আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য আজ আলোচনা করব বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ প্রবন্ধ পড়ি এর আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। উক্ত প্রবন্ধে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। অতঃপর আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

কামরুল হাসান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রবন্ধটি কামরুল হাসানের লেখা। এটি তাঁর ‘আমাদের লোককৃষ্টি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

বলি ও লিখি

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় লেখা হলো:

কুটিরশিল্প আমাদের জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে তৈরি হওয়া কুটিরশিল্প শিল্পগুণ বিচারে অনন্য এবং এ ধরনের পণ্য লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য। আগে আমাদের দেশে লোকশিল্পের যে সমস্ত দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলো উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন ছিল তার মধ্যে অন্যতম। এ কাপড়টি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল।

আমাদের দেশের মেয়েদের হাতে তৈরি হওয়া নকশিকাঁথাকে জীবনগাথা বলা হয়। কারণ নকশিকাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি পরিবারের কাহিনি, আনন্দ-হাসির আখ্যান। বর্তমান সময়ে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নারায়ণগঞ্জ জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জামদানি কারিগরদের বাস। এছাড়া কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে প্রস্তুতকৃত খাদির কদর সারা বাংলাদেশ জুড়ে।

অপরদিকে বাংলাদেশে বসবাস করা প্রত্যেকটি উপজাতি নিজেদের পরিধেয় কাপড় নিজেরাই বুনে থাকে। বাংলাদেশের আবহমান কালের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কাঁসা ও পিতলের বাসনপত্র । এর ব্যাবহারিক দিক ছাড়াও গৃহসজ্জার সামগ্রী হিসেবে বর্তমান সময়ে এটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

পোড়ামাটির কাজের ঐতিহ্য এ দেশে বহু যুগের। আমাদের দেশের কুমোররা সারা বছরই পোড়ামাটি দিয়ে তৈজসপত্র তৈরির পাশাপাশি নানা রকম শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে। খুলনার মাদুর এবং সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। পাশাপাশি আমাদের গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিকা, হাতপাখাসহ নানা সামগ্রী তৈরি হয়। এগুলো কোনোভাবে অবহেলার সামগ্রী নয়।

বর্তমান সময়ে শোলাশিল্পের উৎকৃষ্ট সৃজনশীল নমুনা দেখা যায় পুতুল, টোপর ইত্যাদির মধ্যে। কাপড়ের পুতুল তৈরি করা আমাদের দেশের মেয়েদের সহজাত শিল্পগুণ। আমাদের সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোকশিল্প সংরক্ষণ করা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। লোকশিল্পের মধ্য দিয়েই আমরা বিশ্বের কার নিজস্ব ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে পারি।

আমাদের লোকশিল্প হল আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য যা তারা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লোকশিল্পের মধ্যে রয়েছে গান, কবিতা, গল্প, নাচ, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, ঐতিহ্যবাহী খাবার, এবং ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

লোকশিল্প আমাদেরকে আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে সংযুক্ত করে। এটি আমাদেরকে আমাদের ঐতিহ্য এবং আমাদের সংস্কৃতির সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। লোকশিল্প আমাদেরকে আমাদের পরিচয় খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এটি আমাদেরকে আমাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

লোকশিল্প আমাদেরকে বিনোদন দেয়। এটি আমাদেরকে হাসায়, কাঁদায়, এবং চিন্তা করে। লোকশিল্প আমাদেরকে আমাদের চারপাশের জগৎকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। লোকশিল্প আমাদেরকে আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে।

আমাদের লোকশিল্পকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের লোকশিল্পকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা আমাদের লোকশিল্পকে আমাদের বাচ্চাদের এবং নাতি-নাতনিদের কাছে শেখাতে হবে। আমরা আমাদের লোকশিল্পকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলিতে ব্যবহার করতে হবে।

আমরা আমাদের লোকশিল্পকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলিতে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের লোকশিল্প আমাদের অমূল্য সম্পদ। আমাদের লোকশিল্পকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি

উপরে একটি প্রবন্ধ পড়েছ। প্রবন্ধের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো।

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করা হলো-

ক্রমপ্রশ্নহ্যাঁনা
পরপর দুই লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?না
হাতে তালি দিয়ে দিয়ে কি পড়া যায়?না
লাইনগুলো কি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের?না
লাইনগুলো কি সুর করে পড়া যায়?না
এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?না
এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?হ্যাঁ
এর মধ্যে কি কোনো কাহিনি আছে?না
এর মধ্যে কি কোনো চরিত্র আছে?না
এখানে কি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে?হ্যাঁ
১০এটি কি কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করা?হ্যাঁ
১১এর মধ্যে কি কোনো সংলাপ আছে?না
১২এটি কি অভিনয় করা যায়?না
প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি

প্রবন্ধ কী?

গদ্যভাষায় কোনো বিষয়ের সুবিন্যস্ত আলোচনাকে প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ অনেক রকমের হয়; যেমন: বিবরণমূলক প্রবন্ধ, তথ্যমূলক প্রবন্ধ, বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ। প্রবন্ধ অনেকগুলো অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে। অনুচ্ছেদগুলো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়। কী বিষয়ে আলোচনা হবে শুরুর অনুচ্ছেদে তার ইঙ্গিত থাকে; শেষ অনুচ্ছেদে লেখকের মতামত ও সিদ্ধান্ত থাকে। যাঁরা প্রবন্ধ লেখেন, তাঁদের প্রাবন্ধিক বলে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লেখা হয়। প্রবন্ধের বিষয় হতে পারে বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি।

প্রবন্ধ লিখি

কোনো একটি বিষয় নির্বাচন করো। বিষয়টির কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করবে, তা নিয়ে ভাবো। কয়েকটি অনুচ্ছেদে গদ্যভাষায় তোমার ভাবনাকে উপস্থাপন করো। লেখার শুরুতে ভূমিকা ও লেখার শেষে উপসংহার থাকবে। মাঝখানের অনুচ্ছেদগুলোতে তোমার বক্তব্য একের পর এক সাজিয়ে লিখবে। একেবারে উপরে প্রবন্ধের একটি শিরোনাম লেখো।

ভাষা-আন্দোলন

এক অবিনাশী চেতনার নাম ভাষা ছাড়া মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। ভাষা ছাড়া কোনো জাতি গড়ে উঠতে পারে না। আর এ ভাষা যে মাতৃভাষা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা জাতির সাহিত্য, শিল্প, সভ্যতা, সংস্কৃতি সব কিছুর প্রাণ হচ্ছে তার মাতৃভাষা। তাই বি মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার বিষয়ে কোনো আপস চলে না। মাতৃভাষার দাবি তাই মানুষের স্বাভাবিক দাবি। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার দাবি। এ দাবি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেই একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাশহিদরা প্রাণ দিয়েছিলে। তাই ভাষাশহিদদের স্মৃতি চিরস্মরণীয়। একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দেওয়া শহিদেরা আমাদের গর্ব। চেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন পূর্ববঙ্গের ভাষা হবে উর্দু। ছাত্ররা তখনই এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন তখন থেকেই জোরদার হতে থাকে। সময়ের পালা বদলে আসে ১৯৫২। এ সময় বীর বাঙালি ছাত্রজনতা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে মিছিল করে। পুলিশ সে মিছিলে বাধা দেওয়ার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। সংগ্রামী ছাত্রজনতা সে ধারা ভেঙে এগিয়ে যায়। স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ ভাষার দাবির মিছিলে গুলি চালায়। এতে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিউর, বরকতসহ শহিদ হয় অনেকে। এ হত্যাকাণ্ডের ফলে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। কবি-সাহিত্যিকদের কলম তখন অনলবর্ষণ করতে থাকে এ নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদে। এক সময় স্বৈরাচারী সরকার বাঙালির অব্যাহত আন্দোলন, সংগ্রামের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির মাঝে যে চেতনার উন্মেষ হয় তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে উনসত্তর থেকে একাত্তরে। একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য শহিদ দিবস পালনের মধ্য দিয়েই শুধু সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রেরণা জুগিয়েছে একুশের অবিনাশী চেতনা। তখন থেকেই বাঙালি অনুধাবন করেছে তার জাতীয়তাবোধ ও সংস্কৃতিকে। এই সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে একসূত্রে গেঁথে দিয়ে মুক্তিসংগ্রামের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।

পরবর্তীকালে সময়ের ধারাবাহিক পট পরিক্রমায় একুশে ফেব্রুয়ারি ক শুধু বাংলাদেশের মাতৃভাষা হিসেবে পালিত হয়নি। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-র সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বব্যাপী একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসাড়ম্বরে পালিত হয় এবং অধ্যাবধি পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের ৫০০০ ভাষাকে সম্মান জানানো হয়েছে।

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের শহিদদের রক্ত বৃথা যায়নি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছি। ভাষা-আন্দোলন থেকে স্বীধনতা যুদ্ধ পর্যন্ত এ সুদীর্ঘ পথে লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি। কিন্তু মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়েছে আপসহীন সংগ্রাম ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। একুশ হোক জগতের সকল অনৈক্য, সংঘাত ও অশান্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার। হোক সমুদ্রপথের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতের আশার প্রদীপ, দিনির্দেশিকা, আলোকবর্তিকা।

কামরুল হাসান

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

কামরুল হাসান প্রখ্যাত বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী। প্রকৃত নাম আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার নারেঙ্গা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিত্রশিল্পী হলেও নিজে ‘পটুয়া’ নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ পোস্টারটি খুব বিখ্যাত হয়।

কামরুল হাসানের শিক্ষাজীবন কাটে কলকাতায়। তিনি কলকাতার মডেল এম ই স্কুল (১৯৩০-৩৫) এবং কলকাতা মাদরাসায় (১৯৩৬-৩৭) প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবনে চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি তিনি বয়েজ-স্কাউট, শরীরচর্চা, ব্রতচারী আন্দোলন, শিশু সংগঠন মণিমেলা, মুকুল ফৌজ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৫ সালে শরীরচর্চা প্রতিযোগিতায় তিনি বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন।

কামরুল হাসান বাংলাদেশের স্বাধিকার ও অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন (১৯৬৯-৭০) এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি, প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলি ও লিখি

কামরুল হাসানের চিত্রকলার প্রধান উপাদান নর-নারী, পশুপাখি, সাপ ও প্রকৃতি। এ ছাড়া তিনি তাঁর চিত্রকর্মে স্বৈরশাসকদের অত্যাচার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি মনোগ্রাম তৈরি করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশে-বিদেশে তাঁর চিত্রকলার অনেক একক ও যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চিত্রকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য কামরুল হাসান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। সেসবের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৫), কুমিল্লা ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), চারুশিল্পী সংসদ সম্মান (১৯৮৪), বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫) এবং কাজী মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৫) উল্লেখযোগ্য।

১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় কবিতা পরিষদের উৎসবের সমাপনী দিনে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের স্বৈরাচারবিরোধী রেখাচিত্র আঁকার পর আকস্মিকভাবে মারা যান মাত্র ৬৭ বছর বয়সে। এমন মৃত্যুর মধ্যে অর্থবহ হয়ে রইল কামরুল হাসানের সারা জীবনের সাধনা।

আরো দেখুন-

এছাড়াও সকল বিষয়ের নমুনা উত্তর সমূহ পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক গ্রুপ জয়েন করে নাও ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করো এবং ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন। তোমার বন্ধুকে বিষয়টি জানানোর জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি তার খাতায় নোট করে দিতে পারো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: এই কনটেন্ট কপি করা যাবেনা! অন্য কোনো উপায়ে কপি করা থেকে বিরত থাকুন!!!