। একটি খোলা পাত্রে দ্রবণকে ফুটানো হয়, তখন দ্রাবক বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে এবং দ্রবগুলো আলাদা হওয়া শুরু করে। যখন দ্রবণকে ঠান্ডা করা হয়, তখন পাত্রের গায়ে দ্রব কণাগুলো ধীরে ধীরে কেলাস হিসেবে জমাট বাঁধতে শুরু করে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
উৎপন্ন দ্রবের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারপর তাদেরকে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। কত তাড়াতাড়ি দ্রবণের তাপমাত্রা কমানো হচ্ছে তার উপর কেলাসের আকার নির্ভর করে। দ্রুত তাপমাত্রা কমালে কেলাসের আকার অনেক ছোট হয়, বড় কেলাস ধীরে ধীরে শীতল করার মাধ্যমে পাওযা যায়। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
পাতন (Distillation)
ভালোভাবে পরিশোধিত ট্যাপের বা নলকূপের পানি পরিষ্কার অবস্থায় পাওয়া যায় যেখানে ভাসমান বা অদ্রবীভুত কোনো কণা থাকেনা। কিন্তু এটি শতভাগ বিশুদ্ধ নয়। নলকূপ বা ট্যাপের পানিকে যখন ফুটিয়ে শুকিয়ে ফেলা হয় তখন প্রায় সময়েই পাত্রের তলায় সামান্য কিছু কঠিন পদার্থ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ট্যাপ বা নলকূপের পানিতে কিছু রাসায়নিক পদার্থ দ্রবীভূত থাকে যেগুলোকে দ্রবীভূত লবণ বলে। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
পাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে নিচে দেখানো চিত্র অনুযায়ী শতভাগ বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব। পাতন পদ্ধতিতে তরলকে প্রথমে তাপ প্রয়োগ করে বাষ্পীভূত করা হয়, উৎপন্ন বাষ্পকে নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা কোনো কাচনল বা পাইপের মধ্য দিয়ে চালনা করে শীতল করা হয়। শীতলীকৃত বাষ্প তখন ঘনীভূত হয়ে তরল পানিতে পরিণত হয়। উৎপন্ন তরল পানিকে পাতিত পানি বলে।
সমুদ্রের লোনা পানি থেকেও এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব, কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এতে অনেক শক্তির অপচয় হয় বলে এই পদ্ধতিতে সমুদ্রের পানি থেকে খাবার পানি প্রস্তুত করা হয় না। মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।

বাসায় ব্যবহৃত কিছু মিশ্রণ পৃথকীকরণের পদ্ধতি
আমাদের বাসায়, বিশেষ করে রান্নাঘরে অনেক ভাবে আমরা নানা ধরনের মিশ্রণ আলাদা করি। সব রান্নাঘরেই নানা ধরনের ছাঁকনি থাকে। চালুনি দিয়ে খাবারের সূক্ষ্ম এবং বড় দানা আলাদা করা একটি প্রচলিত পদ্ধতি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানি হতে সিদ্ধ ভাত আলাদা করা কিংবা চা থেকে ছাকনির সাহায্যে চা পাতা আলাদা করা নিয়মিত ব্যাপার।
পানি ছাঁকার জন্য আমরা অনেক সময় পাতলা কাপড় ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করি। গ্রামবাংলার রান্নায় লবণ বেশি হয়ে গেলে কাঠকয়লা দিয়ে সেটি শোষণ করে নেওয়ার পদ্ধতিটি যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক। লোহার স্ক্রু আলাদা করার জন্য অনেক স্ক্রু ড্রাইভারের মাথাতে খানিকটা চৌম্বকত্ব থাকে।
তোমরা তোমাদের বাসার নানা ধরনের কাজকর্ম মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করে মিশ্রণের উপাদান আলাদা করার অন্য কোনো পদ্ধতির কথা বলতে পারবে কী? মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ।
অনুশীলনী ?
১। চা কোন ধরনের মিশ্রণ? চা বানানোর পরে এর উপাদানসমূহ কী আলাদা করা সম্ভব? সম্ভব হলে কীভাবে?
২। পানিতে আটা বা ময়দা গুলিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে দেখো, এটাকে কী বলা যায়? দ্রবণ, কলয়েড, নাকি সাসপেনশন? নাকি কোনোটাই না?
আরো পড়ুন : মানব শরীর