তোমাদের মধ্যে নৌকা দেখোনি এমন কেউ তো নেই! আর কিছু না হোক, বৃষ্টির দিনে কাগজের নৌকা বানিয়ে নালায় ছাড়োনি, এমন মানুষ কমই আছে এদেশে! এবার সবাই মিলে নৌকা বানানোর কৌশলগুলো একটু ঝালাই করে নিলে কেমন হয়?
তবে এবার শুধু কাগজের নৌকাই নয়, সত্যি সত্যি ওজন নিয়ে পানিতে ভেসে থাকতে পারে এমন নৌকাই বানিয়ে দেখা যাক, কী বলো?

প্রথম সেশন
চলো নৌকা বানাই!
* বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর দেশটিতে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস এলেই বাংলাদেশের খাল বিল, নদী-নালাগুলো পানিতে ভরে যায়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা তাই একটি প্রাচীন ও জরুরি বাহন।
তোমরা কি জানো যে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে নৌকা এখনও স্থানীয় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম? এছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
চলো নৌকা বানাই!
বাংলাদেশে বর্ষাকালে নৌকা প্রচুর ব্যবহার হয়। গঠনকৌশল ও পরিবহনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। এসব নৌকার রয়েছে মজার মজার নাম। যেমন- ডিঙ্গি, ডোঙা, কোষা, সাম্পান, বজরা ইত্যাদি আরো অনেক। চলো নৌকা বানাই!
তোমাদের অনেকেরও নিশ্চয়ই নৌকা ভ্রমণ নিয়ে মজার মজার অভিজ্ঞতা আছে?। সহপাঠীদের সাথে আলাপ করে দেখো, দেখবে কত গল্প জমে আছে এই নৌকা আর নদী নিয়ে! নদী-নৌকা নিয়ে যদি তোমার কোনো গান বা কবিতা মনে আসে সেটিও উপস্থাপন করতে পারো।
চলো নৌকা বানাই! অপর পৃষ্ঠায় দেয়া নৌকার ছবিগুলোর মধ্যে কোন কোন নৌকা তোমার পরিচিত অর্থাৎ তুমি চড়েছো অথবা দেখেছো তা পরের ছকে লিখে ফেলো। চলো নৌকা বানাই!
ছবিগুলো আবার খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে ভেবেচিন্তে দলের সকলে মিলে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করো, কোন নৌকাগুলো কী কাজে ব্যবহৃত হতে পারে? নৌকাগুলোর গঠনের সঙ্গে এদের কাজের কোনো সম্পর্ক আছে কি?


নৌকার নাম | চড়েছি বা দেখেছি | দেখিনি তবে নাম শুনেছি | আজকে নতুন জানলাম | নৌকাটি কোন কাজে ব্যবহৃত হয় ও কেন? |
” বৃষ্টির দিনে কাগজের নৌকা বানিয়ে নালায় ভাসিয়েছো নিশ্চয়ই! চলো এখন আবার ছোটবেলার বিদ্যেটা ঝালাই করে নেয়া যাক! এক টুকরো কাগজ নিয়ে নৌকা বানিয়ে দেখো তো কেমন হয়!
“ আচ্ছা সত্যিকারের নৌকা যেমন একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষ বা মালামাল পরিবহন করে নিয়ে যায়, কাগজের নৌকা কি তেমনি বস্তু পরিবহন করতে পারবে? চলো চেষ্টা করে দেখা যাক। ক্লাসে হাতের কাছে ছোট ছোট জিনিস যা আছে, সেগুলো দিয়েই পরীক্ষা করে দেখা যায়!
ক একে একে সবার নৌকা কোনো বড় গামলা বা বালতিতে ভাসিয়ে দেখো। এরপর এর উপরে ছোট ছোট ভর চাপিয়ে দেখো কী হয়! ভালোমত লক্ষ কর! নৌকাটা কি আজীবন এভাবে ভেসে থাকবে? ফলাফল যা পাচ্ছ তা পাশের বন্ধুর সাথে শেয়ার করো, দেখো ও কী মনে করে! চলো নৌকা বানাই!
আচ্ছা তোমরা যদি কাগজের নৌকার বদলে সত্যিকারের একটা নৌকা বানিয়ে ফেলতে পারো তাহলে কেমন হয় বলো তো?
” দলে বসে আলোচনা করে দেখো, কী কী উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে নৌকা বানানোর জন্য। নৌকা যাতে টেকসই হয় এবং বেশি ভর নিতে পারে সেটা মাথায় রেখো! চলো নৌকা বানাই!

দ্বিতীয় সেশন
“ তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছো পানিতে অনেক বস্তু ভেসে থাকে আবার কিছু কিছু বস্তু আছে ডুবে যায়। আবার কিছু বস্তু আছে যাদের পানিতে ছেড়ে দেয়া হলে সেটির কিছু অংশ পানির নিচে ডুবে থাকে আর কিছু অংশ উপরে ভেসে থেকে অংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে।
নৌকা বানানোর জন্য যে উপকরণগুলো ঠিক করেছিলে সেগুলো কতটা পানিতে ভেসে থাকে বোঝা কিন্তু খুব প্রয়োজন। একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক পানিতে কী ভাসে কী ভাসে না। চলো নৌকা বানাই!
এই পরীক্ষণটি করার জন্য তোমাদের যা যা লাগবে-
বালতি অথবা চৌবাচ্চা, পানি, শোলা, পাটকাঠি, প্লাস্টিকের বোতল, মার্বেল, পয়সা, পেরেক, বরফ ইত্যাদি বিভিন্ন ছোটখাট জিনিস।
চলো এবার তবে পরীক্ষণটি শুরু করা যাক-
প্রথমে একটি বড় পাত্রে পানি নাও। এবার পানিতে উল্লিখিত উপকরণগুলো এক এক করে ছেড়ে পর্যবেক্ষণ করো- কোনটি ডুবে যাচ্ছে বা কোনটি ভেসে থাকছে? কোনটির ডুবে যেতে বেশি সময় লাগছে কোনটির কম সময় লাগছে? লক্ষ করো- কোনটি ডুবতে ডুবতেও ভেসে আছে। চলো নৌকা বানাই!
যে বস্তুগুলো পানিতে দ্রুত ডুবে যাচ্ছে, আর যেগুলো ভেসে থাকছে তাদের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো কী? নিজেরা একটু মাথা খাটাও তারপর দলে আলোচনা করো।
এবার তুমি তোমার অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পদার্থের বৈশিষ্ট্যের অংশটুকু পড়ে নাও। পদার্থের যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, যেমন- ভর, আয়তন, ঘনত্ব; এই বিষয়গুলো খেয়াল করো। এবার তোমার পরীক্ষণের বস্তুগুলোর ভর ও আয়তন মেপে নাও। সেখান থেকে ঘনত্ব সহজের বের করা যায়।
ঘনত্বের বিচারে খুব সহজ কোনো পার্থক্য চোখে পড়ছে কি?
তোমাদের পর্যবেক্ষণ শেষে- যেসব বস্তু ডুবে যায় তাদেরকে নিচে; যেসব বস্তু ভেসে থাকে সেগুলোকে উপরে এবং যেসব বস্তু আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে তাদেরকে তরলের পৃষ্ঠদেশের মাঝামাঝিতে রেখে নিচের ছবির পাত্রের ভেতরের অংশে আঁকবে। চলো নৌকা বানাই!
এখন আবার নৌকা বানানোর জন্য যে উপকরণগুলো ভেবে রেখেছো সেগুলোর দিকে চোখ বুলাও। কোনো পরিবর্তন কি করতে চাও এখন?

তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন
* আগের সেশনে তো দেখলে সব বস্তু পানিতে একইভাবে ডুবে যায় না। কিন্তু পানির বদলে তেল বা শরবত দিলেও কি একই ফলাফল আসবে? চলো নৌকা বানাই!

তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছো তেল ও পানি কখনো মেশে না। পানির উপরে তেল ভেসে ওঠে। আর এইসব বিভিন্ন ঘনত্বে তরলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বস্তু ছেড়ে দিলেই বা কী হয়? আরেকটা পরীক্ষা করে দেখা যাক- চলো নৌকা বানাই!
পরীক্ষণটি করার জন্য তোমাদের যা যা লাগবে-
কাচের গ্লাস অথবা বড় টেস্টটিউব, মধু, পানি, ভোজ্য রঙ, ভোজ্য তেল, পেরেক, কিশমিশ, প্লাস্টিকের বোতলের ক্যাপ, পিংপং বল, তরলের আয়তন পরিমাপের জন্য ৫০ মি.লি. বিকার।
এবার তোমার শিক্ষকের করে দেয়া দলে ভাগ হয়ে একটি বড় কাচের গ্লাসে বা বড় টেস্টটিউবে ১০ মি.লি. পানিতে ২ ফোঁটা ভোজ্য রঙ মেশানো পানি ঢেলে নাও। এরপর
পানির উপর ১০ মি.লি. মধু ঢালো। কী দেখলে? মধু পানি নিচে চলে যাচ্ছে নাকি উপরেই থাকছে? চলো নৌকা বানাই!
এবার সাবধানে একই পরিমাণ ভোজ্য তেল ঢেলে দিয়ে দেখো তো কী হয়? পাত্রটি কিছুক্ষণ এভাবেই রেখে দিয়ে এঁকে ফেলো সেটির ছবি।
তারপর ঐ পাত্রে সাবধানতার সঙ্গে প্রথমে- স্ক্রু অথবা ছোট পেরেক এরপরে কিশমিশ, প্লাস্টিকের বোতলের ক্যাপ, পিংপং বল ছেড়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করো কোনটা কোন ঘনত্বের তরলে ডোবে বা ভাসে।
→ পর্যবেক্ষণ শেষে পাশের ছকে বস্তুগুলোর ভাসা ডোবার অবস্থান ছবি আঁকবে ও লেবেলিং করবে। চলো নৌকা বানাই!
এখন তুমি তোমার অনুসন্ধানী পাঠ বই এর তরলের ভাসা ডোবার সঙ্গে ঘনত্বের সম্পর্ক অংশটুকু ভালো করে পড়।
তোমরা দলীয় যে কাজটি করলে তার সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছো কি? এবার তুমি ছক-২ পূরণ করো ।
ক্রম | বস্তুর নাম | কোন কোন তরলে ভাসে | কোন কোন তরলে ডুবে যায় | কেন ভাসে বা কেন ডোবে |
১ | ||||
২ | ||||
৩ | ||||
৪ | ||||
৫ |
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন
পানিতে ডোবা ও ভাসার সাথে ঘনত্বের সম্পর্ক তো বোঝা হলো। এখন নিশ্চয়ই নৌকা বানাতে গিয়ে আগের চেয়ে কম বেগ পেতে হবে তোমাদের?
” আর এবার তাহলে নৌকার মডেল বানানো শুরু করা যাক?
← তোমার শিক্ষকের ভাগ করে দেয়া দলের এই কাজটি তোমরা বিদ্যালয়ের বাইরে সময় নিয়ে
করতে পারো। তবে এর জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা ও দলীয় কাজের সমন্বয়। তাই প্রথমে তোমরা শ্রেণিকক্ষে বসে আগে চূড়ান্ত করে নাও- কী কী উপকরণ ব্যবহার করে মডেল তৈরি করবে; কেমন মডেল বানাবে ইত্যাদি।
ধারণাগুলো নিজেদের খাতায় লিপিবদ্ধ করে সহজলভ্য উপকরণ যোগাড় করবে। চেষ্টা করবে ফেলনা জিনিস দিয়েই নৌকা তৈরি করার।
মডেল নৌকাগুলো নির্দিষ্ট জায়গাতে ভাসানোর সুবিধার্থে এর ক্ষেত্রফলের সীমা নির্ধারণ করা থাকবে যা শ্রেণিতে শিক্ষক বলে দেবেন। যেমন- দৈর্ঘ্য ১৬ সে.মি. প্রস্থ ১০ সে.মি সীমার মধ্যে ।
দলের সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কাজ ভাগ করে নিতে হবে। দলের প্রত্যেকে আলোচনা করে ঠিক করে নেবে কে কোন উপকরণ সহজে যোগাড় করতে পারবে। তারপর কীভাবে কী মডেল বানাবে তা খাতায় ড্রাফট স্কেচ করবে। নৌকার কাঠামো এমনভাবে বানানোর চেষ্টা করবে যেনো সেটি বেশি ওজন নিয়েও ভেসে থাকতে পারে।
* অনেক উপায়েই তোমরা নৌকা বানাতে পারো। এবার তোমাদের মাথা খাটানোর পালা। কিছু আইডিয়া শিক্ষক তোমাদেরকে দেবেন, তোমরা চাইলে অন্য বই অথবা ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারো।
চলো এঁকে ফেলি আমাদের নৌকার মডেলের স্কেচ-
সপ্তম ও অষ্টম সেশন
নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুনে, তরলে কী ভাসে কী ডোবে আর বিভিন্ন ঘনত্বের তরলের পরীক্ষণ শেষে ইতোমধ্যে তোমরা দলগতভাবে তৈরি করে ফেলেছো চমৎকার সব নৌকার মডেল। এই পর্যায়ে নৌকাগুলোর প্রদর্শনী এবং কোন নৌকা সবচেয়ে বেশি ওজন নিয়ে ভেসে থাকতে পারে তা দেখার পালা ।
প্রদর্শনীর জন্য তোমাদের বানানো বিভিন্ন দলের নৌকাগুলো শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে অথবা টেবিলে কিংবা বারান্দায় সুন্দর করে গুছিয়ে রাখো।
শিক্ষকের সহায়তায় একটি বড় পাত্র/বালতি অথবা চৌবাচ্চার পানিতে এক এক করে নৌকাগুলোকে ভাসাও। এরপর নৌকাগুলোর উপর ওজন চড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভরের বাটখারা ব্যবহার করো। কোন নৌকাটি কত ওজন নিতে পারছে তা পরিমাপ করে ছক-৩ এ নোট করে রাখো।
ছক-৩
দলের নাম | সদস্য | নৌকায় চাপানো ওজন | মন্তব্য |
> এভাবে কোন দলের নৌকা বেশি ওজন নিয়ে ভেসে আছে তার ভিত্তিতে আলোচনা করে পর্যবেক্ষণ ছক-৪ পূরণ করে সিদ্ধান্তে নাও ঐ নৌকার কী কী কারিগরি কৌশলের জন্য তাদের বানানো মডেল অন্য নৌকার তুলনায় বেশি ওজন নিতে পেরেছে।
ছক-৪
দলের নাম | কী ধরনের কারিগরি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে? |
* এদিনের কাজ শেষে সহপাঠীদের কাজ সম্পর্কে তোমার মতামতের জন্য বইয়ের শেষের ছক-গ পূরণ করো।
কাগজের প্লেন তো সবাই বানিয়েছো, তাই না? ভালো করে
বানাতে পারলে তা ছুঁড়ে মারার পরও বেশ খানিকক্ষণ
বাতাসে ভেসে থাকে।
পানিতে নৌকার ভেসে থাকার সাথে এই ঘটনার কোনো মিল খুঁজে পাও?
আরো পড়ুন : আমরা যারা প্রতিবেশী