সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনে আশপাশের পরিবেশের প্রভাব
নীলা, রনি ও সালমা স্কুলে আসার পথে দেখল একটা খালের পাশে অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কাছে যেতে দেখতে পেল অনেক মাছ মরে ভেসে উঠেছে। দেখে ওদের মন খারাপ হয়ে গেল।
সালমা বলল আচ্ছা মাছগুলো কেন মারা গেল?
প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর নীলু বলল, আমার মনে হয় খালের পানি খারাপ হয়ে গেছে, তাই মাছ মরে যাচ্ছে, কারণ দেখছিস না পানি কেমন যেন কালো রঙের হয়ে গেছে।
রনি বলল, আরও দেখ খালের পাশে একটা কারখানা আছে এবং ওই কারখানার সব ময়লা পানি খালে গিয়ে পড়ছে।
আয়েশা বলল, আমাদের বাড়ির পাশে একটা ইটভাটা আছে, ওখানকার কালো ধোঁয়া যখন বেশি বের হয়, তখন আমার খুব শ্বাসকষ্ট হয়।
সাকিব বলল, কলকারখানা দেখছি অনেক কিছু সমস্যা তৈরি করছে। আচ্ছা আমরা তো অনুসন্ধান করতে পারি কলকারখানা আমাদের পরিবেশের উপর আরও কী কী প্রভাব ফেলছে?
প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা
আয়েশা বলল, তাহলে তো আমাদের একটা কারখানায় যেতে হবে দেখতে।
রিনা বলল, হ্যাঁ আবার অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে কিছু প্রশ্নও তৈরি করতে হবে। তাহলে চলো আমরা খুশি আপাকে ব্যাপারটা বলি।
খুশি আপা সব শুনে বললেন, এ তো ভালো কথা, তাহলে তোমরা কারখানায় গিয়ে কী কী দেখতে চাও তার প্রশ্ন তৈরি করে ফেলো।
তখন ওরা দলে ভাগ হয়ে প্রশ্ন তৈরি করল:
নিকিতার দলের প্রশ্ন:
১. কারখানাটি থেকে কী উৎপাদন করা হয়?
২. কী কী ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়?
৩. কাঁচামালের উৎস কোথায়?
৪. কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়?
৫. জ্বালানির উৎস কোথায়?
৬. উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে আর কী ধরনের বর্জ্য তৈরি হচ্ছে?
৭. বর্জ্যগুলো কোথায় যাচ্ছে?
সাকিব বলল আমরা তো আমাদের প্রশ্নগুলোকে কয়েকটা বিষয়ে ভাগ করে অনুসন্ধান করতে পারি, যেমন কাঁচামাল ও জ্বালানি। মিলি বলল, আবর্জনাও আছে কিন্তু। এভাবে সবাই মিলে উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের অনুসন্ধানের জন্য বিষয় চূড়ান্ত করল।
কাঁচামাল বিষয়ের অনুসন্ধানের ছক
কাঁচামাল | কাঁচামালের উৎস | কাঁচামাল সংগ্রহ ও ব্যবহারের কারণে পরিবেশের উপর প্রভাব | ফলাফল |
কাঁচামাল ব্যবহার করে দ্রব্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় জ্বালানী/ শক্তি বিষয়ক অনুসন্ধানের ছক
জ্বালানী/শক্তি | জ্বালানী/ শক্তির উৎস | জ্বালানী/ শক্তি সংগ্রহ ও ব্যবহারে ফলাফল পরিবেশের উপর প্রভাব | ফলাফল |
বর্জ্য বিষয়ক অনুসন্ধানের ছক
বর্জ্য | বর্জ্যের উৎস | পরিবেশের উপর বর্জ্যের প্রভাব | ফলাফল |
তারপর ওরা খুশি আপার সহযোগিতায় একটি কারখানায় গেল পরিদর্শন করতে এবং অনুসন্ধান শেষে তারা তাদের তথ্যসমূহ সবার সামনে দলগতভাবে উপস্থাপন করল।
চলো, আমরাও ওদের মতো করে প্রশ্ন তৈরি করে কারখানা পরিদর্শনে যাই। |
নাজিফা ও তার চার বন্ধুর তৈরি করা কাঁচামাল সংক্রান্ত অনুসন্ধান:

দেখ নাজিফা কী সুন্দর করে ছবি এঁকে, লিখে পরিবেশের উপর প্রভাবগুলো ফুটিয়ে তুলেছে। এভাবে তোমরাও সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ, আলোচনা বা লিখিত প্রশ্নমালা ব্যবহার করে যা কিছু জেনেছ-তা গুছিয়ে উপস্থাপন করে দেখাতে পারবে তো? তোমরা নিশ্চয় পারবে।
পৃথিবীব্যাপী প্রভাব
পরের দিন ক্লাসে রনি বলল, আমরা তো আমাদের আশপাশের পরিবেশের উপর কলকারখানার প্রভাব বের করলাম, কিন্তু এ প্রভাব কি শুধু আমাদের চারপাশেই থাকে, নাকি পৃথিবীজুড়েই পড়তে পারে?
মুনিয়া বলল, কলকারখানা তো সব দেশেই আছে, তাহলে তো পৃথিবীর অনেক সমস্যা হচ্ছে।
খুশি আপা বললেন, ঠিক বলেছ মুনিয়া, চলো আমরা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে তা খুঁজে বের করতে পারি কিনা দেখি।
এখন তিনটি দলে ভাগ হয়ে পরীক্ষাগুলো শুরু করল।
প্রথম দল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে এক খণ্ড বরফ, একটি পাত্র ও একটি ঘড়ি নিয়ে; দ্বিতীয় দল রোদের মধ্যে এক খণ্ড বরফ একটি পাত্র ও একটি ঘড়ি নিয়ে; এবং ৩ নং দল দুটি থার্মোমিটার, একটি মুখবন্ধ কাঁচের গ্লাস ও একটি থার্মোমিটার নিয়ে যাবে। ১ ও ২ নং দল তাদের বরফটি সম্পূর্ণ গলে যাওয়ার সময় পরিমাপ করবে।
৩ নং দল তাদের দুটি থার্মোমিটারে একটিকে রোদের মধ্যে রাখবে এবং অন্যটি কাচের গ্লাসে রেখে মুখ বন্ধ করে রোদের মধ্যে রেখে দেবে এবং কিছুক্ষণ পর পর তাপমাত্রার পরিমাণ রেকর্ড করবে। পরবর্তী ১০.১৫ মিনিট ওরা যার যার অবস্থানে অপেক্ষা করবে।
চলো আমরাও ওদের মতো করে দলে ভাগ হয়ে পরীক্ষাগুলো করে দেখি কী দাঁড়ায়
এরপর ৩টি দলই ক্লাসে এসে কারণসহ তাদের অভিজ্ঞতা ছক পেপারে লিখে অন্য দুই দলের সঙ্গে শেয়ার করল।
১ ও ২ নং দলের অভিজ্ঞতা:
১ নং দল | বরফ গলার সময় | কারণ |
২ নং দল |
৩ নং দলের অভিজ্ঞতা:
১ নং থার্মোমিটার | ১০-১৫ মিনিট পরে তাপমাত্রা—- |
২ নং থার্মোমিটার | ১০-১৫ মিনিট পরে তাপমাত্রা– |
মিলি বলল আমরা তো পরীক্ষণে দেখলাম যেখানে গাছ ছিল না সেখানে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেল।
সাকিব বলল, তার মানে গাছপালা কমে গেলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
খুশি আপা বললেন, সেটা আসলে কেমন হবে চলো আমরা একটা কমিকস পড়ে তা দেখি:
সবুজের পথে পৃথিবী












রনি বললো, ভালো, তবে সত্যিই যদি এভাবে গ্রিণ হাউজ গ্যাস বেড়ে যায় তাহলে তো ভয়ংকর অবস্থা হবে। মিলি বললো, শুধু কি তাই পৃথিবীর দূষণ ও তো বেড়ে গেছে!
রিমি বললো, আপা কমিক্সটা পড়ে তো অনেক কিছু জানতে পারলাম, কিন্তু পৃথিবীর জন্যে খুব চিন্তা হচ্ছে।
খুশি আপা বললেন হ্যা কমিক্সে পৃথিবী নষ্ট হওয়ার অনেক কারণ আমরা দেখেছি । চলো এখন আমরা এসব বিষয়ে যা যা জানতে পেরেছি তা ছকে পূরণ করে ফেলি।
তখন ওরা দলে ভাগ হয়ে পৃথিবী নষ্ট হওয়ার কারণ এবং সেগুলো কেন হলো তা খুঁজে বের করে ছক পূরণ করলো এবং বিষয়গুলো ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করলো–
দূষণ | গ্রিনহাউস ইফেক্ট | গ্লোবাল ওয়ার্মিং | জলবায়ু পরিবর্তন |
---|---|---|---|
১. ২. ৩. …………….. | ১. ২. ৩. …………….. | ১. ২. ৩. …………….. | ১. ২. ৩. …………….. |
কাজ শেষে মিলি বললো, খুব ভালো হলো যে আমরা পৃথিবীর জন্যে যা ভালো নয় তা চিহ্নিত করতে পেরেছি।
টিনা বললো, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে তো মেরু অঞ্চলের বরফ খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে, তাহলে তো ওখানকার প্রাণিদের বেঁচে থাকা কষ্টের হয়ে পড়ছে।
সাকিব বললো, আমরা তো পরীক্ষা করে দেখেছিলাম যেখানে গাছ ছিল সেখানে বরফ গলতে বেশি সময় লেগেছিল।
মিলি বললো, তা তো ঠিক কিন্তু আমরা মানুষরা তো দিন দিন কারণে অকারণে অনেক গাছ কেটে ফেলছি।
রিমি বললো ইশ আমরা মানুষরা কেন যে এত খারাপ কাজ করি!
খুশি আপা বললেন কিন্তু আমরা মানুষরাই তো আবার ভালো কাজের মাধ্যমে পৃথিবীকে ভালো রাখতে পারি— নাকি! সবাই বললো ঠিক ঠিক।
প্রাকৃতিক কাঠামোর পরিবর্তনে সামাজিক জীবনে প্রভাব
আজ খুশি আপা ক্লাসে আসার পরে সাকিব বলল, আপা আমরা তো দেখলাম আমাদের দ্বারা প্রকৃতির কত কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে যদি প্রকৃতির সব পাল্টে যেতে থাকে, তাহলে তো আমাদের জীবনেও তার বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে-তাই না?
মিলি বলল, এ ব্যাপারটা তো আমরা ‘শ্যামলী’ গল্পেই দেখেছিলাম।
খুশি আপা বললেন, ঠিক তাই, আচ্ছা চলো তো দেখি আরেকবার শ্যামলী গ্রামে প্রকৃতির কোন কোন পরিবর্তনে মানুষের জীবনে ঠিক কী কী প্রভাব পড়েছিলো।
তখন তারা দলে ভাগ হয়ে পরিবর্তনের প্রভাবগুলো খুঁজে বের করল।
এরপর খুশি আপা বললেন, আমরা তো সবাই নদী দেখেছি তাই না? আচ্ছা নদীর ধারে কী কী থাকতে দেখেছ তোমরা?
শিমুল বলল, আপা আমার মামার বাড়ির পাশে একটা নদী আছে, সেই নদীর ধারে ধানের জমি ছিল, আবার কিছু দূরে কয়েকটা বাড়িও ছিল।
রিমি বলল, আপা আমরা ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম বেড়াতে। ওখানে নদীর পাশে কৃষিজমি এবং তার একটু পাশে একটা ইটভাটা দেখেছি।
খুশি আপা বললেন, আচ্ছা তোমাদের সবার দেখা নদীর ধারণা তো পেলাম। এখন যদি বলি তোমাকে একটা নদী বানাতে, যার চারপাশে তোমরা তোমাদের ইচ্ছেমতো ফসলের জমি, শহর, কারখানা, ঘর-বাড়ি প্রভৃতি স্থান বসাতে পারবে, তাহলে কেমন হবে বলোতো?
সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল।
রিভার পাজল তৈরির নিয়ম
খুশি আপা তখন তাদের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যেতে বললেন। তারপর বললেন, সবার বইয়ের শেষে পরিশিষ্ট অংশে রিভার পাজল সংযুক্ত আছে। সেখান থেকে কাঁচি দিয়ে পাজল এর পৃষ্ঠা দু’টি কেটে আলাদা করে নেই। তারপর ছবিতে যে চারকোনা বক্স এর ভিতর টুকরো টুকরো ছবি রয়েছে, সেই ছবিগুলো কেটে ছোট ছোট ছবিগুলো আলাদা করে ফেলি। তারপর বললেন, প্রতিটি দল ‘উৎস’ অংশটি, একটি নদীর শুরুতে, অর্থাৎ তাদের ব্যবহৃত ছক পেপারের সবচেয়ে উপরের দিকে এবং ‘মুখ’ অংশটি, নদীর শেষ, যা ছক পেপারের নিচের দিকে রাখবে। তখন তারা দলীয়ভাবে প্রতিটি দল একটি করে নদীর গতিপথ বানালো। বানানো শেষ হলে টেপ দিয়ে ছক পেপারে তাদের নদীটিকে আটকে দিল এবং পাশে লিখল তাদের নদীর পাশে তারা কী কী জিনিস/স্থানের অবস্থান চিহ্নিত করেছে। |
চলো আমরাও ওদের মতো করে দলে ভাগ হয়ে
পাজলের সাহায্যে আমাদের নদী বানাই।
স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব
খুশি আপা প্রত্যেকের নদী দেখে সবাইকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন। তোমরা প্রত্যেকে খুব সুন্দর নদী বানিয়েছ, এখন ভাবো তো এখানে যদি নদীটি না থাকে, নদীর গতিপথের কোনো পরিবর্তন হয়, নদীর পাড় ভাঙা শুরু হয় তাহলে কেমন হবে?
সবাই তো খুব চিন্তায় পড়ে গেল!
তখন খুশি আপা তাদের কিছু ছবি দেখালেন।

তোমাদের বানানো নদীর সঙ্গে এ রকম আরও কয়েকটি ছবি দেখো। নদীর এরকম হবার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছ কি?
ফাতেমা বলল, আপা নদী যদি চলার পথে কোনো বাধা পায়, তাহলে তার গতিপথ পাল্টে ফেলতে পারে।
সাকিব বলল, হ্যাঁ যেমন যদি নদীতে বাঁধ দিই। আমরা তো আমাদের বানানো নদীতে একটা বাঁধ দিয়েছিলাম আহা কি যে ভুল হয়ে গেল।
খুশি আপা বললেন, না সাকিব তুমি ভুল করোনি, আমরা আমাদের প্রয়োজনে অনেক সময় নদীতে বাঁধ দিই কিন্তু সেটার পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে হবে।
রনি বলল, আপা নদীটি যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে তো আশপাশের কৃষিকাজের পানির সমস্যা হবে। খুশি আপা বললেন, শুধু কি তাই! আচ্ছা চলো, তাহলে আমরা খুঁজে বের করি কী কী প্রভাব পড়তে পারে। তখন তারা দলীয়ভাবে ছক আকারে নদীভাঙন, নদীর শুকিয়ে যাওয়া এবং গতিপথ পরিবর্ত- নের কারণ ও প্রভাব অনুসন্ধান করে বের করল।
নদীর অবস্থা | কারণ | সামাজিক জীবনে প্রভাব |
---|---|---|
নদীভাঙন | ১. ২. ৩. ৪………. | ১. ২. ৩. ৪………. |
নদীর শুকিয়ে যাওয়া | ১. ২. ৩. ৪………. | ১. ২. ৩. ৪………. |
গতিপথ পরিবর্তন | ১. ২. ৩. ৪………. | ১. ২. ৩. ৪………. |
চলো, আমরাও ওদের মতো করে দলে ভাগ হয়ে
নদীর পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব ছকে পূরণ করি।
প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব
আজ ক্লাসের শুরুতে সৃজিতা বলল, আপা কাল বাসায় গিয়ে যখন আমাদের নদী নিয়ে অনুসন্ধানের কথা বলছিলাম, তখন আমাদের সাহায্যকর্মী খালা বলল তার জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
খালা বলল, তাদের বাড়ি ছিল যমুনা নদীর পাড়ের একটি গ্রামে। তাদের বাড়ির একটু দূরে ছিল যমুনা নদী। তাদের পুকুর ভরা মাছ ছিল, অনেক ধানের জমি ছিল। তাদের অনেক ধান হতো, ফসলের জমিতে নানা ধরনের ফসল হতো। খালা বলল যে নদীর ধারের জমি নাকি অনেক উর্বর হয়।
অনেক ভালো কৃষিকাজ করা যায় এধরণের জমিতে। কিন্তু নদীভাঙনে তাদের আজ আর ঘরবাড়ি জমি পুকুর কিছুই নেই। তার বর এখন শহরে রিকশা চালায় আর সে আমাদের বাসায় সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করছে। জানেন আপা, খালা কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করছিল। আমার খুব খারাপ লাগছিল।
খুশি আপা বললেন, আহারে আমাদেরও সবার খুব খারাপ লাগছে তোমার খালার জীবনের কথা শুনে। তোমরা জানো এরকম ঘটনা কিন্তু শুধু সৃজিতার খালার জীবনে ঘটেছে তাই নয়, এরকম বহু মানুষ আছে যাদের জীবনের কাহিনি সৃজিতার খালার সঙ্গে মিলে যাবে।
শিহান বললো, আচ্ছা প্রাচীনকালেও তো এখনকার চেয়েও অনেক বড় বড় নদী ছিল। আর প্রাচীনকালে যেহেতু নদীপথই ছিল, যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম, তাই নিশ্চয় সেখানের মানুষের জীবনেও নদীর অনেক প্রভাব ছিল তাই না?
সাকিব বলল, হ্যাঁ আমি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইতে পড়েছি মিসরীয় সভ্যতা নীল নদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।
রনি বলল, চলো তাহলে আমরা অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করি প্রাচীন মানুষের নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাস
খুশি আপা বললেন, বেশ বেশ এমন অনুসন্ধানী মনই তো চাই।
টিংকু বলল, আমরা আমাদের লাইব্রেরীতে তো দেখতে পারি, এ সম্পর্কিত কোনো বই আছে কিনা।
খুশি আপা বললেন, হ্যাঁ তোমরা এ কাজটি করার জন্য ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) সাহায্য নিতে পারো আবার বড়দের সাহায্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারো।
ওরা তখন দলীয় আলোচনা ও বুকলেটের মাধ্যমে প্রাচীন মানুষের নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাস অনুসন্ধান করে পৃথিবীর মানচিত্রে তা উপস্থাপন করল এবং সেসকল সভ্যতার দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লিখল যা নদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
চলো আমরাও ওদের মতো করে প্রাচীন মানুষের নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাস অনুসন্ধান করে পৃথিবীর মানচিত্রে তা চিহ্নিত করি এবং সেসব সভ্যতার ২টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লিখি যা নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। |
খুশি আপা তাদের কাজের জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানালেন।
মিলি বলল আমরা দেখলাম যখন উপযুক্ত পরিবেশের অভাব হয়েছে তখনই প্রাচীন সভ্যতাগুলো সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আবার কিছু কিছু সভ্যতা বিলীনও হয়ে গেছে।
রনি বলল, প্রাচীনকালে মানুষ ছিল কম এবং বসবাসের জায়গা ছিল অনেক, আবার তাদের স্থানান্তরিত হতে কোনো অনুমতি যেমন পাসপোর্ট বা ভিসার প্রয়োজন ছিল না, তাই তো তারা নিজেদের পছন্দমতো জায়গা খোঁজার পথ পেয়েছিল। কিন্তু এখন তো পৃথিবীতে মানুষের তুলনায় বসবাসযোগ্য জায়গার পরিমাণ অনেক কম।
আবার আমরা ইচ্ছেমতো কোনো জায়গায় গিয়ে বসবাসও করতে পারবনা। তাহলে এখন যদি আমরা নিজেদের বসবাসের জায়গা খারাপ কার্যক্রমের দ্বারা নষ্ট করে ফেলি, তাহলে কী হবে?
সাকিব বলল, তাহলে তো আমাদেরও বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের বসবাসের জায়গা ভালো রাখতে চেষ্টা করি, তাহলে তো দুশ্চিন্তা কিছুটা কমানো যেতে পারে, তাই না?
খুশি আপা বললেন এই তো বিবেচক মানুষের মতো কথা। প্রকৃতির যেকোনো কাঠামো যদি পরিবর্তন হয় তার প্রভাব আমাদের সামাজিক জীবনে অবশ্যই পড়বে। তবে এসব কাজ করতে গেলে বড়দের একটু সাহায্য লাগবে।
রিমিতা বলল, আপা আমাদের প্রায় সবার বাসায় বা আমাদের এলাকায়ও তো অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন, যারা এধরনের কাজে আমাদের সাহায্য করতে পারেন।
মিলি বলল, আর যেহেতু আমরা প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করছি, তাই এলাকার প্রাচীন মানুষদেরই এ কাজে আনা ভালো হবে, কারণ তাদের অভিজ্ঞতাও সবার থেকে বেশি। সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল।
খুশি আপা বললেন, বাহ তাহলে তো খুবই ভালো হয়। তাহলে তোমরা আলোচনা করে বের করো তোমাদের এলাকাকে ভালো রাখার মতো তোমরা কোন কোন কাজ করতে চাও। তখন তারা দলীয় আলোচনা করে কয়েকটি কাজের তালিকা বানালো যা তারা এলাকার বয়স্ক মানুষদের সাহায্য নিয়ে করতে চায়।
এলাকাকে ভালো রাখার কাজের তালিকা |
১. এলাকার রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা |
২. এলাকায় ডাস্টবিনের ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা |
৩………………………………………… |
চলো, আমরাও ওদের মতো করে আমাদের এলাকা ভালো রাখার কিছু কাজের তালিকা তৈরি করি। যা এলাকার প্রবীণ মানুষের সহায়তায় করতে পারি। |
সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করল ওরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে ভবিষ্যতে আমাদের পৃথিবী আমাদেরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ওরা শুরু করবে এলাকার ছোটো ছোটো কাজ দিয়ে, কিন্তু এমন ছোটো ছোটো কাজ একত্র হয়ে পুরো পৃথিবীকে ভালো রাখার জন্য ভূমিকা রাখবে।
- আরো পড়ুন : প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো