
পেশার রূপ বদল। তোমরা একটু ভাবো, সেলুনগুলো যদি কখনো চুল কাটা বন্ধ রাখে, তখন আমাদের সবার চুলের কী হাল হবে! চুল যারা কেটে দেন তাদের ছাড়া আমরা খুব অসহায় অনুভব করি, তাই না! ঠিক এরকম যদি প্রতিদিনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজে না আসেন সেক্ষেত্রে আমাদের কী অবস্থা হতে পারে, বলোতো!
পেশার ধারণা
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে পুনরায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সারাদিন আমরা কত ধরনের কাজ করে থাকি, তোমরা তা নিশ্চয়ই জানো। পেশার রূপ বদল।
যেমন- শিক্ষার্থীরা বিদ্যলয়ে পড়াশুনা করে, অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করে দিন কাটিয়ে দেয়, কেউ হয়তো মালামাল এবং যাত্রী পরিবহনের জন্য ট্রাক বা বাস চালান, গ্রামে কৃষক মাঠে ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ করেন, জেলেরা নদীতে মাছ ধরেন, শ্রমিকরা উৎপাদনের জন্য কারখানায় কাজ করেন, শিক্ষকবৃন্দ শ্রেণিকক্ষে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কাজ শব্দটির অর্থ অনেক ব্যাপক। মূলত কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শারীরিক বা মানসিক কর্মকাণ্ডই হচ্ছে কাজ। এই কাজের উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য যে কাজ করে এবং তার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে, তাকে পেশা বলে। পেশার রূপ বদল।
সমাজে প্রত্যেক পেশার মানুষের কাজ বা দায়িত্ব ভিন্ন। কাজের ভিন্নতার জন্য প্রতিটি পেশার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা, দক্ষতা ইত্যাদির মধ্যে ভিন্নতা থাকে। তবে দেশ এবং সমাজের সুষম উন্নয়নে সব পেশার মানুষের অবদান রয়েছে।
সমাজে কোনো পেশার কাজই অপ্রয়োজনীয় বা ছোট বা বড় নয়। মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একজন চিকিৎসকের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরও প্রয়োজন আছে। পেশার রূপ বদল।
যেকোনো প্রতিষ্ঠান (যেমন- বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, কারখানা ইত্যাদি) পরিচালনায় বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রয়োজন হয়। চলো, একটি হাসপাতালে কত ধরনের পেশার মানুষ কাজ করে তা খুঁজে বের করি। চিত্রে কয়েকটি পেশার নাম দেওয়া আছে, বাকিগুলো নিজেরা লিখি। হাসপাতাল পরিচালনায় কোন পেশার কী ভূমিকা তা-ও জানার চেষ্টা করি।

তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ, হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পেশার মানুষই গুরুত্বপূর্ণ। এদের যেকোনো একটি পেশার অনুপস্থিতি সুষ্ঠুভাবে হাসপাতাল পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটাবে। একেক পেশার মানুষের দায়িত্ব একেক রকমের। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করে বলেই আমাদের সমাজ এতো সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পেশার রূপ বদল।
এবার, দলগত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের এলাকার মানুষের বিভিন্ন পেশার তালিকা তৈরি করি।
পেশার রূপ বদল
দৃশ্যপট - ১ বেশ কিছু দিন আগের কথা। গ্রামের হাটে চম্পার বড় ভাইয়ের একটি ছোট্ট দোকান ছিল। গ্রামের লোকজনের হাতে হাতে তখন মোবাইল ফোন ছিল না। ফোনে কথা বলার জন্য সবাই এই দোকানে লাইন দিত। তারা মোবাইলে এক মিনিট কথা বলার জন্য সাত টাকা করে দিত। রমরমা ব্যবসায় বেশ ভালোই চলছিল চম্পাদের পরিবার। কিন্তু বছর কয়েকের মধ্যেই সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন চলে এলো। তাতে চম্পার ভাইয়ের দোকানের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। খুব খারাপ অবস্থায় পড়ল চম্পারা। কোনো রকমে তাদের দিন কাটছিল। পাশের বাড়ির সামাদ এ রকম পরিস্থিতিতে চম্পার ভাইকে ইন্টারনেটের কথা বলল। সব শুনে দোকানে সে ইন্টারনেটের ব্যবসা শুরু করল। পেশার রূপ বদল। ধীরে ধীরে আবার তার দোকানে লাইন পড়ে গেল। এখন সে অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনও করে। নতুন ব্যবসায় আবার ঘুরে দাঁড়াল চম্পার পরিবার। সুখের দিন ফিরে এলো তাদের ঘরে।
■ দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে চম্পার ভাইয়ের ব্যবসায় কী পরিবর্তন এলো? |
---|
■ চম্পার ভাই কেন নতুন ব্যবসা শুরু করল? |
---|
আগে আমাদের দেশে কী ধরনের পেশা ছিল এবং পেশার মানুষগুলো কীভাবে কাজ করতেন তা নিচের চিত্রগুলো দেখে বোঝার চেষ্টা করি।

বিভিন্ন খাতে পেশার কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন নতুন কী ধরনের পেশা সৃষ্টি হয়েছে তা নিচের চিত্র থেকে বোঝার চেষ্টা করি। পেশার রূপ বদল।

পরিবারে বাবা-মা বা অন্য কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ বছর আগে বিভিন্ন খাতে পেশার ধরন ও কাজ কেমন ছিল তা নিচের ছকে লিপিবদ্ধ করি। পেশার রূপ বদল।
ছক ২.১: সময়ের সঙ্গে পেশার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ
পেশার ক্ষেত্র | বর্তমানে কেমন | ২০ বছর আগে কেমন ছিল | পরিবর্তনের কারণ |
---|---|---|---|
শিল্প | ইলেট্রিক বা অটোমেটিক মেশিনে জামাকাপড় সেলাই করা হয়। তেল উৎপাদনের কাজে মেশিন ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম, কাচ ও চীনা মাটি দিয়ে কারখানায় মেশিনে হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন তৈরি হয় । | হাতে ঘোরানো মেশিনে ও সুই-সুতা দিয়ে জামা-কাপড় সেলাই করা হত। তেল উৎপাদনের কাজে ঘানি ব্যবহার করা হতো। কুমার মাটি দিয়ে স্বহস্তে হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন তৈরি করতো । | প্রযুক্তির উন্নয়ন |
তথ্য আদান-প্রদান | |||
কৃষি | |||
চিকিৎসা | |||
যাতায়াত | |||
অন্যান্য |
আগের এবং বর্তমানের পেশার তুলনামূলক চিত্রে আমরা দেখলাম যে আগের অনেক পেশাই বর্তমানে আর নেই এবং অনেক নতুন নতুন পেশার উদ্ভব হয়েছে। এবারে আমরা কোভিড-১৯ মহামারি সময়ের এ-সম্পর্কিত একটি পত্রিকার রির্পোট দেখব। যেখানে দেখানো হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে মানুষ প্রযুক্তির সহায়তায় এবং তার উদ্ভাবনী এবং সমস্যা সমাধান দক্ষতা ব্যবহার করে কীভাবে তারা নতুন পেশার সৃষ্টি করছে। পেশার রূপ বদল।
দৃশ্যপট ২ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেদী হাসানকে জুন মাসে অফিস জানিয়ে দেয় নতুন চাকরি খোঁজার জন্য; হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কী করবেন তিনি এখন, চল্লিশ বছর বয়সে এসে। এরপরই পরিবারের পরামর্শে যোগাযোগ করেন গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে। কার বাড়ির কোন পণ্য ভালো, খোঁজ নিয়ে খুলে ফেলেন অনলাইনে তরতাজা খাবারের ব্যবসা। শুরুতে যে তিন লাখ টাকা ব্যয় করলেন সেটি তার আগের চাকরি থেকেই উপার্জিত। ধীরে ধীরে তার অনলাইনভিত্তিক খাবারের ব্যবসা বেশ জমে উঠল। প্রায় চার বছর আগে ভিন্নধর্মী একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন সায়েদা রহমান। নয়জন কর্মী নিয়ে আড্ডার মতো একটা জায়গা করে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে তিনি হাজির হতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের থাবায় তার রেস্টুরেন্টটি তিন মাস বন্ধ থাকে। এরপর তিনি নিজেই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আর পেরে উঠতে পারছিলেন না। নয় কর্মীকে প্রথম দু'মাস বেতন দিলেও এখন পুরোপুরি বন্ধ সব কার্যক্রম। আইসোলেশনের দিনগুলোতে সারাক্ষণ ভেবেছেন সুস্থ হওয়ার পরে কী করবেন। নিজের গাড়ি না থাকায় তার অ্যাপভিত্তিক চালক স্বামীও বেকার। কিন্তু সায়েদা রহমান এবং তার স্বামী হাল ছাড়ার লোক নয়। করোনা থেকে সেরে উঠে তারা দুজনে মিলে শুরু করলেন নতুন ব্যবসা। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংকলিত (২৩/০৭/২০২০)
সায়েদা রহমান নতুন কী কী পেশায় যেতে পারেন, তার জন্য কিছু নতুন আইডিয়া দাও।
পেশার ধরন পরিবর্তনের কারণ
একসময় গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা ছিল, ফলে মানুষ হেঁটে বা গরুর গাড়িতে যাতায়াত করত এবং সে সময় গাড়োয়ান (গরুর গাড়ির চালক) নামের একটা পেশা ছিল যা এখন আর নেই। এমনকি গরুর গাড়িও আজকাল প্রায় দেখাই যায় না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পেশার রূপ বদল।
আবার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে মেশিন বা বৈদ্যুতিক মোটরের সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই এখন মেশিন চালিত রিকশা বা ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখানে আগের গাড়িয়ান পেশা বিলুপ্ত হয়ে অটো ড্রাইভারের নতুন পেশার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে আরও অনেক নতুন পেশার সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন অনেক পেশার উদ্ভব হবে যা এখন আমাদের কল্পনারও বাইরে। পেশার রূপ বদল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ও দেশীয় পেশা পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো পেশার পরিবর্তন হয় স্থানীয় ও জাতীয় পরিস্থিতি ও চাহিদা পরিবর্তনের কারণে; যেমন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা), স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, শিল্প-বিপ্লব, ইত্যাদি। পেশার রূপ বদল।
তবে পেশার পরিবর্তন যে কারণেই হোক না কেন, আমাদের তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। চলো নিচের কবিতার লাইন দুটি আমরা সবাই একত্রে আবৃত্তি করি-
সময় বদলায়, সাথে বদলায় পেশা
দিনবদলে মানিয়ে নেয়া হোক সবার প্রত্যাশা
পেশার মৌলিক দক্ষতা
যেকোনো পেশায় কাজ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে কিছু দক্ষতা আছে যেগুলো প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যেমন- সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করা, সমস্যার সমাধান করা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, ফলপ্রসূ যোগাযোগ করা, প্রয়োজনে অভিজ্ঞ/অন্যের সহায়তা নেওয়া, নতুন কিছু তৈরি/উদ্ভাবন করা প্রভৃতি। পেশার রূপ বদল।
আবার কিছু দক্ষতা আছে যেগুলো সংশ্লিষ্ট পেশা-সংক্রান্ত, যেগুলো আমাদের আগে থেকেই শিখতে হয়। পেশা শুরু করার আগে সেই দক্ষতাগুলো অর্জন না করলে অনেক পেশা আছে যা শুরুই করা যায় না। পেশার রূপ বদল।
আমার ভালো লাগে এমন একটি স্থানীয় পেশা নির্বাচন করি। স্থানীয় এ পেশায় কাজ করে এমন একজন পেশাজীবীকে খুঁজে বের করি। বাবা-মা অথবা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কারও সহায়তা নিয়ে ওই পেশাজীবীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। নিচের ছক অনুযায়ী এ পেশায় কাজ করতে গেলে কী কী মৌলিক বিষয় বা বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করি।
ছক ২.২: পেশার মৌলিক দক্ষতা অনুসন্ধান
পেশা | অর্জনযোগ্য দক্ষতাসমূহ |
---|---|
পেশার নাম: _______________________________________ _________________________________________________ পেশাজীবীর নাম: ___________________________________ _________________________________________________ সাক্ষাৎকারের তারিখ: ________________________________ _________________________________________________ | মৌলিক বিষয় বা দক্ষতা : _____________________________ __________________________________________________________________________________________________ বিশেষ বিষয় বা দক্ষতা: _______________________________ ____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ |
কেস ১: সেরা রাঁধুনি রাশিদা খাতুন

রাশিদা খাতুনকে কে-না চেনে! রাশিদা খাতুনের রান্না ছাড়া আমাদের এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান যেন চিন্তাই করা যায় না। বিয়ের অনুষ্ঠান, বৌভাত, গায়ে হলুদ, বিবাহ বার্ষিকী, সুন্নাতে খাতনা, পূজা-পার্বণ বা অন্য কোনো বড় অনুষ্ঠান রাশিদা বাবুর্চি না হলে কেন যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তিনি আমাদের অতি পরিচিত, সবার প্রিয় ‘রাশিদা বাবুর্চি’। পেশার রূপ বদল।
রাশিদা বাবুর্চির খাবার খেয়ে তার রান্নার প্রশংসা করেনি এমন লোক মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি আমাদের এলাকায় ‘সেরা রাঁধুনী’ হিসেবে স্বীকৃত।
রাশিদা বাবুর্চি কীভাবে রান্না শিখল, আমরা কী তা জানি? খাবার এবং রান্নার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল তার ব্যাপক আগ্রহ। রাশিদার মা যখন রান্না করত তখন থেকেই তিনি খেয়াল করত মা কীভাবে রান্না করেন? রাশিদার মা-ও ভালো রান্না করতেন। মুলতঃ রাশিদার মায়ের কাছ থেকেই তার রান্নার হাতে খড়ি। পেশার রূপ বদল।
রান্না নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে পরীক্ষা করত, নতুন নতুন খাবার তৈরি করতেন, বাড়িতে আর সকলকে খাওয়াতেন। এরপর বড় হয়ে তিনি রান্না শেখার কোর্স করেছিলেন। প্রথমে তিনি অনুরোধে বাড়ির আশে-পাশের ছোট-খাট অনুষ্ঠানে রান্না করত। এরপর ধীরে ধীরে নাম-ডাক ও সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
এখন কয়েক হাজার লোকের অনুষ্ঠানে রান্না তার কাছে কোনো ব্যাপার না। তার রান্নার স্বাদ যেন মুখে লেগে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার পাশাপাশি সে হোম-মেইড ফুড ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেন। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ জন লোকের খাবার তৈরি করেন এবং বিভিন্ন বাড়িতে, অনুষ্ঠানে তা সরবরাহ করেন।
বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং রান্নায় নতুনত্ব এবং গুণগত মানকে বজায় রেখে তিনি তার বাবুর্চির কাজ এবং ফুড ডেলিভারি ব্যবসাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছেন। পেশার রূপ বদল।
রাশিদা খাতুন কী কী দক্ষতা অর্জন করেছিলেন? তিনি কীভাবে ‘সেরা রাঁধুনী’ হয়েছিলেন? |
কেস ২ : আমাদের বিধান দর্জি

আমাদের এলাকার বিধান ত্রিপুরা একজন নামকরা দর্জি। তিনি ‘বিধান ফ্যাশন হাউস ও টেইলার্স’ এর মালিক। বিধানের তৈরি জামা-কাপড় আমাদের এলাকায় খুব জনপ্রিয়। অনেকের কাছে তিনি ‘বিধান দর্জি’ নামে পরিচিত। অনেক কষ্ট করে বিধান আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। পেশার রূপ বদল।
বিধানের বয়স যখন ১০ তখন তার বাবা মারা যান। তার মা অনেক কষ্ট করে তাকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ান। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিধানকে সংসারের হাল ধরতে হয়। নিকটবর্তী সরকারি টেকনিক্যাল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে টেইলরিং এন্ড ড্রেস মেকিং এর উপর বিধান ছয় মাস মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন।
বাসায় পড়ে থাকা মায়ের হাতের সেলাই মেশিন দিয়েই শুরু করেন তার কাজ। প্রথমে বাড়ির আশে- পাশের মানুষের শার্ট-প্যান্ট ও সালোয়ার-কামিজ বানাতে শুরু করলেন। সেই সাথে দোকান থেকে গজ কাপড় কিনে ছোট বাচ্চাদের জন্য জামা, প্যান্ট, ফতুয়া তৈরি করতেন এবং পার্শ্ববর্তী বাজারে পাইকারী দামে সরবরাহ করতেন।
আস্তে আস্তে তিনি ছেলে-মেয়ে, পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই পোশাক বানাতে শুরু করলেন। কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, মনোযোগ আর নিখুঁত মান বজায় রেখে কাজ করাতে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পেশার রূপ বদল।
কাজের অর্ডার অনেক বেড়ে গেলে বিধান ত্রিপুরা বাজারে দোকান নেন। তার দোকানে এখন দশ জন কর্মচারী কাজ করেন। বিধান ত্রিপুরা স্বপ্ন দেখে তিনি ভবিষ্যতে তার এলাকায় একটি ড্রেস মেকিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং এলাকার দুঃস্থ লোকদের কাজ শেখাবেন। পেশার রূপ বদল।
বিধান ত্রিপুরা কী কী দক্ষতা অর্জন করেছিলেন? তিনি কীভাবে ‘বিধান দর্জি’ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন? |
কেস ৩: প্রযুক্তির আলোয় দৃষ্টিজয়ী ভাস্কর

প্রতিবন্ধী মানুষের সহজ চলাচল, (প্রবেশগম্যতা), তথ্য-প্রযুক্তিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে সফলতার সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তির নাম ভাস্কর ভট্টাচার্য্য। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের দুই বছরের মাথায় ভাস্কর চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন। ভাস্কর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর তিনি কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পেশার রূপ বদল।
কম্পিউটার এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করে ভাস্কর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব পাঠ্যপুস্তককে ডিজিটাল টকিং বইয়ে পরিণত করা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাক্সেসেবল ডিকশনারি তৈরি করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কারিগরি সহায়তা নিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটারাইজড ব্রেইল প্রোডাকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের প্রথম ইনক্লুসিভ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিণত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ভাস্কর। ইতোমধ্যে তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
ভাস্কর ভট্টাচার্য্য কী কী দক্ষতা অর্জন করেছিলেন? তিনি কীভাবে বিখ্যাত হয়েছিলেন? |
দক্ষতা উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক কোর্স

একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার আলোকে দেশে-বিদেশে, শিল্পকারখানায় কারিগরি ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা এবং প্রচলিত প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স পরিচালনা করছে।
কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার এই কোর্সগুলো বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্বল্পমেয়াদী (তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত), মধ্যমেয়াদী (ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত) এবং দীর্ঘমেয়াদী (এক থেকে চার বছর পর্যন্ত) হয়ে থাকে।
অষ্টম শ্রেণি পাস করে যেকোনো শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে এবং ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা পূরণ করে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার এই কোর্স সম্পন্ন করে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলাতেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্ৰতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে এই কারিগরি ও বৃত্তিমুলক কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকে।
প্রতিটি পেশাই সমাজের এবং দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং সংকল্পের সঙ্গে যদি কাজ করা যায় তাহলে যেকোনো পেশাই আকর্ষনীয় হতে পারে, পর্যাপ্ত উপার্জনও হতে পারে। আমরা ছোট-বড়, স্থানীয়-বিদেশি প্রতিটি পেশাকেই সমান দৃষ্টিতে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের যথাযথ সম্মান দেব।
নিচের ছড়ার লাইনটি আবৃত্তি করি-
পেশা নয় ছোট বড়ো
সব পেশাকেই সম্মান করো।
স্বমূল্যায়ন
এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি [তোমার পছন্দের ঘরে টিক (/) চিহ্ন দাও]
কাজসমূহ | করতে পারিনি ১ | আংশিক করেছি ২ | ভালোভাবে করেছি ৩ |
---|---|---|---|
এলাকার মানুষের বিভিন্ন পেশার তালিকা তৈরি | |||
সাক্ষৎকার/ আলোচনার মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় | |||
সময়ের সাথে পেশা পরিবর্তনের ধারা পর্যবেক্ষণ | |||
প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পেশাজীবীর কেসস্টাডি পর্যবেক্ষণ | |||
বিভিন্ন পেশার মৌলিক দক্ষতাসমূহ অন্বেষণ | |||
স্থানীয় ও দেশীয় পেশার মৌলিক দক্ষতাসমূহের সাথে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার যোগসুত্র স্থাপন | |||
মোট স্কোর: তোমার প্রাপ্ত স্কোর: | |||
শিক্ষকের মন্তব্য: |
তোমার প্রাপ্তি? তুমি যা পেলে তা নিয়ে তোমার মনের অবস্থা চিহ্নিত করো | একদম ভালো লাগছে না; প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আমার জানা খুব জরুরি। | আমার ভালো লাগছে, কিন্তু প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আমার আরও বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। | আমার বেশ ভালো লাগছে, এগুলো সম্পর্কে আমার জানার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। |
… সব সময় সবাই মিলে এমন হাসি হাসতে চাই।। সুতরাং এভাবে হাসতে হলে এই অধ্যায়ের যেসব বিষয়গুলো আমাকে আরও ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখ _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ উক্ত বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষক, সহপাঠী, অভিভাবক, ইন্টারনেট ও এলাকার লোকজনদের নিকট থেকে জেনে নিই। শিক্ষকের মন্তব্য _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ _____________________________________________________________________________________________________ |

- আরো পড়ুন : কাজের মাঝে আনন্দ
1 Comment
জীবন ও জীবিকা বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠা সমসা সমাধান চাই
এখন লাগবে পিলিস