জাতীয় বা স্থানীয় যেকোন নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কর্মকর্তাদের ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং ভােটকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। যেকোন ভুল পদক্ষেপের জন্য ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাই ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং ভােটকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম খুব প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী একটা আর্টিকেল।
এর আগে আমরা আলোচনা করেছিলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ ও তাদের করণীয় সম্পর্কে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নীতিমালায় এইগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা
একজন কর্মকর্তা সঠিকভাবে ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসরণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। এই জন্য আজকে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং ভােটকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম আইনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সূচী অনুসারে ভােটকেন্দ্রের স্থান নির্ধারণ করা এবং ভােটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা সরকারী গেজেটে প্রকাশ করিবার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর অর্পিত।
ভােটকেন্দ্রের স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করিয়া নির্বাচনী এলাকার সকল ভােটার এলাকার ভােটারদের ভােটদানের স্থান নির্ধারণ করিয়া প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের নিকট দাখিল করিবার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারের।
প্রস্তাব দাখিল করিবার পর রিটার্নিং অফিসারকে অবশ্য অবস্থানগত কারণে ভােটার সংখ্যা অত্যধিক ঊর্ধ্বগতি এবং যাতায়াত ব্যবস্থাদির কারণে ভােটকেন্দ্রের তালিকার পরিবর্তন করিতে হয়। তবে এইরূপ পরিবর্তনের জন্য রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশনের অনুমােদন অবশ্যই গ্রহণ করিতে হইবে।
ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং ভােটকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম
২। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (The Representation of the People Order, 1972)-এর ৮ অনুচেছদ অনুসারে কমিশন কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সূচীর মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী এলাকার জন্য ভােটকেন্দ্রের স্থান উল্লেখপূর্বক ভােটকেন্দ্রের তালিকা নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করিতে হইবে।
কেননা নির্বাচন কমিশন উক্ত ভােটকেন্দ্রের তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যে সকল ভােটার এলাকার ভােটাররা যে যে ভােটকেন্দ্রে ভােটাধিকার প্রয়ােগ করিবেন তাহা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিয়া ভােটগ্রহণের অন্ততঃ ১৫ (পনের) দিন পূর্বে ভােটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা সরকারী গেজেটে প্রকাশ করিবেন এবং উক্ত ভােটকেন্দ্রের তালিকার ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার জন্য ভােটকেন্দ্রের ব্যবস্থা করিবেন।

৩। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ভােটকেন্দ্র স্থাপনের যে নীতিমালা প্রণয়ন করিয়াছেন তাহা রিটার্নিং অফিসারকে অনুসরণের জন্য নিম্নে উল্লেখ করা হইলঃ
ভােটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা
(১) ভােটকেন্দ্র অবশ্যই পাবলিক বিল্ডিং-এ স্থাপন করিতে হইবে এবং কোন অবস্থাতেই কোন প্রার্থীর প্রভাবাধীন স্থানে ভােটকেন্দ্র স্থাপন করা যাইবে না।
(২) ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তৎপরবর্তীকালে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভােটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হইয়াছে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভােটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করিতে হইবে।
(৩) গড়ে ২৫০০ (দুই হাজার পাঁচশত) ভােটারের জন্য ভােটকেন্দ্র স্থাপন করিতে হইবে এবং ভােটকেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষ (বুথ) আনুমানিক ৫০০ (পাঁচশত) তােটারের জন্য নির্ধারণ করিতে হইবে। যদি কোন অবস্থানগত কারণে ভােটকেন্দ্রে ভােটারের সংখ্যা ২৫০০ (দুই হাজার পাঁচশত)-এর অধিক হয় তবে অতিরিক্ত ভােটারের জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত ভােটকক্ষের বাবস্থা করিতে হইবে।
(৪) বিশেষ ক্ষেত্রে জনবসতি কম এলাকায় এবং ভৌগােলিক অবস্থানগত কারণে ২৫০০ (দুই হাজার পাঁচশত) ভােটারের কম সংখ্যক ভােটারের জন্যও ভােটকেন্দ্র স্থাপন করা যাইবে।
(৫) ভােটারদের ভােটকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য সুবিধা ও ভৌগােলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভােটকেন্দ্র এরূপভাবে স্থাপন করিতে হইবে যাহাতে-
(ক) ভােটার এলাকাগুলি ভােটকেন্দ্রের সংলগ্ন ও সুনিবিড় হয় এবং সাধারণতঃ দুটি ভােটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব দুই মাইলের বেশী না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
(খ) ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা: কোন ভােটার এলাকার ভােটারগণকে যেন নিকটস্থ ভােটকেন্দ্র অতিক্রম করে দূরবর্তী স্থানে স্থাপিত ভােটকেন্দ্রে গমন করিতে না হয়।
(৬) পূর্বে ব্যবহৃত ভােটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানের দালানকোঠা বা ভবনের বা ঘরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইলে পার্শ্ববর্তী কোন উপযুক্ত স্থানে ভােটকেন্দ্র স্থাপন করা যাইবে।
(৭) ভােটকেন্দ্র যে স্থানে/প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হইবে সেই স্থানের/প্রতিষ্ঠানের নামানুসারে ভােটকেন্দ্রের নাম লিপিবদ্ধ করিতে হইৰে। অস্থায়ী জায়গায় ভােটকেন্দ্র স্থাপন করা হইলে এলাকার অবস্থান সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করিতে হইবে।
(৮) ভােটার এলাকাসমূহের মধ্যে যে ভােটার এলাকায় ভােটার সংখ্যা অধিক এবং সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠান রহিয়াছে সেই ভােটার এলাকায় ভােটকেন্দ্র স্থাপন করিতে হইবে।
ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং ভােটকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম
(৯) একই বিল্ডিংয়ে বিভিন্ন শিফটে চালু একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভােটকেন্দ্র করা যাইবে না। এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি মূল প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করিয়া ভােটকেন্দ্র করা যায়।
(১০) কম জনবসতি এলাকা, দুর্গম পার্বত্য এলাকা অথবা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে উপরোক্ত শর্ত এমনভাবে শিথিল করা যাইতে পারে যাহাতে ভোটারদের যাতায়াতের এবং ভোট প্রদানে কোন অসুবিধার সৃষ্টি না হয় ।
(১১) একই ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা যাহাতে পৃথক পৃথক এবং সুশৃংখলভাবে ভোটদান করিতে পারেন উহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। মহিলা ও পুরুষ ভোটার যাহাতে ভিন্ন ভিন্ন পথে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও বাহির হইতে পারেন তারও নিশ্চয়তা বিধান করিতে হইবে। শহর এলাকায় যতদূর সম্ভব, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাইবে।
(১২) ভোটকেন্দ্রটি কি পুরুষ ভোটারের জন্য না মহিলা ভোটারের জন্য কিম্বা উভয় প্রকার ভোটারের জন্য তাহা সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করিতে হইবে ।
(১৩) প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের নামের বিপরীতে উল্লিখিত প্রতিটি ভোটার এলাকার নাম উল্লেখ করিতে হইবে এবং ভোটার এলাকার নামের পার্শ্বে কতজন ভোটার উক্ত ভোটকেন্দ্রে ভোট দিবেন তার সংখ্যা অবশ্যই উল্লেখ করিতে হইবে।
যদি কোন ভোটার এলাকাকে বিভক্ত করে একাধিক ভোটকেন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করা হয় তবে সে বিভক্ত এলাকার ভোটারদের ভোটার তালিকায় বর্ণিত ক্রমিক নম্বরগুলি সন্নিবেশিত করিতে হইবে যাহাতে সহজেই স্পষ্ট হয় যে, ভোটার তালিকায় বর্ণিত কোন্ কোন্ ভোটারকে কোন্ কোন্ ভোটকেন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করা হইয়াছে, যাহাতে ভোট গ্রহণের দিন ভোটারগণের মধ্যে অযথা হয়রানী বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়।
ভােটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা: এই তথ্যটি কোনো প্রকার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় বরং জনগণের কল্যাণে বহুল প্রচারের লক্ষ্যে অধ্যয়ন ডট কম এর পাঠকদের সুবিদার্থে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সরাসরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর সূত্র থেকে সংগৃহিত। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকলে রিমুভ করার অনুরোধ করতে পারেন: OdhayonOnline@gmail.com অথবা সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
অধ্যয়ন ডট কম এর সকল আপডেট সবার আগে পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক ও ফলো রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। প্রতিদিন শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতে আমাদের দৈনিক শিক্ষা ক্যাটাগরি দেখুন।
3 Comments
Pingback: বেসরকারি শিক্ষকদের নভেম্বর ২০২২ এর এমপিও নিষ্পত্তির সময়সীমা বাড়লো - অধ্যয়ন
Pingback: ভােটগ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়ােগ এবং প্রশিক্ষণ - অধ্যয়ন
Pingback: ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন এবং অংশগ্রহণের নিয়ম - অধ্যয়ন