আমার জীবন আমার লক্ষ্য

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করবো আমাদের জীবন সর্ম্পকে এবং আমাদের জীবনের লক্ষ্য সর্ম্পকে। একএকজন মানুষের জীবনে একএকটা লক্ষ্য থাকে যেমন কেউ ডাক্তার, কেউ শিক্ষক ইত্যাদি হতে চায়। এই বিষয়ে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

আমার জীবন আমার লক্ষ্য
আমার জীবন আমার লক্ষ্য

আমরা মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ে

অনেক মজার মজার স্বপ্ন দেখি।

আমাদের কখনো-

ইচ্ছে করে নীল আকাশে

পাখির মতো উড়তে

ইচ্ছে করে সাগর সেঁচে

মণিমুক্তা খুঁজতে !

আমার জীবন আমার লক্ষ্য

আমার জীবন আমার লক্ষ্য। আমাদের মন অনেক কিছুই চায়। কখনো বিজ্ঞানী, কখনো পাইলট, কখনো ডুবুরী, কখনো শিক্ষক, কখনো বা ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে উঁকি মারে মনের আকাশে। তুমিও নিশ্চয় মাঝে মাঝে ভাবো বড় হয়ে আমি এর মতো হতে চাই বা ওর মতো হতে চাই। আমরা আমাদের চারপাশে মানুষদের দেখে কিংবা সমাজ ও পরিবেশে মানুষের অবদান সম্পর্কে জেনে নিজেও সেরকম কিছু করার বা হবার ইচ্ছা পোষণ করি।

এই ইচ্ছা বা স্বপ্নগুলো অনেক সময় আমার যা যা পছন্দ বা ভালোলাগা রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। সেই সঙ্গে আমি যা করতে পারি বা যে কাজে আমি বেশি দক্ষ তা-ও আমার স্বপ্ন তৈরিতে অবদান রাখে। এক বা একাধিক কিছু করার বা হবার এই স্বপ্নই একসময় আমাদের লক্ষ্য স্থির করে দেয়। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

নিজের পছন্দ ও দক্ষতা

চিত্র ৫.১ : পলাশের সবজি বাগান

চলো, আমরা আমাদের কয়েকজন বন্ধুর গল্প শুনি-

পলাশদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাটা খুব সুন্দর। মাঠের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা একটা রাস্তা দিয়ে তাঁরা দলবেঁধে স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার পথের দুই পাশে ফসলের মাঠের দিকে তাকালে তার খুব ভালো লাগে। মাঠে কখনো থাকে সরিষা ফুল, কখনো ধান, কখনো থাকে নানা রকমের সবজির ক্ষেত। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

তার বাবা-চাচারাও এখানকার মাঠেই সারা বছর বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন । স্কুল বন্ধ থাকলে পলাশও তার বাবার সঙ্গে মাঠে যায়, বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে যেমন চারা লাগায়, সার দেয়, পানি দেয়, আগাছা বাছাই করে, মাটি নিড়ানি দেয়। আবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠেই খেলাধুলা করে। ফসল কাটার সময় বাবাকে ফসল কাটতে ও সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে সহায়তা করে। একসময় তার বাবা ফসল বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

একদিন পলাশ টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখে কীভাবে অনলাইনে ফসল বিক্রি করা যায় এবং তার বাবাকে তা জানায় । এরপর থেকে তার বাবা বাসায় বসেই ফসল বিক্রি করতে শুরু করেন। পলাশদের বাড়ির সামনেও সুন্দর একটি বাগান আছে, যেখানে বিভিন্ন রকম ফুল ও সবজির গাছ রয়েছে। পলাশ তার মায়ের উৎসাহে এবার কিছু মরিচ, পুঁইশাক ও বেগুনের চারা উৎপাদন করেছে, যেগুলো এবার বাজারে বিক্রি করবে ভেবেছে। স্কুলের একটি প্রকল্পে পলাশ দেখিয়েছে কৃষিকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজ সঠিকভাবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে করে কীভাবে একজন সফল কৃষক হওয়া যায় এবং দেশে অবদান রাখা যায়।

স্বপ্ন: আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া

পলাশের পছন্দ : স্কুলে যাওয়া, বাবার সঙ্গে কাজ করা, বাগান করা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করা, চারা উৎপাদন করা, বিক্রি করতে পারা।

চিত্র ৫.২: তারাভরা আকাশ

সাদিয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ও চিত্রাঙ্কনের প্রতি তার আগ্রহ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত চিত্রাঙ্কন শেখে। বাবা মায়ের সঙ্গে বেড়াতে পছন্দ করে, ঘরের কাজ করে, কমিকস, ছড়া ও সায়েন্স ফিকশন বই পড়তে পছন্দ করে। বাসায় তার পোষা বিড়ালের সঙ্গে খেলা করে, বারান্দায় বাগান করে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

বাসায় তার বাবার কম্পিউটারে একটু একটু করে চিত্রাঙ্কন করা শেখে, কখনো কখনো অনলাইনে কোডিং এর বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং করা শেখে। একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সে পুরস্কারও পেয়েছে। তার প্রিয় শিক্ষকের পরামর্শে মহাকাশবিষয়ক কয়েকটি অনলাইন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে এবং মহাকাশে নভোচারীরা কীভাবে রকেটে করে যাতায়াত করে সে বিষয়ে অনেক মজার মজার তথ্য জেনেছে।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ নামে বাংলাদেশেরও এখন একটি স্যাটেলাইট আছে জেনে তার খুব গর্ব হয়। তার খুব ইচ্ছা বড় হয়ে সে-ও মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করবে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

স্বপ্ন: _______________________________________________________________________________________________

সাদিয়ার পছন্দের কাজ : ________________________________________________________________________________
___________________________________________________________________________________________________
চিত্র ৫.৩: মাকে সাহায্য করছে রিফাত

রিফাতের মা তাদের বাসায় কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন। রিফাত মাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে যেমন

কাপড় কাটতে ও বানানো শেষ হলে ভাঁজ করে প্যাকেট করতে, তৈরি পোশাক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং বিভিন্ন সময় মায়ের সঙ্গে কাপড় কিনতে বাজারেও যায়। তার স্কুলের অনেকেই তার মায়ের কাছ থেকে স্কুল ড্রেস বানিয়ে নেয়। মায়ের সঙ্গে কাজ করতে করতে রিফাত অনেক কিছু শিখেছে। তার এইসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলের যেকোনো অনুষ্ঠানে সে বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

সে তার বন্ধুদের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে গিয়ে মঞ্চ সাজানো, প্রতিযোগীদের পোশাক ঠিক করা ও উপস্থাপনা করার সব আয়োজনে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়েছে সে। এ জন্যই স্কুলের শিক্ষক ও তার বন্ধুরা তাকে খুব পছন্দও করে। রিফাতের ইচ্ছা, বড় হয়ে সে তার মায়ের মতো পোশাক তৈরি ও সাজসজ্জা নিয়ে কাজ করবে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

তার স্বপ্ন তার নিজের ডিজাইন করা পোশাকের একটি সুন্দর দোকান থাকবে, যেখানে ছোট বড় সবার সুন্দর সুন্দর পোশাক পাওয়া যাবে এবং যে কেউ ইচ্ছে করলে তার দোকান থেকে বানিয়ে নিতেও পারবে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

চিত্র ৫.৪: গার্ল গাইড কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

আসমা ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও সে তার ছোট ভাইবোনদের প্রতি খুবই যত্নশীল, তার ছোট ভাইকে পড়ালেখায় সহায়তা করে, সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যায়। বাসায় কেউ কিছু খুঁজে না পেলে আসমার ডাক পড়ে ; আসমা কীভাবে যেন ঠিকই সব খুঁজে পায়। সে অবসরে টিভি দেখতে পছন্দ করে, অনলাইনে কার্টুন দেখে, বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে গল্প পড়ে ও নিজের গল্প লিখে শেয়ার করে।

সেবামূলক কাজের প্রতি তার গভীর আগ্রহ থেকে বিদ্যালয়ের গার্লস গাইডস ও রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। ইদানীংকালে যেসব দুর্যোগ হয়েছে সেসময় কীভাবে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ কাজ করেছে এবং চিকিৎসা সেবা পেয়েছে সেই বিষয়ে ছবি এঁকে স্কুলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে। তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে সে মানব সেবামূলক কাজে যুক্ত হবে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

স্বপ্ন: _______________________________________________________________________________________________

সাদিয়ার পছন্দের কাজ : ________________________________________________________________________________
___________________________________________________________________________________________________

তোমাদের কয়েকজন বন্ধুর গল্প জেনেছ এবং তাদের কী কী পছন্দ তা-ও বের করতে পেরেছ। এবার আমরা প্রত্যেকে নিজেদের পছন্দ বা ভালোলাগা এবং দক্ষতাগুলো নির্বাচন করব। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

ছক-৫.১ এ প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে কিছু নমুনা পছন্দ দেওয়া আছে। প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে তোমার পছন্দ বা ভালোলাগা নির্বাচন করো। যে কাজগুলো তুমি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারো বা দক্ষতা আছে তা নির্বাচন করো। যেগুলো তোমার অপছন্দ বা ভালো লাগে না সেগুলোও নির্বাচন করো। তোমার পছন্দ, দক্ষতা ও অপছন্দসমূহ উদাহরণে না থাকলে তুমি নিজে তা যোগ করে নিতে পারো।
নংবিষয়আমার যা ভালোলাগে বা পছন্দআমি যা ভালোবাবে করতে পারি (আমার দক্ষতা)আমার ভালো লাগে না বা অপছন্দ
১.খেলা:
ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাড়ি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা, এথলেটিকস (দৌড়, হাইজাম্প-লংজাম্প ইত্যাদি) গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, বউচি, কানামাছি, ক্যারম, লুকোচুরি, এক্কাদোক্কা, সাতচাড়া, লুডু, ডাঙ্গুলি, মোবাইল বা কম্পিউটার গেম, সাঁতার, সাইকেল চালানো, লাটিম, শরীরচর্চা, ঘুড়ি উড়ানো অন্যান্য…
২.সৃজনশীল কাজ :
ছবি আঁকা, কারুকাজ, কমিকস বানানো, অরিগামি (কাগজ দিয়ে কিছু বানানো), গল্প/কবিতা লেখা, কবিতা আবৃত্তি করা, গান করা, গান শোনা, নাচ করা, স্কাউট, গার্ল গাইডে, ছবি তোলা, ভিডিও বানানো, বাগান করা, সংগঠন করা, বিতর্ক করা, উপস্থিত বক্তৃতা, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি বাজানো, অন্যান্য …
৩.ঘরের কাজ :
ঘর গোছানো, থালা-বাসন পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, ঘর সাজানো, খাবার তৈরি, বিছানা গোছানো, গাছের পরিচর্যা, পোষা প্রাণীর পরিচর্যা, ছোটদের- বড়দের যত্ন নেওয়া, বাজার করা, বাগান করা, অন্যান্য …
৪.বই পড়া :
গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ধর্মীয়/ ঐতিহাসিক গ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি কমিকস, সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক, জীবনী, কৌতুক, বিজ্ঞান সাময়িকী, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, অন্যান্য …
৫.৫. নতুন কিছু বা শখ :
বিভিন্ন ভাষা শেখা, হাতের কাজ, নতুন খেলা শেখা, নতুন রান্না, বন্ধু তৈরি, কয়েন সংগ্রহ, ডাকটিকিট সংগ্রহ, সুন্দর হাতের লেখা, গিফ্ট কার্ড বানানো, পিকনিক/বেড়াতে যাওয়া, অন্যান্য ….
৬.………………..
(অন্যান্য)

ছকটি পূরণ করে তুমি তোমার পছন্দ ও দক্ষতাগুলো নিশ্চয়ই জেনেছ। তাহলে এবার চলো তোমার পছন্দ ও দক্ষতাসমূহ বিবেচনা করে ভবিষ্যতে তুমি কী কী করতে চাও বা কী কী হতে চাও তার একটি তালিকা তৈরি করি। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

ছক ৫.২ : আমার ইচ্ছা তালিকা

নিজেকে নিয়ে তোমার যেমন অনেক পরিকল্পনা বা স্বপ্ন রয়েছে, তেমনি তোমাকে নিয়ে হয়তো তোমার মা- বাবা, ভাই-বোন, পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবের অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে।

চলো একটা মজার কাজ করি। তোমার অভিভাবক, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে জিজ্ঞাসা করো- তোমার পছন্দ কী, তোমার যোগ্যতাগুলো কী এবং তারা তোমাকে ভবিষ্যতে কী হিসেবে দেখতে চায়। মা, বাবা, ভাই, বোন ও বন্ধুদের জন্য নিচের ছক অনুযায়ী তোমার খাতার আলাদা আলাদা পষ্ঠায় ছক তৈরি করো। আলাদা আলাদা করে সবার মতামত গ্রহণ করার পর নিচের ছকে মতামতগুলো লিখ। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

পছন্দযোগ্যতাভবিষ্যতে কী হিসেবে দেখতে চায়
অভিভাবক ১
সম্পর্ক :
অভিভাবক ২
সম্পর্ক :
ভাই ১
নাম :
বোন ২
নাম :
বন্ধু ১
নাম :
বন্ধু ২
নাম :

তোমার নিকটজনের ভাবনার সঙ্গে তোমার ভাবনার (স্বপ্ন, পছন্দ-অপছন্দ, দক্ষতা) কতটুকু মিল বা অমিল রয়েছে তা তুলনা করে দেখ। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

দারিদ্র্য জয় করে দরিদ্রের পাশে

শৈশব থেকেই দারিদ্র্য ফরিদের নিত্যসঙ্গী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালে তাঁর শিক্ষক বাবা প্রাইমারি স্কুল থেকে অবসরে যান। তখন মা কাজ শুরু করেন একটা এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে। অভাব-অনটনের সংসার।

তাই কোনো কোনো বেলা ভরপেট খাবারও কপালে জুটত না। শৈশব কেটেছে খড়ের চালার কুঁড়েঘরে, বৃষ্টি হলেই টিপটিপ করে পানি গড়িয়ে পড়ত। কেরোসিন কেনার পয়সা ছিল না। তাই কখনো জ্যোৎস্নায় চাঁদের আলোয় কিংবা কখনো মা যখন রান্না করতেন, পাশে বসে পড়াশোনা করেছেন।

চিত্র ৫.৫: চুলার আলোয় ফরিদের পড়াশোনা

প্রাইমারি স্কুল থেকেই চাষাবাদ থেকে শুরু করে করতে হয়েছে গৃহস্থালির সব ধরনের কাজ। বিজ্ঞানের প্রতি তার ছিল অদম্য আগ্রহ। যে কোনো ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করত। তার কৌতুহল ছিল সব কিছুর ওপর। কিন্তু, জীবনের প্রথম ধাক্কা আসে যখন দারিদ্রতার কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকার সময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

তবে সহজেই হাল না ছেড়ে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নটি আগলে রেখেছিল ছেলেটি। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হবেন। নিজের স্বপ্নের প্রতি অবিচল থেকে ছেলেটি একের পর এক ধাপ অতিক্রম করে আজ জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী ড. সি এন ফরিদ। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

চিত্র ৫.৬: গবেষণায় মগ্ন ফরিদ

বিরুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন কোনো এক শহরের এক নামী কলেজে। কলেজে পড়ার সময় কখনো আত্মীয়ের বাসায় কিংবা কখনো চারতলা বিল্ডিংয়ের ছাদে পুরোনো তিন কোনা একটা পানির ট্যাঙ্কের পাশে বানানো একটা ছোট্ট রুম ভাড়া নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতে হয়েছে তাকে।

শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ফরিদের এই যাত্রা মোটেও এতটা সহজ ছিল না। টেস্ট পরীক্ষায় কলেজে সবার সেরা হয়েও সংশয় ছিল এইচএসসি পরীক্ষায় বসা নিয়েই। অর্থের অভাবে এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় টাকা জোগাড় হলো।

নির্দিষ্ট সময়ের পর জরিমানা ফি দিয়ে পরীক্ষায় বসলেন, কলেজ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করলেন, রেজাল্টের দিক দিয়ে আবারও ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। আমার জীবন আমার লক্ষ্য।

এইচএসসির পর যেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নটা ধরা দিল। ভর্তির সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের শীর্ষ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ফরিদকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই। বিদেশি একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার ডাক পেলেন।

সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে সামনে এগিয়ে চলেছেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণায় এখন তিনি সারা পৃথিবীর এই প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বর্তমানে বিদেশি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাকর্মে নেতৃত্ব প্রদান করছেন তিনি।

একসময়ে ফরিদের মা বলতেন, ‘পড়াশোনাটা জীবনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এর মাধ্যমেই জীবনের স্বপ্নপূরণ সম্ভব।’ মায়ের কথা রেখেছেন ফরিদ। পড়াশোনা করে শুধু নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নই করেননি। উঠেছেন সাফল্যের চূড়ায়। জীবনের পদে পদে দারিদ্রতা নামের যে প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই শিকড়কে, নিজের দেশকে ভুলতে রাজি নন ফরিদ।

বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থী ও দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন । দারিদ্র্যের জন্য কারও জীবন যাতে থেমে না যায়, জীবনে চলার পথে কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেই তাড়না থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন একটি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন। প্রতি বছর এই ফাউন্ডেশন থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা, শীতার্ত মানুষের জন্য গরম কাপড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ এবং চিকিৎসাসেবাসহ নানা সহায়তা দেওয়া হয়।

■ গল্পের চরিত্রের কী স্বপ্ন ছিল?

■ স্বপ্ন অথবা জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে পরিকল্পনা ও কাজ করলেন?

তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ, একটি স্বপ্নের প্রতি অবিচল থেকে যথাযথ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারলে লক্ষ্য অর্জন করা যায়। লক্ষ্য অর্জন করতে নিজের ইচ্ছাশক্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

চলো আমরা ইচ্ছাগুলোর যে তালিকা তৈরি করেছিলাম সেখান থেকে একটি ইচ্ছা বা লক্ষ্যকে নির্বাচন করি। এমন একটি লক্ষ্য আমরা নির্বাচন করবো যা-

■ সুনির্দিষ্ট হবে, (অর্থাৎ কী হতে চাই সরাসরি সেটি নির্বাচন করতে হবে)

■ অর্জনযোগ্য হবে, (অর্থাৎ অবাস্তব কল্পনাপ্রসূত কিছু হবে না )

■ সময়াবদ্ধ হবে, (অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ইচ্ছেটা পূরণ করা সম্ভব হবে)

ছক ৫.৪ : নিজের ভাবনা

লক্ষ্য অর্জন করার জন্য পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যথাযথ পরিকল্পনা করার অর্থ হলো কাজের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন করা। পরিকল্পনা করার সময় লক্ষ্যকে প্রথমে কয়েকটি ছোট ছোট ধাপ বা মাইলস্টোনে ভাগ করে নিতে হয়। তারপর প্রতিটি মাইলস্টোন অর্জন করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হয়। সবশেষে এই মূহুর্তে কী কী করা প্রয়োজন তা সুনির্দিষ্ট করতে হয়। অর্থাৎ পরিকল্পনাকে দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি ধাপ ভেঙে তারপর প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করতে হয়।

প্রতিটি ধাপের সময়ও নির্ধারণ করতে হবে এবং এটা নির্ভর করে যে ভবিষ্যতের ইচ্ছা কোন সময়ের মধ্যে অর্জন করতে চাচ্ছি। যেমন- আমার ভবিষ্যতের ইচ্ছা যদি ১০ বছর পর হয়, তাহলে এখন থেকে ১০ বছর পর ধাপে ভাগ করা যায়, যাতে দীর্ঘমেয়াদি হবে ১০ বছর পর, মধ্যেমেয়াদি হবে ৫ বছর পর, স্বল্পমেয়াদি হবে ১ বছর পর।

চলো তোমাদের এক বন্ধু কীভাবে তার ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা করেছে তা দেখি। তারপর নিচের খালিঘরে তোমার নির্বাচিত লক্ষ্য অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদে, মধ্যমেয়াদে ওস্বল্পমেয়াদে কী করতে পারো তা পূরণ করার চেষ্টা করো।

ছক ৫.৫ : লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা

লক্ষ্যদীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনামধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাস্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাএখনই কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়
টাইম মেশিন
আবিষ্কার করব






২০৩৭






১. বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সাফল্যের সঙ্গে
পদার্থবিজ্ঞানের পড়াশোনা শেষ
করব।

২. বৈজ্ঞানিক
হিসেবে গবেষণা
করব এবং গবেষণা থেকে নতুন চিন্তা নিয়ে লেখালেখি করব।



১০-১২ বছর পর

১. উচ্চমাধ্যমিক
পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করব

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের
সম্পর্কে জানব






৫-৭ বছর পর
বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি ও বাংলা বিষয়গুলো ভালো ভাবে পড়ব ও বৈজ্ঞানিক হওয়ার
বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানব






প্রথম বছর
দৈনিক, সাপ্তাহিক
ও মাসিক রুটিন
প্রণয়ন করা যার
মাধ্যমে আমি প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে শিখতে পারি। এই বছরের আগামী সকল
পরীক্ষায় আমি ভালো ফলাফল করতে পারি।




আজকেই!
তোমার ভবিষ্যতের ইচ্ছা/ লক্ষ্যদীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাস্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাএখনই কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়

















এবার তোমার দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক রুটিন প্রণয়ন কর। সেই অনুযায়ী আজ থেকেই কাজ শুরু করো।

ছক ৫.৬ : লক্ষ্যে পৌছানোর রুটিন কাজ

লক্ষ্যে পৌছাতে হলে
দৈনিক আমাকে যা যা
করতে হবে
লক্ষ্যে পৌছাতে
হলে সপ্তাহে
আমাকে যা যা
সম্পন্ন করতে হবে
লক্ষ্যে পৌছাতে
হলে প্রতি মাসে
আমাকে যা যা
সম্পন্ন করতে হবে
মাস শেষে
আমার অনুভূতি
(আত্মপ্রতিফলন)
অভিভাবকের মন্তব্য বা স্বাক্ষর:

ভবিষ্যতের ইচ্ছা বা লক্ষ্য পুরণ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদ, মধ্যমেয়াদ এবং স্বল্পমেয়াদে এখনই কী করবে এই পরিকল্পনার পদ্ধতিকে ব্যাকওয়ার্ড প্ল্যানিং অথবা ব্যাককাস্টিং বলা হয়। তবে লক্ষ্য রাখবে যে, এটাই পরিকল্পনা করার জন্য একমাত্র কৌশল না, একধরনের কৌশল মাত্র। এই ধরণের আরও অনেক কৌশল রয়েছে।

এই পরিকল্পনায় তুমি নিয়মিত চোখ রাখো, যাতে তুমি এখন কী করবে তা বুঝে নিতে পারো। বছরের শেষে পর্যালোচনা করে দেখবে, যে পরিকল্পনা তুমি নিয়েছো সেটি অনুযায়ী তোমার কাজে অগ্রগতি হচ্ছে কিনা এবং তোমার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কিনা। যদি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন মনে করো, তাহলে সেভাবে পরিবর্তন করে নাও।

স্বমূল্যায়ন

এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি…….টিক (/)চিহ্ন দাও

কাজসমূহকরতে পারিনি (১)আংশিক
করেছি (২)
ভালোভাবে
করেছি (৩)
প্রদত্ত কেসের ব্যক্তিদের স্বপ্ন ও পছন্দের কাজ শনাক্ত
করা
আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে নিজেকে চেনার চেষ্টা করা
নিজের ইচ্ছে তালিকা তৈরি
অভিভাবক, স্বজন ও বন্ধুদের দৃষ্টিতে আমার যোগ্যতা শনাক্ত করা
নিজের স্বপ্ন বা লক্ষ্য (আপাত)নির্বাচন করা
নিজের স্বপ্ন বা লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করা
নিজের স্বপ্ন বা লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা করা
নিজের স্বপ্ন বা লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা
পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনন্দিন রুটিন প্রণয়ন করা
পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করা
মোট স্কোর: ৩০
তোমার প্রাপ্ত স্কোর:
শিক্ষকের মন্তব্য:
তোমার প্রাপ্তি?

তুমি যা পেলে তা নিয়ে তোমার মনের অবস্থা চিহ্নিত কর
একদম ভালো লাগছে না; অধ্যায়ের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আমার জানা খুব জরুরি।আমার ভালো লাগছে : কিন্তু অধ্যায়ের প্রতিটি বিষয়
সম্পর্কে আরও বিস্তারিত
জানা প্রয়োজন।
আমার জীবন আমার লক্ষ্য
আমার বেশ ভালো লাগছে ; কাজগুলোর
নিয়মিত চর্চা আমি
অব্যাহত রাখবো।
……………………সব সময় সবাই মিলে এমন হাসি হাসতে চাই।।

সুতরাং এভাবে হাসতে হলে এই অধ্যায়ের যেসব বিষয়গুলো আমাকে আরও ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখ
____________________________________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________________________________

যে কাজগুলোর নিয়মিত চর্চা আমাকে চালিয়ে যেতে হবে সেগুলো লিখি
____________________________________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________________________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: এই কনটেন্ট কপি করা যাবেনা! অন্য কোনো উপায়ে কপি করা থেকে বিরত থাকুন!!!