এবারে আমরা বন্ধুর সাথে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করব। বন্ধুর সাথে বেড়াতে যেতে কার না ভালো লাগে। নতুন নতুন অনেক কিছু একসাথে দেখা হয়, নতুন ধরনের খাবার খাওয়া হয়, অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু এই মজার সবই মলিন হয়ে যেতে পারে যদি আমাদের যাওয়া এবং আসার পরিকল্পনাটি ঠিকমতো না হয়।
বন্ধুর সাথে ভ্রমণ। যেমন ধরি, বেড়াতে যাওয়ার জন্য আমরা রওনা দিলাম ঠিকই, কিন্তু আমাদের যাওয়ার বাস/ট্রেন/লঞ্চটি সময়মতো ধরতে পারলাম না। তখন খুব মন খারাপ হবে। এমনও হতে পারে, আমাদের বেড়াতে যাওয়াটাই আর হলো না।
বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা
তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে সব সময় পরিকল্পনাটা ভালো করে নিতে হবে। আর এ শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা এটাই হাতেকলমে করব। আমরা বন্ধুর সাথে ভ্রমণের একটি পরিকল্পনা করব। কিছু ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে আমরা এই পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যাব। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
সেশন- ১ : খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ
ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে এই সেশনে আমরা একটি খেলা খেলব। খেলাটির নাম ‘খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ’। নাম শুনেই বোঝা যায় খেলাটি শ্রেণিকক্ষে খেলতে হবে, তবে চাইলে শ্রেণির বাইরেও খেলা যাবে। খেলাটি খেলার পদ্ধতি নিচের ঘরে দেওয়া হলো-


১। খেলার প্রথম কাজ হলো একজন সহপাঠী পছন্দ করা যে ভ্রমণসঙ্গী হবে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
২। ভ্রমণসঙ্গী নির্ধারণ হয়ে গেলে শিক্ষক যেখানে দাঁড়াতে বলবেন আমাদের সবাইকে সেখানে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
৩। এবারে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের সামনের দিকে অর্থাৎ যেখানে শিক্ষকের টেবিল থাকে সে বরাবর একটি দাগ দিবেন এবং শ্রেণিকক্ষের আর এক জায়গায় অপর একটি দাগ দেবেন। শ্রেণিকক্ষের প্রথম দাগটি হলো যাত্রা শুরুর দাগ এবং অন্য দাগটি হলো ভ্রমণ স্থান।
৪। আমাদের ভ্রমণসঙ্গীকে সাথে নিয়ে ভ্রমণের স্থানে যেতে হবে।
৫। আমরা ভ্রমণ শুরুর জায়গা থেকে খেলা শুরুর সময় জোরে বলব ‘শুরু’ এবং ভ্রমণ স্থানে পৌঁছানোর পর জোরে বলব ‘শেষ’।
৬। যে জোড়া যত কম ধাপে ভ্রমণ স্থানে যেতে পারবে সে জোড়া বিজয়ী হবে।
খেলাটি থেকে আমরা কি কিছু বুঝতে পারলাম? হ্যাঁ, খেলাটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনাতেও কিছু ধাপ থাকবে এবং আমাদের তা চিহ্নিত করতে হবে। শুধু ভ্রমণ পরিকল্পনাতেই যে ধাপে ধাপে কাজ হয় ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। আমাদের আশপাশে যে কাজেই দেখি তার কিছু ধাপ আছে এবং এই ধাপ মেনেই সকল কাজ হয়।
আমরা আমাদের আশপাশে সে সকল ডিজিটাল যন্ত্র দেখতে পাই, সে সকল যন্ত্রও কিন্তু এই ধাপ মেনে মেনে কাজ করে। ডিজিটাল যন্ত্র ছাড়াও আশপাশের সব কাজই ধাপ মেনে হয়। যেমন, বাড়িতে কোনো সদস্য রান্না করছে, রান্না করতে গিয়েও কিন্তু সে ধাপে ধাপে রান্না করছে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।


রান্না করার সময় আগে চুলা জ্বালাতে হয়, তারপর হাঁড়ি বসাতে হয়, তারপর সেই হাঁড়িতে কিছু একটা রান্না করা হয়। আবার বাড়িতে হারমোনিয়াম বাজানোর সময় কিন্তু ধাপে ধাপে একটার পর একটা চাবিতে চাপ দিতে হয়, তা না হলে তো ঠিক সুরটাই বেজে উঠবে না। আবার রাস্তায় যে রিকশা চলে, তাতেও কিছু ধাপ আছে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
রিকশা চালানোর জন্য প্রথমে রিকশার হাতল ধরেন রিকশাচালক। তারপর রিকশায় বসেন, তারপর রিকশার প্যাডেল ঘোরান ইত্যাদি। তাহলে আমরা দেখি যে, আমাদের জীবনের প্রতিটা কাজই নির্দিষ্ট ধাপ মেনে হয়ে থাকে।
একে গণিতের ভাষায় কী বলে আমরা কি জানি? একে বলে অ্যালগরিদম। আমাদের চারপাশে কিছু লক্ষ্য করলেই আমরা তা বুঝতে পারবো। আমাদের শুধু সবকিছু কীভাবে একটার পর একটা হচ্ছে তা বুঝতে হবে। তাতেই কিন্তু আমরা অ্যালগরিদম বিশেষজ্ঞ হয়ে যাব। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
বাড়ির বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসার সময় আমরা ধাপে ধাপে যে কাজগুলো করে বিদ্যালয়ে আসি তা নির্ধারিত স্থানে লিখে নিয়ে আসি।
বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসার ধাপ : |
সেশন- ২ : ধাপে ধাপে কাজ করি
সঠিক ভ্রমণ পরিকল্পনা করার জন্যও আমাদের জানতে হবে আমাদের কী কী কাজ ও মোট কয়টি কাজ। গত সেশনের ‘খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ’ খেলাটি খেলার সময় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম কোনো জায়গায় পৌঁছাতে হলে কিছু ধাপ পার করতে হয় বা কিছু কাজ করতে হয়। আগের সেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের বাড়ির কাজ করে আনার কথা। এই বাড়ির কাজকে ভিত্তি করেই আমরা আমাদের এই সেশনের অনেক কাজ করব। আজকের সেশনে আমরা ধাপে ধাপে কাজ করাকে ভালোভাবে অনুধাবন করব।
আমরা তো প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসি। দুই-একদিন হয়তো বিশেষ কোনো কারণে আমাদের বিদ্যালয়ে আসাটা হয়ে ওঠে না। বাসা থেকে বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের প্রতিদিন কিছু কাজ করতে হয়, যা আমরা আগেই লিখেছি। চলো সহপাঠীর সাথে মিলে এবার নিচের গল্পটি পড়ি :
নিরা ‘মনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়' এর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। বিদ্যালয়ে আসতে নিরার বড় ভাই নিহাদ নিরাকে খুব সাহায্য করে। একদিন নিরার মনে হলো যদি কোনো কারণে তার বড় ভাই নিহাদ কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে, তাহলে নিরার বিদ্যালয়ে যাওয়াই হবে না। নিরা একথা তার ভাইকে জানাল। নিহাদ বলল, “ঠিক তো নিরা, তোমার তো সমস্যা হবে বিদ্যালয়ে যেতে আমি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে। এক কাজ করি, কাল বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ঘুম থেকে উঠে আমরা যা যা করি তার একটা লিস্ট করতে থাকব। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা। তাহলেই আমি কোথাও ঘুরতে গেলে তুমি ওই লিস্ট দেখে বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে'। নিরার বুদ্ধিটা খুব পছন্দ হলো। পরদিন নিরা ও নিহাদ মিলে যা যা করল তার একটা লিস্ট বানাল এবং প্রতিটা কাজ কীভাবে করতে হয় তা লিখে রাখল। অনেকটা এরকমভাবে লিখল, শুরু ঘুম থেকে ওঠা দাঁত পরিষ্কার করা সকালের নাশতা করা বিদ্যালয়ের কাপড় পরা ব্যাগ গোছানো বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় ওঠা বিদ্যালয়ের গেটে নামা শ্রেণিতে ঢোকা শেষ নিরা তার বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা নিহাদ ভাই, তুমি কাজের আগে শুরু আর শেষ লিখলে কেন? এটাতো এমনিতেই বোঝা যায় কোনটা শুরু আর কোনটা শেষ’। নিহাদ বলল, ‘আরে!! এটা হচ্ছে এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা।' নিরা এবার জিজ্ঞেস করল, ‘এই তীর চিহ্নগুলো কেন দিলে ভাইয়া?’ নিহাদ বলল, ‘একে প্রবাহচিত্র বা ফ্লোচার্ট বলে। পুরোপুরি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে গেলে তুমি অনেক বড় কম্পিউটার প্রোগ্রামার হয়ে যাবে। মজা না?' নিরার এই ব্যাপারটা দারুণ মজা লাগল। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
চলো নিরার মতো আমরাও বিদ্যালয়ে আসার কাজগুলো প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করি। এ জন্য আমরা আমাদের সহপাঠীর সাথে আলোচনা করি ও লিখি। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
বিদ্যালয়ে আসার ধাপসমূহের প্রবাহচিত্র
আমরা নিশ্চয়ই খুব ভালোভাবে আমাদের বিদ্যালয়ে আসা ধাপগুলো ধরতে পেরেছি।
বাড়ির কাজ : বাড়িতে গিয়ে কোনো একটি রান্না ভালোভাবে দেখি এবং যে বাড়ির যে সদস্য রান্নাটি করছে তার সহায়তা নিয়ে রান্নার ধাপগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর ভাষা ও প্রবাহচিত্র ব্যবহার করে নিচের ঘরে নির্ধারিত জায়গায় লিখি। কোনো জটিল ধরনের রান্না না দেখে সহজ একটি রান্না আমরা পর্যবেক্ষণ করি।
যা রান্না হয়েছে : |
রান্নার উপাদান : |
রান্নার প্রবাহচিত্র : |
সেশন- ৩ : কার ধাপ কত বেশি
গত সেশনে আমাদের বিদ্যালয়ে আসার কাজগুলো আমরা ধাপ অনুযায়ী প্রবাহ চিত্র ব্যবহার করে লিখেছিলাম। এবারে আমরা দেখব ‘বিদ্যালয়ে আসার কাজটিতে’ কার ধাপ কত বেশি। আমরা আমাদের ধাপগুলো গণনা করি এবং শিক্ষকের সাথে সংখ্যাটি বলি। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
সবার বলা শেষ হলে আমরা খেয়াল করব বিদ্যালয়ে আসা এই একটি কাজের জন্য অনেকে অনেক ধাপ বলেছে আবার কেউ কেউ খুব কম ধাপ বলেছে। ঠিক আমাদের প্রথম সেশনের খেলার মতো। নিচের ঘরে ধাপের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সংখ্যা লিখি।
সর্বোচ্চ সংখ্যা | সর্বনিম্ন সংখ্যা |
---|---|
এবারে যে শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বেশি ধাপ সংখ্যা লেগেছে তার কাছে জানতে চাই সে কী কী ধাপ লিখেছিল এবং তা নিচের ঘরে লিখি । বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
সবচেয়ে বেশি ধাপ সংখ্যা যার লেগেছে তার বিদ্যালয়ে আসার ধাপসমূহের প্রবাহচিত্র শুরু ↓ ↓ শেষ
এখন সহপাঠীর সাথে আলোচনা করি, উপরে যে ধাপগুলো লেখা হয়েছে, তার কোন ধাপগুলো না থাকলেও বিদ্যালয়ে আসা যায়। ওই ধাপগুলোর পাশে উপরের ঘরে X চিহ্ন দিই।
কারণ আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করার সময় মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত কাজ দিয়ে আমাদের ভ্রমণ যাত্রার পরিকল্পনা করলে আমাদেরই সময় নষ্ট হবে, যা আমাদের ভ্রমণের আনন্দ নষ্ট করে দিতে পারে। কোনো কাজকে যদি অনেকগুলো ধাপে ভাগ করা যায় তাহলে কীভাবে সবচেয়ে কম ধাপে কাজটি করা যায় সেটি জানাও জরুরি। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
বাড়ির কাজ :
এবার আর একটি কাজ দেখি। নিচের ‘কাঠি দিয়ে গাড়ি’ কীভাবে বানানো যায় তার একটি প্রবাহচিত্র দেওয়া আছে। বাড়িতে কারও সহায়তা নিয়ে প্রবাহচিত্র অনুসরণ করে গাড়িটি বানাই এবং ফ্লোচার্টে কোনো বাড়তি ধাপ লেখা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করে X চিহ্ন দিই। গাড়িটি বানানো হলে তা আমাদের শ্রেণিতে নিয়ে আসতে হবে।
- গাড়ি বানানোর জন্য উপাদান লাগবে
১। চারটি একই সমান পানির বোতলের মুখ
২। দুইটি আইসক্রিম কাঠি।
৩। একটি জুস খাওয়ার নল/পাইপ/স্ট্র/স্ট্র না পাওয়া গেলে একটি কাগজ গোল করে জুস খাওয়ার নল/পাইপের মতো বানিয়ে ফেলা যায়।
৪। পাঁচটি চিকন রাবার ব্যান্ড।
৫। একটি চিকন শক্ত কাঠি।
৬। আঠা/আইকা।
______________________________________________________________________________________________
গাড়ি বানানোর প্রবাহচিত্ৰ:
শুরু
↓
১। পানির বোতলের মুখগুলোকে মাঝ বরাবর ফুটো করি।
↓
২। জুস খাওয়ার পাইপটাকে তিন ভাগ করি। এক ভাগ হবে আমাদের হাতের চার আঙ্গুল মিলালে যত মোটা হয় তার সমান বড় এবং বাকি দুই ভাগ হবে আমাদের এক আঙুলের সমান করে।
↓
৩। শক্ত চিকন কাঠিটাকে তিন ভাগ করি, দুই ভাগ থাকবে আমাদের হাতের পাঁচ আঙ্গুল মিলালে যত মোটা হয় তার সমান এবং এক ভাগ থাকবে এক আঙ্গুল সমান মোটা
↓
৪। আইসক্রিম কাঠি দুটোকে পাশাপাশি বসাই।
↓
৫। আইসক্রিম কাঠি দুটোর দুই পাশে আঠা লাগাই

↓
৬। আঠার জায়গায় এক পাশে বড় পাইপের টুকরোটা বসাই। এমনভাবে বসাই যেন কাঠি দুটোকে পাইপটি সংযুক্ত করতে পারে।
↓
৭। অনেকটা রাস্তার ব্রিজের মতো।
↓
৮। আইসক্রিম কাঠি দুটোর অপর পাশে ছোট পাইপের টুকরো দুটি বসাই।
↓

↓
৯। চিকন শক্ত কাঠির একটি টুকরোর এক পাশে একটি ফুটো করা বোতলের মুখ অল্প একটু ঢোকাই।
↓
১০। ফুটোর জায়গায় একটু আঠা লাগাই। যেন বোতলের মুখটা পাকাপোক্ত হয়।
↓
১১। বড় করে কাটা পাইপের অংশের ভেতর দিয়ে বোতলের মুখ লাগানো কাঠিটি ঢোকাই।

১২। কাঠির অন্য পাশে আর একটি ফুটো করা বোতলের মুখ আঠা দিয়ে লাগাই।
↓
১৩। জিনিসটা দেখতে অনেকটা এখন গাড়ির চাকার মতো লাগার কথা।
↓
১৪। আইসক্রিম কাঠির অপর পাশেও ছোট ছোট পাইপের অংশের ভেতর দিয়ে চিকন শক্ত কাঠিটির অপর একটি বড় অংশ ঢোকাই।

↓
১৫। দুই পাশে দুটি ফুটো করা বোতলের মুখ আঠা দিয়ে লাগিয়ে ফেলি। আমাদের আইসক্রিম কাঠির দুই পাশেই আমরা এখন গাড়ির চাকার মতো দেখতে পাব।
↓
১৬। চিকন কাঠির যে ছোট টুকরোটা ছিল সেটা ছোট ছোট পাইপের অংশের মধ্য দিয়ে কাঠি ঢুকিয়ে যে চাকার মতো বানালাম সে কাঠির মাঝ বরাবর বসাই।

↓
১৭। অপর পাশে একটি রাবার দিয়ে শক্তভাবে একটি গিঁট দিই।

↓
১৮। বাকি চারটি রাবার, শক্ত কাঠির মাঝে ছোট কাঠিটি যে দিকে আঠা দিয়ে লাগিয়েছি সেই দিকে বোতলের মুখের চাকার মাঝে লাগাই।

↓
১৯। গিঁট দেওয়া রাবারের এক পাশ টেনে ধরে মাঝে লাগানো ছোট কাঠিটির এক পাশে ঢুকিয়ে দিই।

↓
২০। চাকায় রাবার যেখানে লাগানো আছে সেই চাকাটি ধরে ঘুরাই। ঘুরালেই দেখা যাবে ছোট কাঠির সাথে টান দিয়ে এনে যে রাবারটি লাগানো হয়েছিল সেটা শক্ত হচ্ছে এবং রাবার কাঠিতে পেঁচিয়ে যাচ্ছে।

↓
২১। গাড়িটি মাটিতে ছেড়ে দিই।
↓
শেষ
সেশন- ৪ : ধাঁধায় ধাঁধায় ভ্রমণ পরিকল্পনা-১
কাঠির গাড়িটি বানাতে বানাতে আমরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছি, আমরা যে ভ্রমণ পরিকল্পনা করব তার সম্পূর্ণ ধাপ আমাদের নির্ধারণ করতে হবে এবং সঠিকভাবে সময় নষ্ট না করে যেন আমরা কাজটি করতে পারি তার পরিকল্পনা করতে হবে। এই সেশনে আমরা আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার একটি খসড়া করব। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
নিচের ঘরে ৩টি ভ্রমণ স্থান, মাঝে কোথায় বাহন পরিবর্তন করতে হবে এবং কোন ধরনের দূরপাল্লার বাহন দিয়ে আমরা সে স্থানে যাব তার তালিকা দেওয়া আছে। যেকোনো একটি স্থান ও দুটি বাহন সহপাঠীর সাথে আলোচনা করে পছন্দ করি এবং পাশে টিক দিই। প্রথম বাহনটি দিয়ে আমরা এক জায়গায় যাব (সিলেট/খুলনা/চট্টগ্রাম-নিচে ছকে দেওয়া আছে), তারপর দ্বিতীয় বাহন দিয়ে সে জায়গা থেকে আমাদের ভ্রমণ স্থানে যাব।
ভ্রমণ স্থান | মাঝে বাহন পরিবর্তন | টিক দিই | বাহন | টিক দিই |
---|---|---|---|---|
১। জাফলং | প্রথমে সিলেট তারপর জাফলং | ট্রেন ও সিএনজি | ||
২। সুন্দরবন | প্রথমে খুলনা তারপর সুন্দরবন | ট্রেন ও লঞ্চ | ||
৩। কক্সবাজার | প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর কক্সবাজার | ট্রেন ও বাস |
শুরু
↓
বাসা থেকে বের হওয়া
↓
বের হয়ে রিকশায় ওঠা
↓
↓
↓
এবারে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় একটি ধাঁধা জুড়ে দেওয়া হলো
প্রথম বাহন বন্ধ আমার
ভিন্ন বাহনই উপায় যাবার
অর্থাৎ ভ্রমণের জন্য প্রথম যে বাহনটি আমরা পছন্দ করেছিলাম সেটি বন্ধ। এর অর্থ হলো আমরা এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়েছি। আমরা প্রথমে যে বাহনটি পছন্দ করেছিলাম সেটি ধরা যাক কোনো কারণে বন্ধ। এখন তাহলে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আগের লেখা ধাপগুলোতে আমরা পরিবর্তন আনব। এই শর্তটি যে ধাপে আসবে সে ধাপটি আমরা অন্য রকম প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে আঁকব। প্রবাহচিত্রটি কেমন হবে তা ছোট করে নিচের ঘরে দেওয়া আছে।

সেশন ৫ : ধাঁধায় ধাঁধায় ভ্রমণ পরিকল্পনা- ২
গত সেশনে আমরা আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনাটি করেছিলাম এবং একটি জটিল ধাঁধায় পড়ে কী করতে হবে তার সমাধান করেছিলাম। এবারের সেশনে আমরা আরও দুটি ধাঁধার সমাধান করব। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
ধাঁধা: ১
ভ্রমণ আমি তখনই করব
যখন পাঁচটি ব্যাগ সঙ্গে নেব।
অর্থাৎ আমাদের পাঁচটি ব্যাগ নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে । কাজেই যখন আমরা কোনো বাহনে উঠবো এবং নামবো আমাদের পাঁচটি ব্যাগই বাহনে ওঠাতে ও নামাতে হবে। এই ধাঁধা অনুযায়ী আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রবাহচিত্রটি নিচের ঘরে আঁকি। নিচের ঘরে বাসে উঠার সময় প্রবাহচিত্রটি কেমন হতে পারে তার একটি জায়গার উদাহরণ দেওয়া আছে। পুরো ভ্রমণে আরও কয়েক বার কিন্তু এ রকম হতে পারে তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

ওপরে ডান পাশে যে প্রবাহচিত্র দেওয়া আছে তাতে একবার বাহনে ওঠার সময় ব্যাগ ওঠানোর ধাপগুলো কী হবে সেটি দেখি। খেয়াল করে দেখি এক জায়গায় আমরা একটি প্রশ্ন করেছি ‘আরও ব্যাগ আছে?’ এটি এমন প্রশ্ন যার উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’ হবে কিংবা ‘না’ হবে। আর কোনো ধরনের উত্তর সম্ভব নয়। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
অনেক সময়ই ডিজিটাল যন্ত্রকেও এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ধরি আমরা বড় হয়ে এমন একটি রোবট বানালাম যেটি বয়স্ক মানুষের মালপত্র গাড়িতে তুলবে আর নামিয়ে দেবে যাতে ওনাদের কষ্ট কম হয়। তাহলে তো রোবটের মাথার ভেতর আমরা যে নির্দেশগুলো লিখে দেবে সেখানে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করতে হবে, তাই না? আরেকটি ব্যাপার ভেবে দেখি।
আমরা কিন্তু চাইলে ‘বাসে ব্যাগ ওঠানো’ কথাটি পাঁচবার লিখে দিতে পারতাম। আমরা সেটি করলে ভুল হবে না। কিন্তু চিন্তা করি, একই রকম নির্দেশ এমন একটি রোবটের জন্য লিখছি যেটি কিনা ট্রাকে সিমেন্টের বস্তা ওঠাবে। তখন কি এক হাজার বস্তার জন্য এক হাজারবার লিখব ‘বাসে বস্তা ওঠাও’? কখনই না। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
আমরা প্রবাহচিত্রের মতো একবার লিখব তারপর আরও বস্তা বাকি থাকলে তীর চিহ্ন দিয়ে দেখিয়ে দেব ‘ব্যাগ ওঠানো’ এই নির্দেশটি আবার পালন করতে। এটিকেই বলে পুনরাবৃত্তি, অর্থাৎ একই জিনিস বার বার করা। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
ধাঁধা: ২
বন্ধুকে সাথে নেবার
সবার প্রথম কাজ আমার
অর্থাৎ আমাদের আগে বন্ধুর বাড়িতে যেতে হবে, বন্ধুকে সাথে নিতে হবে এবং তারপর ভ্রমণ শুরু করতে হবে। এর অর্থ হলো এখন আমাদের পরিস্থিতি আরেকটু পাল্টে গেছে। এখন আমাদের ভ্রমণ শুধু নিজে রওনা দিলে হবে না। আমাদের আগে বন্ধুর বাড়িতে যেতে হবে, বন্ধুকে সাথে নিতে হবে এবং তারপর ভ্রমণ শুরু করতে হবে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
তাই এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমাদের প্রবাহচিত্রে আরও নতুন কিছু যোগ করতে হবে। এই ধাঁধা অনুযায়ী আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রবাহচিত্রটি নিচের ঘরে আঁকি। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
আমরা এতক্ষণ যে ধাঁধার সমাধান করতে করতে পরিকল্পনা করলাম এটি মূলত অ্যালগরিদম। অ্যালগরিদম মানে কিছু ছোট ছোট কাজ ধাপ অনুযায়ী করে একটি বড় কাজ করা। যখন আমরা প্রথম ধাঁধার সমাধান করে পরিকল্পনা করলাম, এটি ছিল অ্যালগরিদমের শাখাবিন্যাস। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
এখানে একটি ধাপে গত সেশনের এমন একটি প্রশ্ন করতে হয়েছে, যার উত্তর হবে হ্যাঁ কিংবা না। উত্তরের ভিত্তিতে আমরা প্রবাহচিত্রে হয় ‘হ্যাঁ’ শাখা অনুসরণ করেছি, নয় ‘না’ শাখা অনুসরণ করেছি। আমাদের এই সেশনের প্রথম ধাঁধাটি ছিল সরল অ্যালগরিদমের পুনরাবৃত্তিমূলক ধরন। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
আমাদের পাঁচটি ব্যাগ এক এক করে পাঁচবার, অর্থাৎ একই কাজ পাঁচবার পুনরাবৃত্তি করে বাহনে ওঠাতে হয়েছে ও নামাতে হয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাঁধাটি ছিল সরল অ্যালগরিদমের পরিমার্জনমূলক। এখানে আমাদের কী কাজ করতে হবে তার শুরুর দিকটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগে আমরা কেবল আমাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম।
এখন আমাদের বন্ধুকে বাসা থেকে নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। তাই আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার কাজের ধাপেও কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তো হয়ে গেল কিন্তু আমাদের সরল অ্যালগরিদম শেখা। মজা না!!!
সেশন -৬ : ভ্রমণ পরিকল্পনা বানাই
এই সেশনে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণ পরিকল্পনাটি বানাব। আগের দুটি সেশনে যে ধাঁধাগুলো ছিল তা এখানে একসাথে দেওয়া হলো। আমাদের পুরো ধাঁধাটি মাথায় রেখে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হবে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
ধাঁধাঁ | ধাঁধাঁ অনুযায়ী ভ্রমণ পরিকল্পনাটির প্রবাহচিত্র আঁকি |
বন্ধুকে সাথে নেবার সবার প্রথম কাজ আমার প্রথম বাহন বন্ধ আমার ভিন্ন বাহনই উপায় যাবার ভ্রমণ আমি তখনই করব যখন পাঁচটি ব্যাগ সঙ্গে নেব |
এই ভ্রমণ পরিকল্পনাটি করার মধ্য দিয়ে আমাদের এই শিখন অভিজ্ঞতাটি এখানেই শেষ হলো। আমাদের পরিকল্পনাটি কতটা সার্থক তা আমরা আমাদের মা-বাবা অথবা শিক্ষককে দেখাতে পারি। একটি আলাদা কাগজে আমার আর সহপাঠীর নাম লিখে ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রবাহচিত্রটি আবার এঁকে শিক্ষককে দিই। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
শিক্ষক আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা মূল্যায়ন করবেন। চাইলে ছুটির দিনে বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুরে আসতে পারি। তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু অবশ্যই আমাদের অভিভাবককে সাথে নিয়ে যেতে হবে।
এর সাথে সাথে আমাদের আরও একটি কাজ করতে হবে। এই শিখন অভিজ্ঞতা শেষে যখনই আমরা কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা শুনব, তখনই আমরা নিজেদের মতো করে একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করব এবং আমাদের অভিভাবককে দেখাব। সেটি আমাদের অভিভাবকের জন্য ও আমাদের, উভয়ের জন্য অনেক আনন্দের ব্যাপার হবে। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
ভ্রমণটি করার পর আমরা পরীক্ষা করব আমরা যে সকল ধাপ লিখেছিলাম তা আদৌ ঠিক আছে কিনা এবং আমাদের মতামত এক পাতায় লিখব। বানানো পরিকল্পনাটি এবং তার ওপর আমাদের নিজেদের মতামত আমরা আমাদের শিক্ষককে দেব যেন আমাদের শিক্ষক সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে আমাদের সহায়তা করতে পারেন। বন্ধুর সাথে ভ্রমণ পরিকল্পনা।
- আরো পড়ুন : তথ্যঝুঁকি মোকাবেলায় মানববন্ধন