ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য আজ মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি পাঠটি আলোচনা করবো। এই পাঠে তোমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের প্রথম অধ্যায় মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি সম্পূর্ণ পড়বে এবং এখানে দেওয়া বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শিখনফল অর্জন করবে।
মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি
শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্য বইয়ের ১ম অধ্যায়ে মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি শীর্ষক পাঠটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। এই পাঠটি অধ্যয়ন করার পর তোমরা নিচের কমেন্ট বক্সে যেকোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারো।
- আরও পড়ুনঃ বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি এবং ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির ২য় ধাপে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
পরিস্থিতি অনুযায়ী যোগাযোগ
নিচে কয়েকটি পরিস্থিতির উল্লেখ আছে। এসব পরিস্থিতিতে কী ধরনের যোগাযোগ হয়, ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে আলোচনা করো এবং ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করো।
পরিস্থিতি-১

রাতের খাওয়া শেষে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে কথা বলছি। সারাদিন কে কী করেছি, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।
পরিস্থিতি ২

মায়ের সঙ্গে ছেঁড়া জুতা সেলাই করাতে গিয়েছি। একজন মুচি রাস্তার মোড়ে বসে আছেন। তাঁর সাথে আমার ও মায়ের কথা হচ্ছে।
পরিস্থিতি ৩

হাসপাতালে অসুস্থ আত্মীয় ভর্তি হয়ে আছেন। বাবার সঙ্গে তাঁকে দেখতে গিয়েছি এবং তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি।
পরিস্থিতি-৪

বাড়ির পাশের দোকানে এসেছি কিছু জিনিসপত্র কিনতে। দোকানদারের সাথে কথা বলছি।
পরিস্থিতি-৫

কয়েকজন বন্ধু স্কুল থেকে বাসায় ফিরছি। একজন অপরিচিত লোক আমাদের কাছে এসে ঠিকানা জানতে চাইলেন।
পরিস্থিতি-৬

কিছুদিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে যেতে পারিনি। শ্রেণি-শিক্ষক বাড়িতে ফোন করে আমার সাথে কথা বলছেন।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিবেচ্য
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত বলে তোমার মনে হয়, সেগুলো নিচে লেখো।
ক) ____________________________________________________________________________
খ) ____________________________________________________________________________
গ) ____________________________________________________________________________
তুমি চাইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো দেখে নিতে পারো।
ভাষায় মর্যাদার প্রকাশ
তুমি যেভাবে পরিবার এবং পরিবারের বাইরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করো, সে অনুযায়ী নিচের ছকটি পূরণ করো। পূরণ করা ছকের মিল-অমিল নিয়ে সহপাঠীর সাথে আলোচনা করো।
কী বলি | কাদের বলি |
তুমি, তোমার, তোমাকে, তোমরা, তোমাদের | ছোটো ভাই-বোন, বন্ধু, সমবয়সী, বাবা-মা |
আপনি, আপনার, আপনাকে, আপনারা, আপনাদের | বড়োদের, অপরিচিতদের, বাবা-মা, শিক্ষক |
তুই, তোর, তোকে, তোরা, তোদের | কাছের মানুষদের; ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের |
সে, তার, তাকে, তারা, তাদের | বয়সে ছোটোদের; ঘনিষ্ঠদের |
তিনি, তাঁর, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের | বয়সে বড়োদের, সম্মানিত ব্যক্তিদের |
ও, ওর, ওকে, ওরা, ওদের | বয়সে ছোটোদের; ঘনিষ্ঠদের |
নানা কারণে পরিবারের সবার সঙ্গে সবার কথা বলতে হয়। আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সঙ্গেও কথা বলার দরকার হয়ে থাকে। এছাড়া সহপাঠীর সঙ্গে, শিক্ষকের সঙ্গে, বন্ধুর সঙ্গে, দোকানদারের সঙ্গে, অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে নানা সময়ে কথা বলার দরকার হয়।
এই যোগাযোগের ধরন এক রকমের হয় না। তা ছোটোদের সাথে এক রকম, সমবয়স্কদের সাথে এক রকম, বড়োদের সাথে এক রকম, আবার অপরিচিত লোকের সাথে আর এক রকম।
নিচের বাক্যগুলো দেখো। বাক্যগুলোতে কোন কোন শব্দে পরিবর্তন হয়েছে, তা চিহ্নিত করো-
- তুমি কেমন আছ?
- আপনি কেমন আছেন?
- তুই কেমন আছিস?
- সে কেমন আছে?
- তিনি কেমন আছেন?
- ও কেমন আছে?
মর্যাদা অনুযায়ী সর্বনাম ও ক্রিয়া
তুমি, আপনি, তুই, সে, তিনি, ও – এগুলো সর্বনাম শব্দ। সর্বনাম শব্দ নামের বদলে বসে। সর্বনাম মূলত তিন ধরনের:
১. সাধারণ সর্বনাম
২. মানী সর্বনাম
৩. ঘনিষ্ঠ সর্বনাম
তুমি বলা যায় ভাই-বোনকে, ঘনিষ্ঠজনকে, বাবা-মাকে, বন্ধুকে। এগুলো সাধারণ সর্বনাম। আপনি করে বলতে হয় শিক্ষককে, বয়সে বড়ো আত্মীয়-স্বজনকে, অপরিচিত লোককে।
এগুলো মানী সর্বনাম। কারো সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা থাকলে অথবা কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে তুই বলা হয়। এগুলো ঘনিষ্ঠ সর্বনাম।
সর্বনামের রূপ
সাধারণ সর্বনাম | মানী সর্বনাম | ঘনিষ্ঠ সর্বনাম |
তুমি, তোমার, তোমাকে, তোমরা, তোমাদের | আপনি, আপনার, আপনাকে আপনারা, আপনাদের | তুই, তোরা, তোকে, তোরা, তোদের |
সে, তার, তাকে, তারা, তাদের | তিনি, তাঁর, তাঁকে তাঁরা, তাঁদের | ও, ওর, ওকে, ওরা, ওদের |
বাক্যে যেসব শব্দ দিয়ে কাজ করা বোঝায়, সেগুলোকে ক্রিয়া বলে। যেমন—শোনা, বলা, পড়া, লেখা, খেলা, গাওয়া এগুলো ক্রিয়া শব্দ। মর্যাদা অনুযায়ী সর্বনামের যেমন পরিবর্তন হয়, ক্রিয়ারও তেমন পরিবর্তন হয়। নিচে সর্বনাম অনুযায়ী ‘করা’ ক্রিয়ার কয়েকটি রূপ দেখানো হলো।
ক্রিয়ার রূপ
সাধারণ সর্বনাম | মানী সর্বনাম | ঘনিষ্ঠ সর্বনাম |
---|---|---|
তুমি করো, তুমি করছ, তুমি করেছ, তুমি করতে, তুমি করেছিলে, তুমি করবে, তুমি, কোরো। | আপনি করুন, আপনি করেছেন, আপনি করতেন, আপনি করেছিলেন, আপনি করবেন। | তুই করিস, তুই করছিস, তুই করেছিস, তুই করতিস, তুই করেছিলি, তুই করবি। |
সে করে, সে করছে, সে করেছে, সে করত, সে করেছিল, সে করবে। | তিনি করেন, তিনি করছেন, তিনি করেছেন, তিনি করতেন, তিনি করেছিলেন, তিনি করবেন। | ও করে, ও করছে, ও করেছে, ও করত, ও করেছিল, ও করবে। |
সর্বনাম ও ক্রিয়া দিয়ে বাক্য তৈরি
নিচের ছকের সর্বনাম অনুযায়ী যেকোনো ক্রিয়া ব্যবহার করে বাক্য তৈরি করো।
সর্বনাম | ক্ৰিয়া | বাক্য |
---|---|---|
১. তুমি/তোমরা | আসা | তুমি আমাদের বাড়িয়ে এসো। |
২. আপনি/আপনারা | খাওয়া | আপনারা কোথায় খাবেন? |
৩. তুই/তোরা | করা | তুই বাড়ির কাজ ভালোভাবে করিস। |
৪. সে/তারা | লেখে | তারা চিঠি লেখে। |
৫. তিনি/তাঁরা | চেনা | তিনি রাজুকে চেনেন। |
৬. ও/ওরা | পড়া | ও আমার সঙ্গে পড়ে। |
ভাষিক ও অভাষিক যোগাযোগ
মানুষ নানা প্রয়োজনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। যোগাযোগ মূলত দুইভাবে হয়:
১. ভাষিক যোগাযোগ
২. অভাষিক যোগাযোগ
ভাষিক যোগাযোগ
ভাষিক যোগাযোগের প্রধান রূপ চারটি— শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। এর মধ্যে বলা ও শোনার কাজে মুখ ও কানের ভূমিকা প্রধান। যন্ত্র থেকে তৈরি শব্দও আমরা কান দিয়ে শুনে থাকি।
অন্যদিকে লেখা ও পড়ার কাজে হাত ও চোখ প্রধান ভূমিকা রাখে। যন্ত্রে লেখা শব্দও আমরা চোখ দিয়ে পড়তে পারি।
কথা বলা, বই পড়া, ফোনে আলাপ করা ও বার্তা পাঠানো, রেডিও-টেলিভিশন শোনা ও দেখা, কাগজে লেখা বা কম্পিউটারে টাইপ করা ইত্যাদি ভাষিক যোগাযোগের উদাহরণ।
অভাষিক যোগাযোগ
যোগাযোগের ক্ষেত্রে কথা বলা ও লেখার পাশাপাশি কিছু অভাষিক কৌশলও কাজে লাগানো হয়। তখন মুখভঙ্গি ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, হাত ও চোখের ইশারা, হাতের স্পর্শ, ছবি ও সংকেত ইত্যাদির ব্যবহার হয়।
যোগাযোগের অনুশীলন
মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি অধ্যায় পাঠে এবার দলে ভাগ হয়ে নিচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ভূমিকাভিনয় করো। কথোপকথনের সময়ে খেয়াল রাখবে মর্যাদা অনুযায়ী যেন সর্বনাম ও ক্রিয়ার ব্যবহার হয়।
১. বাইরে থেকে মাত্র বাড়ি ফিরেছ। এমন সময়ে তোমার ছোটো ভাই তোমার সাথে খেলার জন্য বায়না ধরেছে। এ নিয়ে তার সাথে কথা হচ্ছে।
২. আজ নতুন বই হাতে পেয়েছ। খবরটি তোমার দাদা বা নানাকে ফোন করে জানাও।
৩. তোমার চাচা টেলিফোন করে জানালেন, তোমার দাদি অসুস্থ। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে আলাপ করছ।
৪. বাসার কাছের দোকানে খাতা ও কলম কিনতে গিয়েছ। সবগুলো জিনিস কেনা শেষে দেখা গেল, তোমার কাছে কিছু টাকা কম পড়েছে। এ নিয়ে দোকানির সাথে কথা বলছ।
৫. তোমার ক্লাসে একজন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তুমি তার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছ এবং তোমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছ।
৬. পাশের বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তুমি দাওয়াত পেয়েছ। সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছ।
জরুরি যোগাযোগ
অনেক সময়ে জরুরি প্রয়োজনে কারো সঙ্গে বা কোনো সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। নিচে কিছু জরুরি পরিস্থিতি দেওয়া হলো। এমন পরিস্থিতিতে তুমি বা তোমরা কার সাথে যোগাযোগ করবে তা নিচে লেখো। মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি পাঠের এই কাজটি তোমাদের জন্য করে দেওয়া হল।
জরুরি পরিস্থিতি | কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে |
---|---|
১. তোমার এলাকার কোনো বাড়িতে আগুন লেগেছে। | কোথায়/কার সাথে: ফায়ার সার্ভিস (মোবাইল নম্বর) বিকল্প: স্থানীয় থানা, মেম্বার, চেয়ারম্যান, কমিশনার, মেয়র, ইউএনও ইত্যাদি। কীভাবে: মোবাইল কল, সরাসরি কথা বলা যা বলব: শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করবে |
২. খেলার মাঠে এক বন্ধু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। | কোথায়/কার সাথে: বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা নিকটস্থ হাসপাতাল (মোবাইল নম্বর) বিকল্প: উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স, নিকটস্থ ফার্মেসি, স্থানীয় চিকিৎসক ইত্যাদি। কীভাবে: মোবাইল কল, সরাসরি কথা বলা যা বলব: শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করবে |
৩. ঝড়ের পরে বিদ্যুতের তার রাস্তায় পড়ে আছে। | কোথায়/কার সাথে: পল্লী বিদ্যুৎ বা ওয়াপদা অফিস (মোবাইল নম্বর) বিকল্প: স্থানীয় থানা, মেম্বার, চেয়ারম্যান, কমিশনার, মেয়র, ইউএনও ইত্যাদি। কীভাবে: মোবাইল কল, সরাসরি কথা বলা যা বলব: শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করবে |
৪. হারিয়ে যাওয়া কোনো শিশুকে খুঁজে পাওয়া গেছে। | কোথায়/কার সাথে: হারিয়ে-যাওয়া শিশুর পরিবারের সদস্য (মোবাইল নম্বর) বিকল্প: স্থানীয় থানা, মেম্বার, চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউএনও ইত্যাদি। কীভাবে: মোবাইল কল, সরাসরি কথা বলা যা বলব: শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করবে |
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, এই ছিল তোমাদের ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্য বইয়ের প্রথম অধ্যায় মর্যাদা বজায় রেখে যোগাযোগ করি শীর্ষক পাঠ। আশা করছি তোমরা ভালোভাবে এটি পড়েছো। তাহলে নিচের কমেন্টে সেকশনে তোমাদের অনুশীলনী গুলো জমা দাও। আমাদের পরবর্তী পাঠ প্রমিত ভাষা শিখি। আমাদের সাথেই থাকো।
5 Comments
Pingback: প্রমিত ভাষা শিখি - অধ্যয়ন
Pingback: মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্লাস রুটিন ২০২৩ - অধ্যয়ন
awesome..!
স্যার অনেক ধন্যাবদ।স্যার ইংরেজি আর অংকের টা দিন প্লিজ প্লিজ।
স্বাগতম! আমরা রুটিন অনুযায়ী কাজগুলো করছি। দয়া করে সময় দিন।