বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহের মধ্যে ফেসবুক অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায় নিয়ে আজকে আমরা জানবো। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন বিলিয়ন এর মত।
চলুন ডিজিটাল নিরাপত্তা’র সচেতনতার অংশ হিসেবে ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায় সম্পর্কে জেনে নিই। ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সেই সাথে নিরাপদ থাকার উপায়গুলো জানাও দরকার। এর আগে আমরা জেনেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতার ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে।
সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ব্যবহারের সতর্কতা
সময়ের সাথে সাথে বদলেছে আমাদের অভ্যাসগুলোও। ফেইসবুক, টুইটার, ভাইভার সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এখন দৈনন্দিন অভ্যাসের একটি অংশ হয়ে পড়েছে।
সকালে নাস্তার টেবিলে, কিংবা অফিসে কাজের ফাকে, এমনকি ঘুমুতে যাবার আগেও একবার চেক করতে হয়। তবে আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুকের ব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে।
ফেইসবুক ব্যবহারের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সমাধান
দিন বদলের সাথে সাথে বদলেছে আমাদের অভ্যাসগুলােও। ফেইসবুক, টুইটার, ভাইভার সহ অন্যান্য সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের ব্যবহার এখন দৈনন্দিন অভ্যাসের একটি অংশ হয়ে পড়েছে।
সকালে নাস্তার টেবিলে, কিংবা অফিসে কাজের ফাকে, এমনকি ঘুমুতে যাবার আগেও একবার চেক করতে হয়। তবে আমাদের দেশে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুকের ব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে।
ফেইসবুকের ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমনি বেড়ে চলছে ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা, হয়রানি, হ্যাকিং কিংবা স্প্যামিংয়ের মতাে সাইবার ক্রাইম।
কিন্তু এই অপরাধগুলাে কেন ঘটে? এর থেকে বাঁচার উপায়ই বা কি? চলুন আমরা এরকম তিনটি সাইবার ক্রাইমের ধরণ, এর কারণ এবং এর থেকে মুক্ত থাকার উপায়গুলাে সম্পর্কে জেনে নেই
ক) ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে হয়রানি
ফেইসবুকে সবচেয়ে বেশি যে অপরাধটি ঘটে তা হলাে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি – যেমন –
১. ফেক/ডুপ্লিকেট আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার,
২. মানহানির উদ্দেশ্যে বিকৃত তথ্য ও ছবি ব্যবহার,
৩. এছাড়া মেসেঞ্জারে উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি ইত্যাদি তাে আছেই।
এধরনের ঘটনাগুলাে ঘটে মূলত দুইটি কারনে-
১। অপরিচিত স্বল্পপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তির ,ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করা এবং
২। ফেইসবুকের প্রাইভেসি সেটিং দুর্বল থাকা;
অপরিচিত ব্যাক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবেন না
কখনােই অপরিচিত কোন ব্যাক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবেন না। নতুন কোন রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার আগে তার প্রােফাইলে ঢুকে ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড লিস্টে বন্ধুদের তালিকা দেখা যায়। এখানে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে আপনার পরিচিত বন্ধুর সাথে যােগাযােগ করে তথ্যাদি নিতে পারেন।

ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায়
প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক রাখুন
সাইবার অপরাধীরা আপনার ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে আপনার নামে ফেইক বা ডুপ্লিকেট আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও শেয়ার আপনাকে বিপদে বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
এসব বিপদ থেকে নিরাপদ থাকতে প্রথমেই আপনার নিজের প্রােফাইলের প্রাইভেসি সেটিং ঠিক করে নিন;
ফেইসবুক ওয়ালে ঢুকে উপরে ‘update info তে ক্লিক করলে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা খুলবে। এখানে ডানদিকে তথ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর লিস্ট আছে। নির্দিষ্ট ক্যাটাগরীতে ঢুকে তথ্যের পাশে মাউস নিলেই প্রাইভেসি সেটিংস এর অপশন দেখা যাবে। সেখান থেকে কোন তথ্য কার সাথে শেয়ার করতে চান তা ঠিক করে নেয়া যাবে।
এরপর ফেসবুকে কারা আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবে বা মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠাতে পারবে সেটি নির্ধারণ করে দিন।

ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায়
পােস্ট এর গােপনীয়তা
ইউজার এর শেয়ার করা পােস্ট এর প্রাইভেসি দুইভাবে ঠিক করা যায়।
Settings > privacy > who can see my stuff > who can see your future posts
এ গিয়ে একবারে সকল পােস্ট এর প্রাইভেসি ঠিক করা যায়। আবার, স্ট্যাটাস লেখার সময় স্ট্যাটাসবক্স এর নিচের অপশন থেকে সরাসরি পােস্ট এর অডিয়েন্স নির্বাচন করে দেয়া যায়।

ছবির অ্যালবাম এর গােপনীয়তা
প্রােফাইল পেজ এর Photos ট্যাব এ গিয়ে Albums এ ক্লিক করতে হবে। এরপর কোন অ্যালবাম কারা দেখতে পারে সেটি নির্বাচন করে দিতে হবে।
শুধুমাত্র প্রােফাইল পিকচার এবং কভার ফটো এর অ্যালবাম এর ক্ষেত্রে, অ্যালবাম এর প্রতিটা ছবির জন্য আলাদা অডিয়েন্স নির্বাচন করা যায়। তবে কারেন্ট কভার ফটো সবসময়ই পাবলিক।

আপনার ছবির উপরে থাকা ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনি আপনার পছন্দের অডিয়েন্স নির্বাচন করে দিতে পারেন।
ফ্রেন্ড লিষ্ট অর্গানাইজ করা
এছাড়া কর্মস্থলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আপনার অনেক অভিযােগ থাকতে পারে। কিন্তু এসব নিয়ে ফেসবুকে কথাবার্তা বলবেন না। সােশ্যাল মিডিয়ার যুগে অফিসকর্মীদের ফেসবুক পর্যবেক্ষণ করে থাকে। কাজেই বিপদে পড়বেন।
অফিসের অভিযোগ শেয়ার করা
প্রােফাইল পেজের বাম সাইডবার থেকে ‘friends’ এ ক্লিক করলে ফ্রেন্ডলিষ্ট দেখা যাবে। প্রতিটি ফ্রেন্ড এর নামের পাশে ‘V friends’ অপশন আছে।
সেখানে গিয়ে ‘add to another list সিলেক্ট করে সেখান থেকে ফ্রেন্ডকে নির্দিষ্ট গ্রুপে অ্যাড করে দেয়া যাবে। এভাবে বন্ধু, পরিবার, কলিগ, পরিচিতদের আলাদা গ্রুপ করে রাখলে পােস্টের জন্য অডিয়েন্স নির্বাচনে সুবিধা হয়। তবে সবথেকে ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়া;
ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায়
একাউন্ট হ্যাক হওয়া রোধে স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার
ফেইসবুকে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার কারনেই মূলত আইডি হ্যাক হয়ে থাকে। পাসওয়ার্ড হিসেবে আপনার ফোন নাম্বার, জন্ম তারিখ, বা শুধু নাম্বার বা টেক্সট ব্যবহার করলে খুব সহজেই একজন দক্ষ হ্যাকার আপনার একাউন্টে ঢুকে আপনার তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
তাই সবসময় শব্দ, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টারের সমন্বয়ে কোন স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আবার একই পাসােয়ার্ড বিভিন্ন যায়গায় ব্যবহার করা কিংবা কোথাও লিখে রাখা হলে তাও আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে হ্যাকাররা আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করতে পারে এবং পরবর্তীতে তাদের নেতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে পারে।

কখনােই এধরনের দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত না। আপনার পাসওয়ার্ডটি যদি দুর্বল হয়ে তাহলে আজই আলফানিউমেরিক এবং স্পেশাল ক্যারেকটারের সমন্বয়ে একটি স্ট্রং গ্লাসওয়ার্ড সেট করুন।
অন্য ডিভাইসে ব্যবহার শেষে আইডি লগ-আউট
অন্যের ডিভাইসে ফেইসবুক ব্যবহার করলে, প্রতিবার ব্যবহার শেষে অবশ্যই আপনার আইডি লগ-আউট করবেন। অন্যথায় আপনার পরিচিতজনই আপনার গােপনীয় মেসেজ দেখে ফেলতে পারে বা অন্যকে। আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়ে আপনাকে বিপাকে ফেলতে পারে।

ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায়
অ্যাপস ব্যবহারের সতর্ক
এছাড়াও অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন কুইজ, ছবির ইফেক্ট, পুরস্কার ইত্যাদির প্রলােভন দেখিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য ও অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
এমনকি আপনার ফেইসবুক আইডিটি হ্যাকও হতে পারে। তাই এরকম অজানা অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকুন। এভাবেই, কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে আপনি নিরাপদভাবে ফেইসবুক ব্যাবহার করতে পারেন।
নিচের ভিডিওটি দেখুন
ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন
আমার বিশ্বাস আপনি ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায় বিষয়ক আমাদের এই তথ্যটি ভালোভাবে পড়েছেন এবং ভিডিওটি দেখেছেন। তাহলে চলুন এই সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে জিজ্ঞেস করি। আপনি কমেন্ট-এ আপনার উত্তরটি লিখবেন।
প্রশ্ন-১: ফেইসবুকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কী ধরনের হয়রানি ঘটে?
ক. রাষ্ট্রীয় হয়রানি,
খ. ব্যক্তিগত হয়রানি,
গ. ধর্মীয় হয়রানি,
ঘ. সামাজিক হয়রানি;
প্রশ্ন-২: ফেইসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনটি করা উচিৎ নয়?
ক. যে কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা,
খ. অন্যের ডিভাইসে ব্যবহারের পর একাউন্ট লগ আউট করা,
গ. অনুমতি নিয়ে অন্যের পোষ্ট শেয়ার করা,
ঘ. যে কোন পোস্ট শেয়ারের আগে তার সত্যতা যাচাই করা;
প্রশ্ন-৩: 14liton@$R# কী ধরণের পাসওয়ার্ড ?
ক. অতিদূর্বল পাসওয়ার্ড,
খ. দূর্বল পাসওয়ার্ড,
গ. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড,
ঘ. সাধারণ পাসওয়ার্ড;
প্রশ্ন-৪: অপরিচিত কোন ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার আগে কোন বিষয়ে খেয়াল করা উচিৎ?
ক. তার বন্ধু সংখ্যা কম না বেশি,
খ. পরিচিত কে কে তার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে,
গ. প্রোফাইলে কতটা তথ্য দেখা যায়,
ঘ. তার সর্বশেষ স্ট্যাটাস আপডেট;
প্রশ্ন-৫: ফেইসবুক একাউন্টের নিরাপত্তা বিধানে কোনটি ব্যবহার করা হয়?
ক. স্ট্রং পাসওয়ার্ড,
খ. ফায়ারওয়াল,
গ. অ্যান্টিভাইরাস,
ঘ. অ্যাডব্লকার;
ফেসবুক ব্যবহারের সাইবার ঝুঁকি এবং নিরাপদ থাকার উপায়: এই তথ্যটি কোনো প্রকার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় বরং জনগণের কল্যাণে বহুল প্রচারের লক্ষ্যে অধ্যয়ন ডট কম এর পাঠকদের সুবিদার্থে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সরাসরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর সূত্র থেকে সংগৃহিত। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকলে রিমুভ করার অনুরোধ করতে পারেন: OdhayonOnline@gmail.com অথবা সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
অধ্যয়ন ডট কম এর সকল আপডেট সবার আগে পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক ও ফলো রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। প্রতিদিন শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতে আমাদের দৈনিক শিক্ষা ক্যাটাগরি দেখুন।
1 Comment
Pingback: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ যেভাবে ছড়ায় - অধ্যয়ন