আমাদের মনে অনেক কথাই থাকে। সেসব কথা কখনো বলতে পারি, আবার কখনো বলতে পারি না। কখনো এমন হয় যে আমরা যা অনুভব করছি, বলতে চাচ্ছি, করতে চাচ্ছি তা বলে বা করে উঠতে পারি না। আবার যে কথা কিছু মানুষের কাছে সহজেই বলতে পারি, তা অন্য অনেকের কাছে বলতে পারি না বা প্রকাশ করাটা কঠিন লাগে।
অনুভূতিও প্রয়োজনের কথা বলি কাউকে ভালো লাগলে, বন্ধুত্ব করতে চাইলে, প্রশংসা ও সাহায্য করতে ইচ্ছে হলেও অনেক সময় মুখ ফুটে বলা হয় না। মনে হয় নিজের চাওয়া প্রকাশ করলে অন্যরা কষ্ট পাবে, আমাকে খারাপ ভাববে, আমার কথা পাত্তা দিবে না, আমাকে ভয় দেখাবে বা হেয় করবে। তখন নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারি না।
অনুভূতিও প্রয়োজনের কথা বলি
কখনো আবার এমন হয় যে একটি কাজ আমরা করতে চাচ্ছি না, কিন্তু ‘না’ বলতে পারছি না। তখন ‘না’ বলাটা যেন অনেক কঠিন মনে হয়। এমন অবস্থায় আমাদের অনেকেরই জানতে ইচ্ছা হয় আমি কীভাবে কথা বলব, কীভাবে কথা বললে নিজেকে এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়া হবে না আবার একই সাথে নিজের চাওয়া, অনুভূতি এবং মতামত আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রকাশ করতে পারব।
এ কারণেই এই ধাপে আমরা একটা অভিযানের মধ্য দিয়ে যাব। এ অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো ঘটনা জানব সেখানে দেখব মনের কথা প্রকাশ করা নিয়ে আমরা কী ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। এই যাত্রায় আমরা নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করব। এ যেন এমন অভিযান যেখানে আমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করার মন্ত্র খুঁজে নিচ্ছি।

নিজের কথা যেভাবে প্রকাশ করি
শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী ছোট দলে ভাগ হয়ে যাই। আমরা কীভাবে নিজের ইচ্ছা, চাওয়া, অনুভূতি, মতামত অন্যের কাছে প্রকাশ করি তা ছোট দলে শেয়ার করি। শেয়ার করার আগে নিচের বিষয় দুটি সম্পর্কে ভেবে নেব।
আমার জীবনে ঘটে এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করি যেখানে আমার কোনো চাওয়া বা অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না বা প্রকাশ করতে চাই।
■ আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করি যেখানে কারও কোনো আচরণ, কাজ বা কথায় আমার কষ্ট/আঘাত/রাগ লেগেছে।
ওপরের দুটি ঘটনা চিরকুটে লিখে, ছবি এঁকে, অভিনয় বা অন্য কোনো উপায়ে আমার দলে প্রকাশ করতে পারি। দুটি ক্ষেত্রেই আমি কেমন অনুভব করি তা যেন চিরকুট, ছবি, অভিনয় বা অন্য উপায়ে প্রকাশ পায়। দলের সবাই দুটি ঘটনা খুঁজে বের করলে সবাই যার যার দুটি ঘটনায় কী করতে পারি বা বলতে পারি তা শেয়ার করি।
ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখি
নিজের এবং বন্ধুদের কথা তো জানলাম। এবার আরও কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করে দেখি। এরপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই।
পরিস্থিতি ০১: আমি দেখলাম আমার বন্ধুরা বিরতির সময়ে খেলছে। আমার মনে হলো যে আমার সাথে খেলতে চায়নি বলে আমায় ডাকেনি ওরা।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং বন্ধুদের কী বলতাম?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
______________________________________________________________________________________________
স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিস্থিতি ০২: সারাদিন ক্লাস করে এবং স্কুলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশ নিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছি। গিয়ে দেখি বাসায় অনেক মেহমান। তারা যে আসবেন তা আমি আগে থেকে জানতাম না। সেই মুহূর্তে আমার একটু বিশ্রাম নেওয়ার অবস্থা নেই। এ সময় আমার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট দুজন শিশু এল এবং কাগজ দিয়ে কিছু খেলনা বানিয়ে দেবার বায়না ধরল।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং শিশুদের কী বলতাম?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পরিস্থিতি ০৩: অনেক দিন অপেক্ষা করার পরে আমার মা পছন্দের রঙ পেন্সিলের বক্স কিনে দিয়েছে। আমি বন্ধুদের দেখাতে ক্লাসে নিয়ে আসলাম। যেই কাছের বন্ধুদের দেখানোর জন্য এগুলো ব্যাগ থেকে বের করলাম, অমনি এক বন্ধু দুটি রঙ পেন্সিল হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নিল।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং বন্ধুকে কী বলতাম?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পরিস্থিতি ০৪: আমি আমার বন্ধুদের সাথে খেলছি। খেলায় খুবই টানটান উত্তেজনা অবস্থা। আরেকটু পরেই আমি জিতে যাব। এমন সময় আমার মা এসে খেলা বন্ধ করতে বলছেন। বলছেন এখুনি পড়তে বসতে। আমি যেতে না চাইলে বিরক্ত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং মাকে কী বলতাম?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পরিস্থিতি ০৫: আমি শ্রেণিকাজের অংশ হিসেবে সহপাঠীদের সাথে একটি নাটকে অংশগ্রহণ করেছি। নাটকে আমার অভিনয় নিয়ে শিক্ষক যে মতামত দিলেন, তার সাথে আমি একমত নই। আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হয়েছে বা শিক্ষক আমাকে অন্য কারও সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীকে কী বলতাম?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
এতক্ষণ ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করে আমরা বুঝতে পেরেছি যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের অনুভূতি ও আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা এটাও দেখলাম যে, অন্যের সাথে যোগাযোগের সময় তার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন, নিজেদের মনের অবস্থা, আমরা কী চাই ইত্যাদি সবকিছুই প্রভাব রাখে।
কখনো কখনো আমাদের চাওয়া, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করার ধরন অন্যদের সাথে মিলে যাবে। আবার অনেক সময় তা মিলবে না। তবে যেকোনো পরিস্থিতি হোক না কেন, খেয়াল রাখতে হবে কীভাবে নিজেকে প্ৰকাশ করলে তা আমার জন্য ভালো হবে; আবার অন্যের ক্ষতি হবে না।
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা কীভাবে প্রকাশ করব?
নিচের গল্পগুলো পড়ি। গল্পের মাঝে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে সেগুলো নিজে নিজে উত্তর দেই। এরপরে বন্ধুর সাথে আলোচনা করি।
গল্প ১: ব্যক্তিগত সীমানা
আমরা কী কখনো নিজে নিজে বাবল ফুলিয়েছি?
আমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছি যে বাবলগুলো অনেক স্বচ্ছ এবং সহজে দেখতে পাওয়া যায় না, দূর থেকে প্রায় অদৃশ্য ।
আমরা কী খেয়াল করেছি কত সহজে বাবল ফুলানো যায়?
যদি আগে কখনো বাবল না ফুলাই, তাহলে এসো সাবান পানি মাখিয়ে অনেক ফেনা তৈরি করি এবং দুই হাতের তালু একটু ফাঁকা করে ফুঁ দিয়ে বাবল বানাই।

এই বাবলের মতোই প্রতিটি মানুষকে ঘিরে একটি অদৃশ্য বাবল থাকে। সেটি হলো আমাদের ব্যক্তিগত সীমানার বাবল।

ঘুরতে যতটুকু জায়গা লাগল, সে জায়গাটুকুই হলো আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে
থাকা অদৃশ্য বাবল। আমার পাশের সহপাঠীকেও একইভাবে হাত ছড়িয়ে ঘুরতে বলি এবং দেখি তার ব্যক্তিগত
সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবলের জন্য কতটুকু জায়গা লাগে।
এই ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল আমাদের প্রত্যেকেরই থাকে।

আমার শরীরের চারপাশে ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবলে কে প্রবেশ করতে পারবে এবং কে পারবে না তা নির্ধারণ করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার। যখন কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যের ব্যক্তিগত সীমানায় ঢুকে পড়ে, তখন এ অদৃশ্য বাবল ফুটে যায়।
আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সীমানায় প্রবেশ করার অধিকার কারোরই নেই— হোক সে ছোট, সমবয়সী বা বয়সে বড়।
তাই, কেউ যেন আমার অদৃশ্য বাবল ফুটিয়ে না দেয় সেটি খেয়াল রাখব। একই সাথে আমিও যাতে অন্য কারও সাথে এ কাজ না করি, সে ব্যপারে সতর্ক থাকব।
তবে কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে এই ব্যক্তিগত সীমানায় প্রবেশ করতে দিতে ভয় বা দ্বিধা থাকে না। যাদের সাথে আমি নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করি, তারা এই ব্যক্তিগত সীমানায় চলে আসলেও বাবল ফুটে যায় না। এই নিরাপদ মানুষগুলো হতে পারে আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, শিক্ষক বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি।

অনেকেই বিভিন্ন স্পর্শ, আচরণ, বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আমাকে ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল ফুটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে; ব্যক্তিগত সীমানায় অযাচিতভাবে চলে আসতে পারে। আমি আমার ব্যক্তিগত সীমানায় এমন কাউকে আসতে দিব না যার সাথে নিজেকে নিরাপদ মনে করি না।
যার সাথে আমার অস্বস্তি লাগে বা খারাপ কিছু হওয়ার ভয় থাকে। এই অনিরাপদ মানুষগুলো হতে পারে আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি।



আমি কারও সাথে নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করছি কি না বোঝার অন্যতম উপায় হলো তারা আমাকে কীভাবে স্পর্শ করে। দুই ধরনের স্পর্শ রয়েছে: নিরাপদ স্পর্শ ও অনিরাপদ স্পর্শ।
স্পর্শে আমার অস্বস্তি হবে না। নিরাপদ স্পর্শ এমন হতে পারে আমার মা আমাকে জড়িয়ে ধরল, ক্লাসে ভালো করায় আমার শিক্ষক মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, বিশ্বস্ত বন্ধুর হাত ধরে ঘুরে বেড়ালাম। একেক জনের সাথে নিরাপদ স্পর্শ একেক ধরনের হয়। আমার মা কপালে চুমু দিলেও, আমি হয়তো আমার বন্ধুকে চুমু দিতে দিব না। তবে সে একই বন্ধুর সাথে হাত ধরে ঘুরতে হয়তো আমার অস্বস্তি লাগবে না।
আমার জন্য নিরাপদ স্পর্শ কোনগুলো হতে পারে তা নিচে লিখি। আমার বন্ধুর সাথে উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
অনিরাপদ স্পর্শ একদমই ঠিক না। কারো অধিকার নেই আমাকে অনিরাপদভাবে স্পর্শ করার। অনিরাপদ স্পর্শ আমার শরীর ও মনকে কষ্ট দেয় এবং আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবল ফুটিয়ে দেয়। অনিরাপদ স্পর্শ হলো যখন কেউ আমাকে আঘাত করে বা এমনভাবে স্পর্শ করে যার জন্য আমি অস্বস্তিবোধ করি। এ কাজ যে কেউই করার চেষ্টা করতে পারে, হোক সে আমার ছোট, সমবয়সী বা বয়সে বড়। মনে রাখব, আমাকে কেউ অনিরাপদভাবে স্পর্শ করলে সে দোষ কখনোই আমার না।
আমার জন্য অনিরাপদ স্পর্শ কোনগুলো হতে পারে তা নিচে লিখি। আমার বন্ধুর সাথে উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।

কিছু মানুষ থাকতে পারে যারা আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবলকে গুরুত্ব দিতে চাইবে না। যদি কেউ (সে আমার খুব কাছের এবং ভালোবাসার মানুষও হতে পারে) আমাকে আঘাত করে, বা অস্বস্তিকর ভাবে স্পর্শ করে, তাকে দৃঢ়ভাবে না বলার অধিকার আমার আছে।
আমি না বলার পরেও কেউ আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবল ফুটিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে আমি নিরাপদ বোধ করি ও বিশ্বাস করি এমন কাউকে এ বিষয়টি জানাব। যদি সে মানুষটি আমার কথা বিশ্বাস না করে বা গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আরেকজন বিশ্বস্ত মানুষকে খুঁজে বের করব যে আমাকে সাহায্য করতে পারবে।
যদি আমি অনিরাপদ বোধ করি বা যেকোনো বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নিতে পারি। নিচের নম্বরগুলোতে ফোন করলে আমি সাহায্য পাব :
১) শিশু সুরক্ষা বিষয়ক নম্বর: ১০৯৮
২) জরুরি সেবা নম্বর: ৯৯৯

গল্প ২: সহমর্মিতা
স্থান: নদীর পাড়।
চরিত্রঃ কিংশুক চাকমা, রাজিন রহমান ও সীমান্ত পাল।
কিংশুক চাকমা, রাজিন রহমান ও সীমান্ত পাল তিন বন্ধু। নদীতে গোসল করা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
কিংশুক: আমরা কিন্তু আজকে নদীতে নামবই সীমান্ত।
আমাদের কিন্তু আগেই এ নিয়ে কথা হয়েছে।
সীমান্ত: আমি কোনো পানিতে নামার মধ্যে নেই।
আমি সাঁতার পারি না ।
কিংশুক: নদীর পাড়ে এসেও পানিতে নামবে না !! হে
হে হে! তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।

সীমান্ত: না হলে নাই। আমি নামছি না ।

রাজিন: আরে কিছু হবে না সীমান্ত। তোমাকে তো সাঁতার কাটতে হবে না, শুধু কোমর পানিতে নামলেই হবে। কিংশুক: আসল কথা হচ্ছে ও একটা ভীতুর ডিম। ওর কলিজা হচ্ছে মুরগির সমান।


কিংশুক: তুমি না নামলে নাই, আমি আর রাজিন নামছি। সীমান্ত: আচ্ছা তোমরা নামো, আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। (মন খারাপ চেহারা নিয়ে)।
রাজিন: আজকে নদীতে না নামলে কিন্তু আমিও তোমাকে ভীতুর ডিম বলব সীমান্ত (রাজিন এ কথা বলার চিন্তা করছে কিন্তু বলতে গিয়ে থেমে গেল)।
রাজিনের মনে পড়ে গেল, ছোটবেলায় একবার দাদাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে বাগানে গেলে মৌমাছি কামড় দেয়। এরপর থেকেই বাগান দেখলেই তার ভয় লাগত এবং তার মামাতো ভাই এ নিয়ে তাকে ভীতুর ডিম বলে খেপাত।


গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
চরিত্র | নিজের অনুভূতি ও প্রয়োজন চিহ্নিত করতে পেরেছে | অন্যের অনুভূতি ও প্রয়োজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল | প্রয়োজনে দৃঢ়ভাবে না বলতে পেরেছে | দৃঢ়ভাবে নিজের অনুভূতি প্রয়োজন ও মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে |
---|---|---|---|---|
কিংশুক | ||||
সীমান্ত | ||||
রাজিন |
নিচের প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর তৈরি করি। বন্ধুর সাথে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
সীমান্ত নিজের অনুভূতি ও চাওয়া প্রকাশ করতে কিংশুক ও রাজিনের সাথে কীভাবে কথা বলতে পারত? | |
কিংশুক কীভাবে রাজিনের সাথে কথা বলতে পারত? | |
রাজিনের জায়গায় আমি থাকলে আর কী কী করতে পারতাম? |
গল্প ৩: নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করি
স্থান: বাজারের একটি দোকান
চরিত্র: জিনিয়া, রেহানা খাতুন (জিনিয়ার মা), খায়রুল হাসান (জিনিয়ার বাবা)
জিনিয়া তার বাবা-মায়ের সাথে বাজারের একটি দোকানে ঈদের জামা কিনতে এসেছে।
মা: আমাদের আজকে আরও অনেক কাজ আছে জিনিযা ।
তাই জলদি কেনাকাটা সারতে হবে।
জিনিয়া: আচ্ছা, মা ।
বাবা: জিনিয়া তুমি দেখো কী ধরনের জামা তোমার ভালো লাগে, এই দোকানে অল্প দামে বেশ ভালো ভালো জামাকাপড় আছে।


মা: ও সহজে কিছু পছন্দ করতে পারে না, অনেক সময় নষ্ট করবে। আমি দেখে দিচ্ছি।
(মায়ের এ কথা শুনে জিনিয়ার চেহারা মলিন হয়ে যায়)
মা: এই নীল জামাটা সুন্দর, জিনিয়া দেখ তো এটা গায়ে লাগবে কি না ।

জিনিয়া: আমার বন্ধু শিউলি বলেছিল কালো রঙে আমাকে অনেক সুন্দর লাগে।
জিনিয়া: কিন্তু মা বলে কালো রঙ ভালো না। আমি মা কে কিছু বলতে পারি না, ভয় লাগে।
জিনিয়া: না, থাক। মাকে আমি এ নিয়ে এখন রাগাতে চাই না। যেটা কিনতে বলবে সেটাই নেব।


বাবা: জিনিয়া এই জামা ঠিক আছে? তাড়াতাড়ি বলো আমাদের অনেক কেনাকাটা আছে।
জিনিয়া: কি ! (সংবিত ফিরে পেয়ে)। ঠিক আছে সমস্যা নেই ।
মা: পছন্দ হয় নাই? আমি জানি তোমাকে কী সুন্দর লাগবে এই জামায় ।

গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ বা না লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
চরিত্র | নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতি চিহ্নিত করতে পেরেছে | অন্যের প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল | প্রয়োজনে দৃঢ়ভাবে না বলতে পেরেছে | দৃঢ়ভাবে নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে |
---|---|---|---|---|
জিনিয়া | ||||
রেহানা |
নিচের প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর তৈরি করি। আমার বন্ধুর সাথে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
জিনিয়ার জায়গায় আমি থাকলে আর কী কী উপায়ে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাতাম? | |
আমার পছন্দ-অপছন্দ আমার পরিবারের মানুষকে কীভাবে বোঝাব? |
গল্প ৪: আত্মমর্যাদা রক্ষায় পদক্ষেপ নিই
স্থান: স্কুলের মাঠ
চরিত্র: সামারাহ, মাহিন, শর্মীষ্ঠা, সুজন
চার সহপাঠী স্কুল মাঠের এক কোণায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে। (সবার গায়ে স্কুল ড্রেস)

শর্মীষ্ঠা: কী সুজন, আমাদের বন্ধুদের অনেকের সাইকেল আছে, তোমার নাই কেন?
সুজন : আমি বাবাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা জানিয়েছি, পরে কিনে দিবে বলছে।
শর্মীষ্ঠা: তোমার সাইকেল কেনা হতে হতে আমরা কলেজে উঠে যাব। (শর্মীষ্ঠার কথা শুনে মানহা হেসে দিল)।
মাহিন: তোমার বাবাকে আবার বলো। বারবার বললে হয়তো কিনে দেবেন। শর্মীষ্ঠা: ও আর বলবে! কিছু বলার সাহস আছে, থাকলে এতদিনে দুইটা সাইকেল হয়ে যেত।
মাহিন: হে হে হে! আহারে বেচারা।
সুজন: আমি বাবাকে বলেছি। বাবা আমাকে বুঝিয়ে বলেছে কেন এখনই সাইকেল কিনে দিতে পারবে না। আমি তার কথা বিশ্বাস করেছি। তাই এ ব্যাপারে আমি চাপ দিতে চাই না।


(এরপর সুজন ও শর্মিষ্ঠাও ক্লাসে চলে গেল। সামারাহ আর মানহা এখনো মাঠে রইল)
সামারাহ: মানহা, শর্মিষ্ঠা যখন সুজনকে সাইকেল নিয়ে খোঁটা দিচ্ছিল, তখন সুজনের কেমন লাগতে পারে বলোতো? মাহিন: কেমন লাগবে আবার!
সামারাহ: ওর কষ্ট লেগেছে। দেখলে না কেমন করে চুপচাপ চলে গেল।
মাহিন: আমি তো খারাপ কিছু বলিনি।, শর্মীষ্ঠা খোঁটা দিল। আমি তো শুধু বুদ্ধি দিয়েছি কীভাবে সাইকেল পেতে পারে।
সামারাহ: শর্মীষ্ঠা যখন সুজনকে খেপাচ্ছিল তখন ওকে আমার থামানো দরকার ছিল, চুপ থাকা ঠিক হয় নাই। আমি কিছু বললাম না কেন সেটা ভেবে খারাপ লাগছে।
মাহিন: কেন? তুমি কেন থামাবে?
সামারাহ: যখন কেউ অন্যকে খেপায় বা ছোট করে, তখন আশপাশের মানুষের হাসা বা চুপ থাকা ঠিক নয়। এতে একই কাজ করার জন্য মানুষটি উৎসাহ পেয়ে যায়। আর
যাকে খেপানো হয় সে আরও বেশি কষ্ট পায়, অসহায়বোধ করে।
মাহিন: আচ্ছা, এরপর থেকে আর হাসব না। কিন্তু আমরা আর কি-ই বা করতে পারি! সামারাহ: আমরা শর্মীষ্ঠাকে বলতে পারতাম সাইকেল কেনাটা ব্যক্তিগত বিষয়। এভাবে ওকে কিছু কেনার জন্য চাপ দেওয়া আমাদের উচিত না। এতে সুজন অস্বস্তি বোধ করতে পারে।

গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
চরিত্র | নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতি চিহ্নিত করতে পেরেছে | অন্যের প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছি | প্রয়োজনে দৃঢ়ভাবে না বলতে পেরেছে | দৃঢ়ভাবে নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে |
---|---|---|---|---|
শর্মীষ্ঠা | ||||
সুজন | ||||
মাহিন | ||||
সামারাহ |
নিচের প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর তৈরি করি। বন্ধুর সাথে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
সামারাহ শর্মিষ্ঠাকে কী বলতে পারত? | |
আমাকে কেউ কোনো বিষয়ে জোরাজুরি করলে আমি কী করব? | |
কাউকে উত্ত্যক্ত হতে দেখলে আমি কী করব? | |
আমাকে কেউ উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমি কী করব? |
গল্প ৫: সম্পর্কের যত্নে কথা বলি
স্থান: বাসা
চরিত্র: আমিন, রাবেয়া (আমিনের মা), রহমান (আমিনের বাবা)

আমিন: আমি একটু আমার মতো করে গল্পের বই পড়তে চাচ্ছিলাম, বাবা। আমিন: বাবা, আমি ছোট হলেও নিজের মতো করে একটু সময় কাটাতে এখন পছন্দ করি। এরকম হুট করে আমার পিছনে এসে উঁকি দিলে আমার অস্বস্তি লাগে।
আমিন: আমি জানি বাবা, তোমরা আমার ভালো চাও। কিন্তু এমনটা করলে আমার একটু অস্বস্তি বোধ হয় এবং মনে হয় যে তোমরা আমার একা থাকা পছন্দ করো না। তাই, আমি একা থাকার সময় তুমি যদি আমাকে আগে ডাকো বা আমাকে জিজ্ঞেস করে কাছে আসো, তাহলে আমার ভালো লাগবে।

(কিছুক্ষণ পরে…….)
প্রেক্ষাপট: (রহমান চুলায় তরকারি নাড়ছে এবং রাবেয়া পেঁয়াজ কাটছে।)
রহমান: তা আসলে ঠিক বলেছ। কিন্তু ও একা থাকলে আমার মনে হয ওর কি শরীর অসুস্থ, মন খারাপ বা বন্ধু বা অন্য কারও সাথে

রাবেয়া: আমার মনে হয় আমাদের এখন থেকে আমিনের ব্যক্তিগত সীমানা নিয়ে ভাবতে হবে। ও এখন বড় হচ্ছে। ওকে নিজের মতো করে সময় কাটাতে দিতে হবে।
রাবেয়া: তা ঠিক,
আমাদেরকেও ওর সাথে ধৈর্য ধরে শান্তভাবে কথা
বলতে হবে। তবে আমরাও যেন ওর ব্যক্তিগত সীমানায় অযাচিতভাবে চলে না যাই।
রহমান: এটা ভালো বলেছ । তাহলেই আমিন ওর মনের কথা নির্দ্বিধায় আমাদেরকে বলতে পারবে। তখন ওর সমস্যার কথা আমাদেরকে জানাতেও আর সংকোচ করবে না।
রহমান: ঠিক আছে। এরপর থেকে তাই করব।
গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
চরিত্র | নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতি চিহ্নিত করতে পেরেছে | অন্যের প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল | দৃঢ়ভাবে নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত প্ৰকাশ করতে পেরেছে |
---|---|---|---|
আমিন | |||
রাবেয়া | |||
রহমান |
নিচের প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর তৈরি করি। বন্ধুর সাথে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
আমিনের কি নিজের মতো সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত? কেন? বা কেন নয়? | |
আমিনের কোন পদক্ষেপগুলো তার ব্যক্তিগত সীমানা ধরে রাখতে সাহায্য করেছে? | |
আমিনের মতো পরিস্থিতিতে পড়লে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের কী বলব? |
ওপরের গল্পগুলোতে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের কৌশল
শ্রেণিতে শিক্ষক আমাদের দলে ভাগ করে দিয়ে ওপরের গল্পগুলোতে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের বিভিন্ন কৌশল উল্লেখ করতে বলেছিলেন। এবার সেই কাজটি আমরা নিজে অপর পৃষ্ঠার ছকে করি। কোন কৌশলটি কার্যকর আর কোনটি অকার্যকর মনে হয়েছে, তা উল্লেখ করি।
গল্প | অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের কৌশল | কার্যকর/ অকার্যকর |
---|---|---|
গল্প ২: সহমর্মিতা | ১. ২. ৩. | |
গল্প ৩: নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করি | ১. ২. ৩. | |
গল্প ৪: আত্মমর্যাদা রক্ষায় পদক্ষেপ নিই | ১. ২. ৩. | |
গল্প ৫: সম্পর্কের যত্নে কথা বলি | ১. ২. ৩. |
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখব
১। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি। আমি যখন অন্যদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলব, তখন আমাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। মনে হবে যে আমি ভয় পাচ্ছি না, বা নিজেকে ছোট করেও দেখি না। ____________________________________________________________________________________________________ ২। নিজেকে শান্ত রাখি। নিজেকে শান্ত রাখতে লম্বা দম নেই। ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার মতো করে দম নেই এবং মোমবাতি ফুঁ দেওয়ার মতো করে দম ছাড়ি। প্রথম প্রথম কাজটি করতে অস্বস্তি লাগলেও, নিয়মিত চর্চা করলে এই কৌশল আমাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। ____________________________________________________________________________________________________ ৩। দৃঢ়ভাবে কথা বলি। যা বলতে চাই খুব স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলব, খুব আস্তে বা অনেক উঁচু স্বরেও না। আমি যদি খুব আস্তে কথা বলি সহজে কেউ আমাকে শুনবে না এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করবে না। আবার আমি যদি অনেক উঁচু স্বরে কথা বলি তাহলে মনে হতে পারে আমি চিৎকার করছি বা অনেক রেগে কথা বলছি। |
৪। গলার স্বর ও অঙ্গভঙ্গির সাথে মিল রেখে অনুভূতি প্রকাশ করি।
কেউ যদি মুখে হাসি হাসি নিয়ে বলে তার মন খারাপ, তাহলে কি আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাব না? এজন্যই আমি যা বোঝাতে চাই তাই যেন বোঝাতে পারি তা নিশ্চিত করার জন্য আমার অনুভূতির সাথে গলার স্বর ও অঙ্গভঙ্গির মিল থাকা জরুরি।

৫। আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে এমন অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আমি যদি এমনভাবে দাঁড়াই যে, আমাকে দেখলে মনে হয় আমি জড়োসড়ো হয়ে আছি বা ভয় পাচ্ছি, তখন সহজে কেউ আমার কথা গুরুত্ব দিতে চাইবে না। কথা বলার সময় যা খেয়াল রাখব : ■ সোজা হয়ে দাঁড়াব বা বসব ■ চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলব ■ অঙ্গভঙ্গি শান্ত রাখব ■ শরীর জড়োসড়ো বা শক্ত করে রাখব না ■ হাত মুষ্টিবদ্ধ বা দুই হাত বুকে ভাঁজ করে রাখব না ■ মাথা ঝুঁকে আছে এমনভাবে থাকব না ৬। অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তার অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি। যখন অপর পাশের মানুষটি কথা বলছে তখন তাকে কথা শেষ করতে দেব। তার কথার মাঝেই কথা বলব না। ওই মানুষটি কী চায় বা অনুভব করে তা বোঝার চেষ্টা করব। সে বিষয়ে নিজের মতো শ্রদ্ধার সাথে প্রকাশ করব। তাকে নিয়ে দোষারোপ বা হাসাহাসি করব না। |
৭। ‘আমি/আমার’ শব্দ ব্যবহার করি।
অন্যের সাথে কথা বলার সময় ‘আমি/
আমার’ শব্দ ব্যবহার করে নিজের চাওয়া, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করি। মনের কথা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ না পেলে অন্যের সাথে দূরত্ব বা মনোমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে। যখন আমি বা আমার শব্দ ব্যবহার করে নিজের মনের কথা প্রকাশ করি, তখন আমার কথাটির গুরুত্ব জোরালো হয়।

৮। প্রয়োজনে ‘না’ বলি।
কোনো কিছুতে অস্বস্তি লাগলে বা আমার ব্যক্তিগত সীমানা রক্ষা করতে আমি না বলতে পারি। মনে রাখব, আমি যেমন অন্যকে না বলতে পারি,
ঠিক তেমনি অন্য কেউ আমাকে না
বললে তা আমার শুনতে হবে।

মনে রাখব আমি নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করব অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে, অন্যের প্রয়োজন,অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে। তবে অনেকে আমার নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা নিয়ে কষ্ট বা রাগ অনুভব করতে পারে।
আমি যদি অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করি এবং অন্যের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি, তাহলে তার কষ্ট বা রাগ অনুভূতির দায়/দোষ আমার না। এ নিয়ে আমার মন খারাপ হতে পারে; কিন্তু ওই মানুষটির অনুভূতির দায়িত্ব তার নিজের।
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা: আমার পরিকল্পনা
আমার দৈনন্দিন জীবনে কোন কোন পরিস্থিতিতে আরও দৃঢ়ভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করার সুযোগ আছে? নিচের ছকে এমন ৩টি পরিস্থিতির একটি তালিকা করি। যাদের সাথে মনের কথা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে হবে সে মানুষদের শনাক্ত করি। তারা হতে পারেন আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, যেকোনো আত্মীয়, বন্ধু, শিক্ষক, ওপরের বা নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী; আমার এলাকার পরিচিত কোনো ব্যক্তি বা অন্য যে কেউ।
তালিকা: দৈনন্দিন জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা | |
কোন ব্যক্তির সাথে | কোন পরিস্থিতিতে |
এবার তালিকা অনুযায়ী ৩টি পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদের সাথে কথা বলব তার পরিকল্পনা করি এবং নিচের ছক ব্যবহার করে লিখি। পরিকল্পনার সুবিধার্থে ০৫ নং গল্প অবলম্বনে প্রথম ছকটি করে দেওয়া হলো।
নমুনা পরিকল্পনা ছক: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা (গল্প ০৫ অবলম্বনে নমুনা উত্তর) |
কার সাথে যোগাযোগ: বাবা, মা |
ঘটনা: (যা ঘটেছে) | বাবা যখন হুট করে আমার ঘরের দরজা খুলে ঢুকে পড়ে |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | আমি অনেক বিব্রত বোধ করি |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | কারণ আমার মনে হয় যে আমার যে মাঝে মাঝে একা থাকা প্রয়োজন, এটা বাবা পছন্দ করছে না বা বুঝতে পারছে না |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | আমার জন্য ভালো হয় যদি বাবা ঘরে ঢোকার আগে দরজায় টোকা দেয়। |
পরিকল্পনা ছক ০১: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা |
কার সাথে যোগাযোগ: |
ঘটনা: (যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) |
পরিকল্পনা ছক ০২: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা |
কার সাথে যোগাযোগ: |
ঘটনা: (যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
পরিকল্পনা ছক ০৩: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা |
কার সাথে যোগাযোগ: |
ঘটনা: (যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করি
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা কীভাবে প্রকাশ করতে হয় তার ওপর আমরা শ্রেণিতে ভূমিকাভিনয় করব। আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে যেকোনো একটি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি। ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে দৃঢ়ভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করতে পারব সে পরিকল্পনা করি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেরা মিলে ভূমিকাভিনয় করি। ভূমিকাভিনয়ের সময় অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের জন্য যে বিষয়গুলো মনে রাখতে বলা হয়েছে সেগুলোও বিবেচনায় রাখব ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার নিজের জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা করি
কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা করব তা নিয়ে কয়েকটি পরিকল্পনা করেছি। এখন ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চার একটি রেকর্ড রাখি।
সামনের এক মাস বিশ্বস্ত সম্পর্ক উন্নয়নের চর্চাসংক্রান্ত ঘটনাগুলোর বিবরণ ডায়েরি বা জার্নালে লিখে রাখি। অপর পৃষ্ঠার ছকের মতো করে অথবা আমার যেভাবে পছন্দ সেভাবে ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করে এক মাস পর শিক্ষকের কাছে জমা দিই।
দৈনন্দিন জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চার রেকর্ড |
তারিখ | কোন ব্যক্তির সাথে | কোন পরিস্থিতিতে | চর্চা করতে পেরেছি? (হ্যাঁ/না) | চর্চা করে আমার কেমন লেগেছে? |
---|---|---|---|---|
সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করে সফলভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা বলার উপায়গুলো বের করে আনার জন্য অভিনন্দন।
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকগুলো শিক্ষক পূরণ করবেন। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। উৎসাহ দেবেন। কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। শিখন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলোর মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে স্টার (তারকা চিহ্ন) দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।
খুব ভালো = ★, ভালো = ★★, আরও ভালো করার সুযোগ আছে = ★
সেশন | ||||
সেশনে আমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ | অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাশীল আচরণ | আমার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে করা কাজগুলোর মান | ||
সেশন ১-২ | রেটিং | |||
শিক্ষকের মন্তব্য ও পরামর্শ | ||||
সেশন ৩-৬ | রেটিং | |||
শিক্ষকের মন্তব্য ও পরামর্শ | ||||
সেশন ৭-৯ | রেটিং | |||
শিক্ষকের মন্তব্য ও পরামর্শ | ||||
সেশন ১০-১৭ | রেটিং | |||
শিক্ষকের মন্তব্য ও পরামর্শ |
ছক ২: আমার দলের ভূমিকাভিনয়
খুব ভালো = ***, ভালো = ★★, আরও ভালো করার সুযোগ আছে = ★
ভূমিকাভিনয় দল | |||
ভূমিকাভিনয় পরিকল্পনার কাজগুলোতে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ | বিমূর্ত ধারণায়ন ধাপে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ব্যক্তিগত পরিকল্পনার সাথে ভূমিকাভিনয় পরিকল্পনার সামঞ্জস্য | ভূমিকাভিনয়ে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের কৌশল, ৪টি ধাপসহ ছক ও মনে রাখার ৮টি বিষয়সংক্রান্ত ধারণাগুলোর সঠিক প্ৰতিফলন | |
রেটিং | |||
শিক্ষকের মন্তব্য |
ছক ৩: আমার অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা
খুব ভালো = ★★ ভালো = ★ ★, আরও ভালো করার সুযোগ আছে = ★
আমার করা পরিকল্পনাগুলোর মান | পরিকল্পনা অনুযায়ী করা চর্চা বা কাজগুলো জার্নালে লেখা | চর্চা বা কাজগুলোতে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের সঠিক ধারণাগুলোর প্ৰতিফলন | |
রেটিং | |||
বর্ণনামূলক ফিডব্যাক |
- আরো পড়ুন : চলো নিজেকে আবিষ্কার করি